শতবর্ষ পেরিয়ে : ধর্মসংগীতকে পরিনত করেছিলেন মুক্তিমন্ত্রে, আজও সমান প্রাসঙ্গিক we shall Over come স্রষ্টা

আজ যখন সারা পৃথিবী করোনায় বিধ্বস্ত সেই সময় ভয়ংকর সময়ে দাঁড়িয়ে আগামীর দিকে তাকিয়ে একটাই গান সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক “we shall over come”. একদা যে গান ছিল ধর্ম সংগীত তা আজ পৃথিবীর সকলের মুক্তিমন্ত্র। আর আর এই মুক্তিমন্ত্র আনয়নের ভগীরথ মার্কিন লোকসংগীত শিল্পি পিট সিগার আজ পূরন করলেন ১০০ বছর।

সিগার আজীবন গান গেয়েছেন বিশ্বের সমস্ত নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। তাঁর গানে বারংবার কেপে উঠেছে ক্ষমতালােভী , যুদ্ধবাজ শাসকের দর্পের সিংহাসন । তাই পিট সিগার যেমন মেহনতি সর্বহারা মানুষের এক উজ্জ্বল প্রদীপ শিখা তেমনই শােষকের কাছে এক সর্বগ্রাসী দাবানল ।

সংগীতের সাথে সিগারের সম্পর্ক ছােটবেলা থেকেই তাঁর মা কনস্ট্যান্ট এডসন সিগার ছিলেন নিপুন বেহালা বাদক । তাঁর বাবা চার্লস সিগারও ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও শান্তিবাদী রাজনৈতিক আদর্শের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠ । এই পারিবারিক পরিমন্ডল যে পিট সিগারের সংগীত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের গতিমুখটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল তা বলাই বাহুল্য । যদিও ধ্রুপদী সংগীত চর্চা সিগারকে কখনােই আকর্ষন করেনি । ১৯৩৬ সালে এক লোকজ মেলায় তিনি ব্যাঞ্জোর প্রতি প্রথম । আকৃষ্ট হন । তাঁর নিজের কথাতে , ” ঐ গ্রীষ্মে আমি অ্যাশভিলেনের লােকজ মেলায় গিয়েছিলাম , সেখানে হঠাৎ একটি বাদ্যযন্ত্রের সুর আমার কানে প্রবেশ করলে আমি খুঁজতে থাকি সুরটির উৎস । আর দেখামাত্রই ভালবেসে ফেলি পুরােনাে ঢং এর ব্যাঞ্জোটিকে । ” অব্যাহতিকাল পরেই পিট হয়ে ওঠেন ব্যাঞ্জোর যাদুকর ও লােকগানের অমর শিল্পী ।

লোকগানের সন্ধান করতে করতেই পিট সিগারের সাথে পরিচয় হয় বিখ্যাত লােকশিল্পী উডি গাথরি । তারা একত্রে গঠন করে AImane Singers নামে একটি গােষ্ঠীর । সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে তারা লােকগানের সুরে পরিবেশন করেন নিজেদের তথা গণ – মানুষের বক্তব্য – গণসংগীত । তাঁদের – ‘ The Talking Union Blues ” গানটি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল । ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে এই সময় তারা গর্জে ওঠেন ” The Ballad of October16 ” গানটিতে । যদিও গােষ্ঠীটি বেশীদিন স্থায়ী হয়নি । ওইসময়ে পিট Sign Out নামে একটি ফোক ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন যেখানে তিনি । লােকগানকে ব্যাবহার করে সেই সময়ের রাষ্ট্রযন্ত্রের সমালোচনা ও মানুষের রাজনৈতিক মতাদর্শ গঠনে তৎপর হয়েছিলেন ।

Amane Singers ভেঙে গেলে ১৯৪৮ সালে লি হায়জকে সাথে নিয়ে The Weavers নামে একটি ব্যান্ড তৈরী করেন । এই সময়ের তাঁর গানগুলি ছিল শাসকের দর্পের মিনারে দূর্বলের সজোর আঘাত । তাঁর এই গানগুলির জন্য তিনি শাসকের রােষানলে পরতে হয়েছিল কিন্তু পিটের রক্তেই ছিল বিপ্লবের উদ্যম । শাসকের রক্তচক্ষুকে অবজ্ঞা করে তারা একের পর এক সৃষ্টি করেন “ Kisses sweeter than wine ” . . “ Good night Irana ” , ” On the top of old smoky ” । যদিও সরকারের বিরােধিতার জন্য তাঁর ব্যান্ডটি ১৭ বছরের জন্য কালাে তালিকাভুক্ত করা হয় । ১৯৫৮ সালে সিগার the weavers ত্যাগ করেন এবং এককভাবে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন । এই সময়ে তিনি সাধারণ জনগণের আরাে কাছাকাছি এসে পড়েন এবং তাদের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি গান বাঁধতে শুরু কৱেন । প্রাচীন একটি আধ্যাত্মিক গানকে পিট পরিবর্তিত করেন we shall overcome গানে , যা দিকে দিকে প্রতিধ্বনিত হয়ে । উজ্জীবিত করেছিল আপামর জনগণকে । গানটির বংলা অনুবাদ আমরা করব জয় ( হেমাঙ্গ বিশ্বাস ) আজও মুক্তির ভাষা ।

প্রসঙ্গত পিট সিগারের Turn turn গানটির কথাও উল্লেখ করতে হয় , যা সেই সময় তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সারা ফেলেছিল । | মেহনতি সর্বহারা মানুষ বারবার পিটের গানে প্রানের ভাষা ও বিপ্লবের মন্ত্র খুঁজে পেয়েছে । সাম্যবাদের আদর্শে দীক্ষিত পিট শ্রমিকের হাতুরিকেই চেয়েছেন স্বাধীনতা সূচিত করবার জন্য – Well , i ‘ ve got a hammer / andi ‘ ve got a bell / and i ‘ ve got a song to sing all over this land / it ‘ s the hammer of justice / it ‘ s the bell of freedom / it ‘ s a song about love between my / brothers and sisters all over this land , ভিয়েতনামের যুদ্ধে অগনিত নিস্পাপ প্রানের বলিদানে ব্যাথিত গায়ক গেয়ে ওঠেন Where have all the flowers gone / long time passing / where have all the flowers go long time ago . বিশ শতকের এক প্রতিবাদী চরিত্র পিট সিগার , আমৃত সংগ্রাম করে গেছেন বঞ্চিত মানুষের পক্ষে , রাষ্ট্রীয় অন্যায় অবিচার ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে । আর এই লড়াইয়ে তাঁর অস্ত্র ছিল পল্লীর মেঠো সুর যা তিনি পরিবর্তিত করেছেন সহস্র নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের শব্দব্রহ্মে ।

আজ আমাদের সমাজে যখন ধর্মীয় মেরুকরণের জিগির উঠেছে , ধর্মের নামে উস্কানি দিয়ে খেতে না পাওয়া অশিক্ষিত – অর্ধশিক্ষিত মানুষদের ধর্মের আফিমে নেশাগ্রস্থ করে তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে তখন পিট সিগার অসম্ভব প্রাসঙ্গিক , যার গান গেয়ে সভ্যতার রথচক্রের নিরন্তর চালকেরা শােষক মালিকশ্রেনীর চোখে চোখ রেখে বলে উঠবে This land is our land .

সম্পর্কিত খবর