বাংলা হান্ট ডেস্ক : যাদবপুরের (Jadavpur University) বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপের (Swapnodip Kundu) মৃত্যুতে তোলপাড় রাজ্য। বুধবার গভীর রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচ থেকে নগ্ন ও অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় বাংলা বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুকে। তারপরেই যাদবপুরের প্রাক্তনি সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এবং সেই সূত্র ধরে গ্রেফতার আরও দুই।
স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর থেকেই জোরালো হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র্যাগিং তত্ত্ব। এই রহস্যমৃত্যুর পেছনে র্যাগিং-কেই দায়ি করছে আম জনতার একটা বড় অংশ। দিকে দিকে প্রতিবাদের ঢল নেমেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সোচ্চার হয়েছে মানুষ। পাশাপাশি বহু ছাত্রছাত্রী তাদের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা মেলে ধরছে জনসাধারণের সামনে। তারপর থেকেই যাদবপুরের শিক্ষাব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে আম জনতা।
এদিকে সৌরভের গ্রেফতারিতেও উঠছে নানা প্রশ্ন। তার বাবা মা ছেলেকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও সেটা মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। একজন প্রাক্তনি হোস্টেলে কী করছিল? সেদিন স্বপ্নদীপ ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার পরও কীসের বৈঠক চলছিল হোস্টেলে? র্যাগিং তথা ইন্ট্রো নামক এই নোংরামির প্রয়োজনটাই বা কী? তাহলে অ্যান্টি র্যাগিং-র ভূমিকাই বা কী এখানে? এরকম হাজার একটা প্রশ্ন আসছে সাধারণ মানুষের তরফ থেকে।
আরও পড়ুন : খরচ নয়, হবে উপার্জন! বিয়ে করলেই মিলবে লক্ষ লক্ষ টাকা, করতে হবে শুধু ছোট্ট এই কাজ
উল্লেখ্য, এইদিন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুর অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করেই উঠে এসেছে আরও দুই নাম। রবিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক্স দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত ও সোশিওলজি দ্বিতীয় বর্ষের পডুয়া মনতোষ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। অর্থাৎ প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন।
আরও পড়ুন : AI কাড়তে পারবে না চাকরি! কর্মচারীদের স্বার্থে বড় সিদ্ধান্ত নিল মহিন্দ্রা, প্রশংসা দেশজুড়ে
একদিকে ধৃত মনতোষ হুগলির আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে ধৃত দীপশেখর বাঁকুড়ার বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এইদিন রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি মেলায় রবিবার সকালে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আপাতত তাদের লালবাজার সেন্ট্রাল লকআপে রাখা হয়েছে বলেই খবর। ঘটনার পিছনে আর কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন : মমতা সরকারের মুকুটে নয়া পালক, নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল কন্যাশ্রী প্রকল্প! প্রশংসা বিশ্বজুড়ে
স্বপ্নদীপের ম্যত্যু প্রসঙ্গে পিতা রামপ্রসাদ বলেন, ‘‘ছেলের মৃত্যুর জন্য হস্টেলের সিনিয়রেরাই দায়ী। ওরা (সিনিয়ররা) হয়তো ভেবেছে, এই ছেলে (স্বপ্নদীপ) এখান থেকে চলে গেলে সব ফাঁস হয়ে যাবে। ওই জন্য ওকে মেরে ফেলল!’’ অসহায় পিতার আক্ষেপ, ‘‘আমার ছেলেকে খুব মার মেরেছে ওরা। একেবারে মেরেই ফেলল! সারা গায়ে কালশিটে দাগ!” উল্লেখ্য, এইদিন দূর্ঘটনার আগে একবার বাড়িতে ফোন-ও করেছিল স্বপ্নদীপ। ভয়ার্ত গলায় জানিয়েছিল, সে ভালো নেই। বাবা মা যেন হোস্টেলে এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। মা-কে অনেক কিছু জানানোর আছে তার। তবে একবার ফোন কেটে গেলে আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এরপরই ঘন্টাখানেক পর খবর আসে, স্বপ্নদীপকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মা-কে যা বলার ছিল তা আর বলা হয়ে ওঠেনি।