ভারতের ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে তিন সেরা গুপ্তচরের নাম, তার মধ্যে অজিত ডোভাল একজন !

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ভারতের (India) গুপ্তচর (Spy) বিভাগে এমন অনেক কর্মকর্তরা ছিলেন, যারা বহুবার নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহু অসাধ্য সাধন করেছেন। নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে দেশমাতৃকার কাজে নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত রেখেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে দেশের সুরক্ষার কাজ করেছেন। তবে এই কাজ করতে গিয়ে তাঁদের নিজেদের জীবন বারবার সংকটের মধ্যে পড়েছে। যাদের জীবনের গল্প শুনলে প্রতিটি ভারতবাসী গর্ববোধ করেবন।

প্রতি মুহূর্তে শত্রুর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে কাটাতে হয়েছে তাঁদের। ছদ্মনাম নিয়ে দেশের বাইরে থেকে অনবরত দেশের জন্য কাজ করে গেছেন তারা। তবে এই কাজে তাঁদের বাস্তব জীবনে অনেক বার মৃত্যুর মুখোমুখিও হতে হয়েছে। তবে ভারতের বহু গুপ্তচরের মধ্যে এমন তিনজন ছিলেন, যাদের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। যারা হলেন- অজিত ডোভাল, সেহমত খান এবং রবীন্দ্র কৌশিক।

অজিত ডোভাল (Ajit Doval) তাঁর অসাধারণ সাহসিকতা এবং কাজের জন্য তাঁকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাহসী পুরষ্কার কীর্তিচক্র দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ২০১৪ সাল জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা হিসাবে তিনি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রয়েছেন। তিনি একজন আইপিএস অফিসার ফিল্ড এজেন্ট হিসাবে দেশের অনেক গোপন কাজের পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর এই ৩৩ বছরের কর্মজীবনে তিনি প্রায় ৭ বছর পাকিস্তানের এক নাগরিক হিসাবে থেকে সেখান থকে বিভিন গোপন খবর ভারত সরকারকে পাঠাতেন। তবে এই সময়কালে তাঁকে কোন পাকিস্তানি সন্দেহ করতে পারেননি। তবে বর্তমানে তিনি এখন ভারতে চলে এসেছেন। এবং সবথেকে অবাককর বিষয় হল, এই গোটা কর্মজীবনে তিনি শুধুমাত্র ৭ বছর পুলিশের উর্দি পড়েছিলেন। আর বাকি সময়টা দেশের সুরক্ষার জন্য গুপচর হিসাবে কাজ করে গেছেন।

এক কাশ্মীরি ব্যবসায়ীর কন্যা ছিলেন সেহমত খান (Sehmat Khan)। যিনি দেশের সুরক্ষার জন্য গুপচর পেশা বেছে নিয়ে এক পাকিস্তানি সেনার কর্মকর্তাকে বিয়ে করে সেখানে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। এক মহিলা গোয়েন্দা হিসাবে নিজের জীবন বিপন্ন করে, তিনি দেশের জন্য কাজ করতে শুরু করে দেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তিনি ভারতের হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাকিস্তান থেকে সরবরাহ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান থেকে যখন ফরে আসেন, তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পরে তাঁর পুত্র সন্তানও ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাজে যোগদান করেছিলেন।

এই গুপ্তচরদের মধ্যে ভারতের ‘দ্য ব্ল্যাক টাইগার’ বলা হত রবীন্দ্র কৌশিককে (Ravindra Kaushik)। তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে RAW এর বিখ্যাত এজেন্ট হসাবে পাকিস্তানে গুপ্তচর হিসাবে থাকতে শুরু করেন। তিনি গুপ্তচর বিদ্যার পাশাপাশি উর্দু এবং মুসলিমদের ধর্ম গ্রন্থ সম্বন্ধেও জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করেন। তিনি একজন পাকিস্তানি হিসাবে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি শেষ করেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে মেজর পদ লাভ করেছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের হয়ে পাকিস্তান থেকে অনেক গুপ্ত সংবাদ নিয়েও আসেন। তবে এই সময়ের মধ্যে তিনি এক পাকিস্তানি মেয়েকে বিবাহও করেছিলেন।

পরবর্তীতে এক ভারতীয়ের সাথে দেখা করেত যাওয়ায়, তাঁকে সন্দেহ বশত গ্রেপ্তার করে পাক প্রশাসন। তারপর তাঁকে ২ বছর পাকিস্তানি জেলে অত্যাচার করা হয়। তবে ভারত সরকার তাঁর সমস্ত নথিপথ্য নষ্ট করে দেন। বিচারে তাঁর ফাঁসির সাজা হলেও, তা পড়ে মুকুব হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে তিনি শেষে যক্ষ্মা রোগে প্রাণ হারান।

Avatar
Smita Hari

সম্পর্কিত খবর