সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর করেন কৃষিকাজ, নিজের গ্রামকে বানিয়েছেন সবথেকে বড়ো গাজর উৎপাদক এলাকা

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ সেনাবাহিনীতে (Indian army) দীর্ঘ ২১ বছর কাজ করার পর, আবারও দেশের সেবায় নিজেকে উতসর্গ করলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সুভাষ দেশওয়াল। রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু লাল কিশান যাদবকে সঙ্গে নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়লেন জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে।

   

শুরু করলেন কৃষিকাজ
কৃষিকাজের প্রতি টান অনুভব করায় সেনার কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর দিল্লী থেকে সোজা চলে আসেন সেকান্দারবাদে। সেখানেই বন্ধু লাল কিশান যাদবের সাহায্যেই প্রথম দিকে মাত্র ২ একর জমি নিয়ে সেখানেই আলু, লেডিফিংগার এবং পেঁয়াজের চাষ শুরু করেছিলেন।

প্রথম দিকে কাচা হাত থাকায় লাভের মুখ না দেখলেও, হাল ছাড়েননি তিনি। কর্নেল সাহেব জানিয়েছেন, ‘আমি অনেক জায়গায় ঘুরে ঘুরে কৃষি বিজ্ঞানীদের সাথে পরামর্শ করেছি। আমি অবসর প্রাপ্ত সৈনিক হয়েও, কৃষিকাজে আগ্রহ থাকায় অবাক হয়ে যেতেন বিজ্ঞানীরা। প্রথম অবস্থায় আমরা ভাবতাম, কৃষিকাজ বিষয়ে আমরা সমস্তটাই জানি। কিন্তু বিজ্ঞানিদের সাথে আলাপ হওয়ার পর আমাদের ভুল ধারণা ভাঙ্গতে শুরু করল। অনেক বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি’।

শুরু করলেন গাজর চাষ
এই ভাবে এগোতে এগোতে তারা কৃষিকাজ বিষয়ে আসতে আসতে ধারণা নিতে শুরু করে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে একদিন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন গাজর চাষ করবার। কর্নেল সুভাষ দেশওয়াল জানালেন, ‘গাজর একটি উচ্চ মানের সবজি এবং এটি সাধারণত ইউরোপে চাষ করা হয়। তবে আমাদের বুলান্দশহরেও বেলে মাটি, যা গাজর চাষের পক্ষে খুবই উপযোগী। এই গাজর চাষের ফলে আমাদের আয়ও বৃদ্ধি পেতে শুরু করল’।

তৈরি করলেন উন্নমানের যন্ত্রও
যেমন ভাবা তেমনই কাজ। এরপর তারা দুই বন্ধু মিলে ঠিক করে উন্নতমানের এবং আরও বেশি পরিমাণে গাজর ফলনের জন্য ইউরোপ থেকে যন্ত্রপাতি আনবে। যে মেশিনটি ইটালি থেকে আনতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচা হত, তা ভারতেই মাত্র ৫০০০০ টাকার বিনিময়ে তারা বানিয়ে নেন। ধীরে ধীরে তাঁদের সঙ্গে অনেক কৃষকও যুক্ত হয়ে পরে।

বানিয়ে নিলেন ব্যক্তিগত কোল্ড স্টোরেজও
গাজর তো উতপাদন হল, কিন্তু জমি থেকে গাজর তুললেও অনেক ঝোক্কি পোয়াতে হয়েছে তাঁদের। ছোট জায়গায় বড় মেশিন না ঢোকার ফলে, অন্য মেশিন বানিয়ে তাঁর সাহায্যে গাজর তোলার কাজ করেন তারা। এরপর উৎপাদিত গাজর রাখার জন্য যত্ন সহকারে রাখার জন্য প্রায় ৫ একর জমির উপর একটি ব্যক্তিগত কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করেন তারা।
বর্তমানে ২০০০০ মেট্রিক টন গাজর উৎপন্ন হয়। যার অর্ধেক সরাসরি বাজার জাত করা হয় এবং বাকি অর্ধেক সঞ্চয় করে রাখা হয়।

সানশাইন ভেজিটেবল প্রাইভেট লিমিটেড
এইভাবে কাজ করে তারা ২০০৬ সাল থেকে চালু করে ফেললেন সানশাইন ভেজিটেবল প্রাইভেট লিমিটেড। এটি বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের বুদালশহর তথা সমগ্র ভারতের বৃহত্তম বিলাসবহুল গাজর উৎপাদনকারী সংস্থার মধ্যে অন্যতম। এরই সাথে প্রচুর সমস্যা বিজরিত কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সংকটের দিনে তাঁদের সাহায্যও করেছেন। পাশাপাশি গাজর কিং কর্নেল সুভাষ দেশওয়াল দেশের যুব সম্প্রদায়কে কৃষিকাজে আহ্বান জানিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, এটি একটি অত্যন্ত সম্মানজনক কাজ।

Avatar
Smita Hari

সম্পর্কিত খবর