জাগুয়ারের পরে এবার এই কোম্পানি হাতে চলে এল টাটার! ৭২৫ কোটিতে সম্পন্ন হল চুক্তি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছিল জল্পনা! এমতাবস্থায়, সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় অটোমোবাইল সেক্টরের জায়ান্ট সংস্থা টাটা মোটরস (Tata Motors) এবার আমেরিকান কোম্পানি Ford Motors-এর প্ল্যান্ট কিনে নিল। জানা গিয়েছে, টাটা মোটরস গুজরাটে ফোর্ড ইন্ডিয়ার সানন্দ কার ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টটি কিনেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই প্রসঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়। এই চুক্তির পর, এখন ফোর্ড ইন্ডিয়ার প্ল্যান্টে টাটা মোটরসের বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা হবে বলে খবর মিলেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, টাটা মোটরসের অধীনস্থ সংস্থা Tata Passenger Electric Mobility Limited (TPEML) মোট ৭২৫.৭ কোটি টাকার বিনিময়ে ওই ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টটি কিনেছে। দুই কোম্পানির মধ্যে সম্পন্ন হওয়া চুক্তি অনুসারে, ওইখানে স্থিত ফোর্ড ইউনিটের সম্পূর্ণ জমি এবং ভবনের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম এখন টাটার মালিকানাধীন। পাশাপাশি, এটাও বলা হচ্ছে যে, টাটা মোটরস সানন্দ প্ল্যান্টে কর্মরত ফোর্ড ইন্ডিয়ার সমস্ত যোগ্য কর্মচারীদেরও স্থানান্তর করবে। এমতাবস্থায়, সানন্দে এটি হবে টাটার দ্বিতীয় প্ল্যান্ট।

এই প্রসঙ্গে Tata Motors Passenger Vehicles Ltd. এবং Tata Electric Mobility Ltd. এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর শৈলেশ চন্দ্র বলেন, “এই চুক্তিটি সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের উপকৃত করবে এবং টাটা মোটরসের বাজারের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। কোম্পানিটি বৈদ্যুতিক যানবাহন সেগমেন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার আধিপত্য বজায় রাখবে। ভেহিক্যাল ইউনিট এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন ইউনিটগুলিতে উৎপাদন অব্যাহত রেখে বাজারের পরিস্থিতিতে দখল আরও শক্তিশালী করতে হবে। আত্মনির্ভর ভারতের ভবিষ্যত গড়ার দিকে এটি একটি প্রগতিশীল পদক্ষেপ এবং দেশের অটো শিল্পের বৃদ্ধিকেও এটি ত্বরান্বিত করবে।”

এমতাবস্থায়, টাটা মোটরস দাবি করেছে যে, এখান থেকে প্রতি বছর ৩ লক্ষ বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুত করা হবে। পরবর্তীকালে যা বাড়িয়ে ৪ লক্ষ ২০ হাজার করা হতে পারে। জানিয়ে রাখি যে, ফোর্ড হল আমেরিকার একটি জনপ্রিয় গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থা। তবে ভারতে ফোর্ড কোম্পানি তেমনভাবে সফল হতে পারেনি। এমনকি, একটা সময়ে ব্যবসায় ক্রমাগত লোকসানের কারণে এই কোম্পানি ভারত ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ফোর্ড যখন ভারত ছেড়েছিল, তখন ভারতীয় গাড়ির বাজারে তার ২ শতাংশেরও কম শেয়ার ছিল। শুধু তাই নয়, প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে, কোম্পানিটি ভারতীয় বাজারে মুনাফা অর্জনের জন্য লড়াই করছিল।

জানিয়ে রাখি, ফোর্ড কোম্পানির সঙ্গে এটি টাটা মোটরসের দ্বিতীয় বড় চুক্তি। এর আগে ২০০৮ সালে, টাটা ওই সংস্থার জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কিনে কোম্পানিটির ভাগ্য পরিবর্তন করেছিল। মূলত, টাটা যখন জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কিনেছিল, তখন ফোর্ডের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় ছিল। এমতাবস্থায়, টাটা গ্রূপ তাদের কাছে কার্যত “মসীহা” হিসেবে অবতীর্ণ হয়। যদিও, এই কোম্পানিরই চেয়ারম্যান বিল ফোর্ড একটা সময়ে রতন টাটাকে অপমান করেছিলেন।

Ratan tata,Ford,Tata Motors,Electric Vehicle,India,National,Tata Passenger Electric Mobility Limited,sanand,Gujrat,Money,Indian Rupees,Crore,Production Plant,jaguar land rover,Tata Group,Indian Rupee

মূলত, টাটা ইন্ডিকা ব্যর্থ হওয়ার পর রতন টাটা সেই গাড়ি বিভাগটি ফোর্ডের কাছে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। আর তখনই ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান বিল ফোর্ড টাটাকে অপমান করে বলেন তাঁর (রতন টাটা) কখনোই গাড়ি ব্যবসা শুরু করা উচিত হয়নি। কারণ, এই ব্যবসা সম্পর্কে তাঁর প্রকৃত জ্ঞান নাকি নেই। এদিকে, এই অপমানের পরে, রতন টাটা ফোর্ডের সাথে কোনো চুক্তি করেননি। কিন্তু যখন টাটা গ্রুপ জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কিনেছিল, তখন ফোর্ডের একটি দল মুম্বাই আসে এবং কোম্পানির চেয়ারম্যান বিল ফোর্ড রতন টাটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন যে, “আপনি আমাদের বড় উপকার করলেন।” আর এভাবেই অপমানের যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন টাটা। শুধু তাই নয়, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কিনে নেওয়ার পর এবার ফোর্ডের গোটা প্ল্যান্টই চলে এল টাটার হাতের মুঠোয়।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর