বাংলাহান্ট ডেস্ক : প্রত্যন্ত গ্রাম ঝাড়বাগদা তৈরি করল এক নতুন ইতিহাস। গ্রামবাসীদের ঐকান্তিক চেষ্টায় রুক্ষ টিলা এখন ঢাকা সবুজ গালিচায়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিক পর্যন্ত ঝাড়বাগদা ছিল রুক্ষ ও অনুর্বর। একটা ঘাস পর্যন্ত গজাত না তিন ন্যাড়া টিলায়। শুধুমাত্র একটি তালগাছ কোনও মতে টিলার উপর দাঁড়িয়েছিল।
গরমকালে ৪৭-৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যেত তাপমাত্রা। রোদের প্রচণ্ড তাপে শুকিয়ে যেত পুকুর-হ্রদ। জলস্তর নেমে বিকল হয়ে যেত টিউবওয়েল। পর্যাপ্ত জলের অভাবে ঠিকমতো হতো না চাষ। গ্রামের মহিলারা কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পাড়ি দিতেন পানীয় জলের সন্ধানে। আবার বর্ষার সময় পাথুরে টিলা বেয়ে জলের স্রোত নেমে জমির উর্বরতা ভাসিয়ে দিত।
আরোও পড়ুন : বার্থ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত নিয়মে এবার বড়সড় বদল! ভোগান্তি এড়াতে মাথায় রাখুন কয়েকটি বিষয়
বছরের পর বছর ধরে সবুজ ধ্বংসের খেসারত এভাবেই দিয়ে এসেছেন ঝাড়বাগদার বাসিন্দারা।গ্রামের এই পরিস্থিতি বদল করার লক্ষ্যে গ্রামবাসীরা সংকল্প নেন ১৯৯৮ সালে। টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট নামে এক এনজিও-র শরণাপন্ন হন গ্রামবাসীরা গ্রামের রুক্ষ রূপ বদলের জন্য।
আরোও পড়ুন : ট্রেনযাত্রীদের জন্য এবার বিরাট সুখবর! গরম পড়তেই স্টেশনে স্টেশনে এলাহি ব্যবস্থা রেলের
ঝাড়বাগদা সবুজায়ন প্রকল্পের প্রধান নন্দলাল বকশি বলেছেন, ‘আমাদের গোড়াথেকে শুরুকরতে হয়েছিল, কারণ ওই অঞ্চল পুরোপুরি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছিল। সবুজ ফিরিয়ে আনার জন্য পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি হল। সেই সঙ্গে জলের ধারায় ক্ষয় রোধ করা, ভূগর্ভের জলস্তরের উন্নতিসাধন এবং গাছ বাঁচাতে জলস্তরের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য সবিস্তারে পরিকল্পনা তৈরি করা হল। প্রকল্পের কাজে আমাদের সঙ্গে গ্রামবাসীরা ঝাঁপিয়ে পডলেন। ১৯৯ সাল থেকে শুরু হল কাজ।’
তিন টিলা জুড়ে ৩০০ একর জমিতে পরের পাঁচ-ছ বছরে বসানো হয় ৭৫ প্রজাতির তিন লাখের বেশি গাছের চারা। গাছের চারাগুলিকে গবাদি পশুর হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত পাহারা দিতে থাকেন গ্রামের ৪০০-৪২৫টি বাড়ির বাসিন্দারা। অসমান জমির ফলে পুরুলিয়ায় বৃষ্টির জল কোথাও দাঁড়াতে পারে না। ফলে দূর হয়না জমির রুক্ষতা।
কিন্তু এই বনসৃজনের ফলে প্রচুর পরিমাণ গাছ বৃদ্ধি পাওয়ায় টিলা থেকে আশেপাশের অনুর্বর জমিতে বেড়েছে সবুজের সমারহ। নন্দলাল বকশির কথায়, ‘টিলা বেয়ে বৃষ্টির জল বয়ে যাওয়া আটকাতে আমরা সব পাহাড়ি নালার মুখ বন্ধ করে দিই। টিলার মাথায় গভীর গর্ত খুঁড়ে জল সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা হয়। গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে জমির চরিত্র বুঝে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় কাঠ, জ্বালানি, পশুখাদ্য ও ফলদায়ী প্রজাতিকে।’