অ্যামাজনের রুপকথা,যা ধ্বংসের পথে, পর্ব -১

রাজা সাহা :-আবার ধরা পরলাম ‘ভয়েজার্স ক্লাব’-এর চন্দ্রনাথের পাতা ফাঁদে । কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে চললাম সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ইতিহাস সমৃদ্ধ পেরু, ফুটবলের মক্কা মহাদেশের মত বিশাল ব্রাজিল আর আধা ইউরোপিয়ান আর্জেন্টিনা দর্শনে ।

‘এমিরেটস এয়ারলাইনস’-এর বিমানে ‘দুবাই’-এ প্লেন বদল করে ৩০ ঘণ্টা পরে পৌঁছে গেলাম ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ শহর (জনসংখ্যা কমবেশি দেড় কোটি)‘সাও পাওলো’ । শহরের অভিজাত এলাকা ‘পাউলিসতা এভিনিউ’র ঝকঝকে হোটেল ‘Double Tree Paulista’-র ঘরে যখন ঢুকলাম মনে হচ্ছিল শরীরে আর কিছু নেই । দশ ঘণ্টা মরার মত ঘুমনোর পর পেট পুরে সসেজ, সালামি সহযোগে ব্রেকফাস্ট সেরে শহর দর্শনে বেরিয়ে প্রথমেই চলে এলাম ‘বুতানতন স্নেক ফার্ম’ । আ্যনাকোণ্ডা, বিভিন্ন রকমের কোবরা, ময়াল , রাটল স্নেক , বিশাল আকৃতির গিরগিটি , মাকড়সা, বিছা সহ বিভিন্ন সরীসৃপের বিশাল সংগ্রহ এখানে ।

সংগৃহীত বিশাল পরিমাণ বিষ মূলত গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয় ।‘মোরুম্বি হিল’ এলাকার ‘পাউলিসতা এভিনিউ’-র পাহাড়ি রাস্তা ধরে সাও পাওলো জকি ক্লাবের পাশ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়লো অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল । এবার চলে এলাম সাও পাওলো ফুটবল ক্লাবের স্টেডিয়ামের আঙিনায় ।

 

স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়ে চলে গেলাম ফাঁকা গ্যালারিতে । জুলিও ব্যাপ্তিস্তা, লুই ফ্যাবিয়ানো, ক্যারেকা, কাকা, প্রভৃতি জগত কাঁপানো ফুটবল প্লেয়ারদের নাম এই ক্লাব ও স্টেডিয়ামের সাথে জড়িত । দুপুর বেলা সামান্য কিছু পেটে পুরে চলে এলাম ‘সাও পাওলো মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট’ দেখতে । ন তলা বাড়ির ছাদ থেকে পুরো শহরটা দেখে নিলাম – সবাই দল বেঁধে ছবি তুললাম । ‘ফ্রান্সিসকো মাতারাজ্জো সোবরিনহো’ নামের ব্রাজিলিয়ান শিল্পপতির অদম্য উৎসাহে ১৯৪৮ সালে এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় । ‘পাবলো পিকাসো’র আঁকা তৈলচিত্র দেখে নিলাম । হোটেলেই সেরে নিলাম সাহেবি ডিনার ।

পরের দিন ‘আভিয়াঙ্কা এয়ারলাইনস’-র বিমান ধরে পৌঁছে গেলাম পেরুর রাজধানী লিমা ।
বহু প্রাচীন এই দেশ ও সভ্যতা – মানব সভ্যতার অন্যতম আঁতুড়ঘর । খৃষ্টপূর্ব তিন হাজার বছরের পুরনো ‘নরতে চিকো’ সভ্যতা থেকে ‘ইনকা’ সভ্যতা পর্যন্ত বিস্তৃত বহু সভ্যতার ধাত্রীভূমি এই পেরু । কলম্বাস-পূর্ব আমেরিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ দেশ – প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সুপ্রাচীন ইতিহাস, দুর্জয়তা, দুর্গমতা, চমকপ্রদ ও বিচিত্র ভূদৃশ্য, অকল্পনীয় স্থাপত্য নিদর্শন, বন্যপ্রাণী, উজ্জ্বল প্রাণবন্ত মানুষ, পোশাকআশাক, বহুমুখী ও বিচিত্র আহার্যের জন্য দুনিয়াজোড়া পর্যটকদের অতি প্রিয় এই দেশ । সহস্রাব্দ প্রাচীন রক্ষণশীলতা এই দেশে মজ্জাগত ।

আর সেটাই বোধ হয় এই দেশের অন্যতম আকর্ষণ । স্প্যানিশ কনকুইসটাডোর ‘ফ্রানসিসকো পিজারো’ ১৫৩২ খৃষ্টাব্দে ‘ইনকা’ সম্রাট ‘আতাহুয়ালপা’-কে প্রথমে বন্দী ও পরে ১৫৩৩ খৃষ্টাব্দে হত্যা করে । দখল করে নেয় পেরুর বিস্তীর্ণ এলাকা । ১৫৩৫ খৃষ্টাব্দে দখল করে পেরুর ‘রিমাক’ উপত্যকার প্রধান ‘তাউলিচুসকো’-র রাজধানী শহর লিমা ।

লিমা শহরের ইতিহাস প্রাক ঔপনিবেশিক । “Ciudad de los Reyes” বা “City of the Kings” নামেও এই শহরের পরিচিতি আছে । বাসে চেপে চলে এলাম লিমা শহরের ঝকঝকে মেন স্কোয়ারে । তাউলিচুসকো-র বাসস্থানে গড়ে ওঠে পিজারোর রেসিডেন্সি ও মূল কার্যালয় – বর্তমানে ‘গভর্নমেন্ট প্যালেস’ । স্কোয়ারের আর এক প্রান্তে লিমা ক্যাথিড্রাল । ধর্মপ্রচারক ও সাধু সেন্ট জনের নামে উৎসর্গিত এই ক্যাথলিক চার্চ গথিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন । একটু দূরেই ‘সান ফ্রানসিসকো চার্চ ও কনভেন্ট’ ।

১৯৯১ খৃষ্টাব্দে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পায় । এখানে পূজিত সাধু জুডে । পুরনো পুঁথিপত্রের মস্ত সংগ্রহ এখানকার লাইব্রেরীটি জগত বিখ্যাত । এ ছাড়াও ভূগর্ভস্থ এক বিশাল সমাধিক্ষেত্র এখানকার বৈশিষ্ট্য । ২০০০০ হাড়গোড় ও মাথার খুলি দেখে নিলাম এক ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের ভিতরে ঢুকে । ‘ওয়ার অফ দ্য প্যাসিফিক’-এ অংশগ্রহণকারী পেরুর জাতীয় বীরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্কোয়ারের আর এক প্রান্তে ‘প্যালেস অফ দ্য ইউনিয়ন’ – ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্যালেস । সেটা দেখতেও ভুল হল না ।

সময়ের অভাবে দেখা হল না পেরুর পিরামিড – ‘হুয়াকা জুলিয়ানা’, ‘রেনবা মাউন্টেন’ ও আরও অনেক কিছু । পৃথিবীর বৃহত্তম পাখী ‘The Giant Andean Condor’ও অদেখা রয়ে গেলো । শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম যে দক্ষিণ পেরুর বালিয়াড়ি না কি সাহারা মরুভূমির বালিয়াড়ির চেয়েও উঁচু ।
……….To be continue

Avatar
Udayan Biswas

সম্পর্কিত খবর