মেয়েদের শিক্ষার জন্য অবসরের প্রাপ্ত ২১ লক্ষ টাকা দান, শিক্ষকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা ভারত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: শিক্ষকরা হলেন জাতির মেরুদন্ড। তাঁদের প্রদান করা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে এগিয়ে চলে সভ্যতা। তাই দেশ এবং সমাজকে গড়ে তুলতে শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনকি, মা-বাবার পরেই স্থান পান শিক্ষকেরা। প্রত্যেকটি পড়ুয়াকে সঠিক পথে চালিত করতে তাঁদের ভূমিকা সত্যিই অপরিসীম। পাশাপাশি, শিক্ষকেরাও মাঝে মাঝে এমন কিছু কাজ করেন যেগুলি জানার পর তাঁদের ওপর মানুষের বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা উভয়েই বৃদ্ধি পায়।

সম্প্রতি, ঠিক সেইরকমই এক ঘটনার প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। আর যা জানতে পারার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে কুর্ণিশ জানিয়েছেন দেশের মানুষ। একজন শিক্ষক যে কতটা মহান হতে পারেন তা কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত এক প্রধান শিক্ষক। শুধু তাই নয়, এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি জয় করে নিয়েছেন সবার মন।

একমাত্র শিক্ষাই যে মানুষজকে সঠিকপথে পরিচালিত করতে পারে এই আপ্তবাক্যকে মাথায় রেখে এক মহতী নজির স্থাপন করলেন গিদ্দালুর প্রকাশমের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মার্কাপুরম রাম ভূপাল রেড্ডি। অবসর নেওয়ার পরে তাঁর পরবর্তী জীবনের কথা মনে না রেখেই তিনি তাঁর সঞ্চিত অর্থ দান করলেন এক মহৎ উদ্দেশ্যে।

জানা গিয়েছে যে, মেয়েদের শিক্ষার প্রসার ঘটাতে তিনি দান করেছেন ২১.৭১ লক্ষ টাকা। মূলত, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগটুকুও পায়না। এমনকি, পড়তে পড়তেই বিয়েও হয়ে যায় তাদের। এইসব বিষয়কে মাথায় রেখেই তিনি মেয়েদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে এই বিপুল অর্থ দান করে দেন। রাম ভূপাল এই টাকাটি ইয়াদভল্লি পোস্ট অফিসে জমা দেন।

শুধু তাই নয়, এই অর্থের মাধ্যমে মোট ৮৮ জন ছাত্রীর সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা অ্যাকাউন্ট খোলা হবে বলে জানা গিয়েছে। মূলত, ১০ বছরের বেশি বয়সী ৮৮ জন মেয়ে এই সুবিধা পাবে। পাশাপাশি, এই প্রকল্পের জেরে প্রতিটি মেয়ের বয়স ২১ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি তিন মাসের অন্তর এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হবে মোট ৪১০০০ টাকা।

তবে, শুধু অবসরের পরেই নয়, বরং শিক্ষকতা করাকালীনও তিনি বহু দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিজের টাকায় পড়াশোনা করাতেন। এমনকি, যে গ্রামে তাঁর স্কুল ছিল সেখানকার দরিদ্র ছাত্রছাত্রীর তিনি বইপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্কুলের ফি দেওয়ারও যথাসম্ভব চেষ্টা করতেন। বিভিন্ন উৎসবে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিষ্টি ও জামাকাপড় বিতরণ করতেন তিনি।

এদিকে, রাম ভূপালের এই দরদী মানসিকতার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের তিন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডি, এন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং কিরণ কুমার রেড্ডির কাছ থেকে সম্মানিত হয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে, “আমি অনেক ছাত্রীকে টাকা পয়সার অভাবে স্কুল ছেড়ে যেতে দেখেছি এবং এটা সত্যিই হৃদয় বিদারক ঘটনা।” এদিকে, এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাঁকে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন সকলেই।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর