ভূমিপূজনের আনন্দে সেজে উঠছে ভারতের ধর্মনগরী অযোধ্যা, দেখুন ছবি

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ প্রায় ৫০০ বছর লড়াইয়ের পর অবশেষে রাম মন্দিরের (Ram temple) অধিকার পেল হিন্দুরা। ১৫২৮ খ্রীস্টব্দে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হয়। আর সেই সময় থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। সেই সময় বেশ কয়েকজন হিন্দু দাবী করেছিলেন, ওই স্থান ভগবান রামের জন্ম স্থান। আশেপাশের অঞ্চলে সীতা রসোই, স্বর্গদ্বার থাকায় প্রামাণিত হয় ওই অঞ্চল ভগবান রামের সাথেই যুক্ত।

 

রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট
শুরু হয় বিরোধ, চলতে থাকে কেসও। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের বেঞ্চ এক সর্বসম্মত রায় ঘোষণা করে। অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি রাম মন্দিরেই অংশ, তাই সেখানে রাম মন্দির নির্মান হবে। তবে মুসলমানদের মসজিদের জন্য ৫ একর জমি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

নেওয়া হল মন্দির নির্মানের উদ্যোগ
এরপর থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। রাম মন্দির নির্মানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা ভারতবাসী। নির্মাণ কার্যের মধ্যেই বিশ্ব জুড়েই হানা দিল করোনা ভাইরাস। থমকে গেল কাজ। করোনা আবহ কিছুটা সামলে নিয়ে আবারও শুরু হল মন্দির নির্মানের কাজ।

ভূমি পূজনের অনুষ্ঠান
আগামী ৫ ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ আরও বিশিষ্ট বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে মোট ২০০ জনের উপস্থিতিতে করোনা সতর্কীকরণ মেনেই আয়োজিত হচ্ছে রাম মন্দিরের ভূমি পূজনের অনুষ্ঠান। এদিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে অযোধ্যার মণিরামদাস সেনানিবাসে ১ লক্ষ ১১ হাজার লাড্ডুও তৈরি করা হচ্ছে। ভগবান রামের ছবিতে সেজে উঠছে গোটা রামনগরীও। সেজে উঠছে রাস্তাঘাটও।

যোগ দিচ্ছেন মুসলিমরাও
এদিনের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন বহু মুসলিম ব্যক্তিরাও, যারা নিজেদের ভগবান রামের বংশধর বলেও দাবী করেন। বর্তমান সময় ধর্ম আলাদা হলেও, তাঁদের দাবী ভগবান রাম তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন। সেই সঙ্গে কেউ আনছেন পবিত্র স্থানের মাটি, আবার কেউ আনছেন ইটও।

সোনার ইট দিচ্ছেন বাবরের বংশধর
আবার এরই মাঝে বাবরের বংশধর অর্থাৎ ভারতের শেষ স্বাধীন সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের প্রপৌত্র প্রিন্স ইয়াকুব হাবিবউদ্দিন তুসি সাম্প্রদায়িকতার বার্তা পৌঁছে দিতে নরেন্দ্র মোদীর হাতে একটি সোনার ইট তুলে দেবেন। যে ইট দিয়েই শুরু হবে রাম মন্দিরের ভূমি পূজার কাজ।

দান করবেন প্রাবাসী ভারতীয়রাও
এই রাম মন্দিরের নির্মান কাজে সাহায্য করবেন দেশের পাশাপাশি বিদেশে থাকা ভারতীয়রাও। প্রাবাসী ভারতীয়রা মোদী সরকাররের তহবিলে রাম মন্দির নির্মানের জন্য নিজেদের সাধ্যমত দান করবার অনুমতিও নিয়েছেন।

সাজবে গোটা ভারত
এরই সাথে জানা গেছে ১১ টি পবিত্র তীর্থস্থানের জল এবং মাটি যাচ্ছে অযোধ্যায়, যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরের পবিত্র সারদা পিঠের মাটিও। অযোধ্যার বাসিন্দাদের জন্য বড় স্ক্রীন লাগিয়ে দেওয়া হবে এই অনুষ্ঠান দর্শনের জন্য। সেইসঙ্গে দূরদর্শনেও সরাসরি প্রচারিত হবে এই অনুষ্ঠান। এই দিন অকাল দীপাবলির আলোয় সেজে উঠবে গোটা ভারত।

মন্দিরের নিচে রাখা হবে টাইম ক্যাপসুলও
ভবিষ্যতে যাতে এই মন্দির নিয়ে আর কোন জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেই কারণে এই মন্দিরের ২০০০ ফুট নিচে রাখা হচ্ছে টাইম ক্যাপসুল। যা এক প্রকার বিশেষ ধরনের ধাতব তামা দিয়ে তৈরি। এই টাইম ক্যাপসুলের মধ্যে মন্দির নির্মানের ইতিহাস এবং সেই সঙ্গে বর্তমান সময়ের বর্ণনা উল্লেখ করা থাকবে।

আনন্দিত মন্দিরের পুরোহিতরাও
নয়াঘাটের বশিষ্ঠ পিঠ তিওয়ারি মন্দিরের মহান্ত গিরিশপতি ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, ‘কয়েকশ বছর পর ভগবান রাম তাবু থেকে মুক্তি পেয়ে তার মন্দিরে স্থান পাবেন। ত্রেতাযুগে ভগবান রামের জন্মকালে গোটা অয্যোধ্যা খুশিতে ভরে উঠেছিল। সেই অনুভূতি আবারও ফিরে আসছে’।

রাম মন্দিরের ভূমি পূজনের অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে কুলদীপ মিশ্র, রাহুল পান্ডে বলেছেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত এই মন্দিরের নব নির্মানে। এর ফলে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুরাগীদের কাছে এটি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠবে। পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানও হবে’।

অযোধ্যায় অবস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ রাম মন্দিরের পুনর্নিমাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী, মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে খুবই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন। সেই সঙ্গে তারা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী, মুখ্যমন্ত্রী যোগী অযোধ্যাকে এমন ভাবে সাজাচ্ছেন, দেখে মনে হচ্ছে যেন ভগবান রামের জন্মলগ্নে দাঁড়িয়ে আছি। বহু শতাব্দী পেরিয়ে এই মন্দিরের নির্মানে আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ’।

ভারতের সাথে আনন্দে সামিল হবে মার্কিন মুকুল
বহু ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে অবশেষে নির্মিত হতে চলেছে রাম মন্দির। তবে এরই মাঝে বহু বিরোধী দলনেতার নানান বিতর্কমূলক মন্তব্যও রয়েছে। তবে সবকিছুকে উপেক্ষা করে আগামী ৫ ই আগস্ট ভারতের সাথে এই আনন্দে সামিল হচ্ছে সূদুর মার্কিন মুলুকও। বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের আইকনিক টাইমস স্কোয়ারে ফুটে উঠবে রাম মন্দিরের প্রতিচ্ছবি। সেই সঙ্গে ইংরেজি এবং হিন্দি হরফে জ্বলজ্বল করবে জয় শ্রী রাম’ স্লোগানও।

Avatar
Smita Hari

সম্পর্কিত খবর