সরকারি দফতর থেকেই ভুয়ো নিয়োগপত্র, এত বড় ধাপ্পাবাজি! বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাড়িতে সেদিন খুশির জোয়ার। চাকরির ‘নিয়োগপত্র’ আনতে কলকাতা গেছে ছেলে। মা বারবার দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবছেন এই বোধহয় ছেলে ফিরল। ছেলে ফিরল ঘণ্টা কয়েক পর। ফিরে ছেলে জানাল আইটিআই কলেজ থেকে ‘নিয়োগপত্র’ নয়, হাতে এসেছে ভুয়ো ‘অফার লেটার’ (Fake Appointment Letter)!

গোঘাটের রকি ঘোষালের মতো একই অবস্থা হুগলি জেলার আরও অনেকেরই। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত শতাধিক যুবক-যুবতী মঙ্গল ও বুধবার ওই ভুয়ো চিঠি পেয়েছেন। সরকারি দফতরের মাধ্যমে কী ভাবে এমন ভুয়ো চিঠি দেওয়া তা জানেন না কেউই। ভুয়ো চিঠির অভিযোগ নিয়ে জেলা আইটি বিভাগের নোডাল অফিসার তথা এইচআইটি কলেজের অধ্যক্ষ সৌমিত্র সাহা মুখ খুলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন ‘যা বলার, রাজ্য স্তর থেকে বলবে।’ জেলা ‘উৎকর্ষ বাংলা’র নোডাল অফিসার রাখি বিশ্বাসও বলেন, ‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবেন।’

চাকরিপ্রার্থীরা জানান, নিয়োগপত্র দেওয়া হবে এই বলে সোমবার বাসে চাপিয়ে তাঁদের কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও, সেদিন নিয়োগপত্র হাতে পাননি। পরে জানানো হয়, বুধবার হুগলি আইটিআই এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে ওই চিঠি সংগ্রহ করে চাকরিপ্রার্থীরা দেখেন, সেটি নিয়োগপত্রই নয়। গুজরাতে সুজ়ুকি মোটরের সঙ্গে গাঁটছড়া থাকা সংস্থায় মাসিক ১১ হাজার টাকা ভাতায় ‘ভেহিকল টেকনিশিয়ান’ হিসেবে দু’বছরের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ছাড়পত্র মাত্র। বুধবারই সকাল ১০টার মধ্যে গুজরাতের শিবিরে যোগ দিতে হবে।

নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে চাকরিপ্রার্থীরা চিঠি হাতে পান। অনেকেই চিন্তিত হয়ে চিঠিতে থাকা মোবাইল নম্বরে সংস্থার আধিকারিককে ফোন করেন। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা এমন কেনও চিঠি পাঠাননি। এমনই এক চাকরিপ্রার্থী রকির ঘোষালের মা তৃপ্তি ঘোষাল বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে বলা হয়, সরকারি কলেজ থেকে চিঠি পাওয়ার পরেও এ রকম হতে পারে!’ রকির বাবা রতনের পান-চায়ের দোকা‌ন। ছেলের চাকরি পাওয়ার কথা সবাইকে বলেও ফেলেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘সরকারি স্তরে এত বড় ধাপ্পা হতে পারে না। হয়তো কোনও গোলমাল হয়েছে। আবার নিশ্চয়ই ডাকবে।’

আরামবাগ মহকুমা থেকে মোট ২১ জনের নাম তালিকায় রয়েছে। তাঁদের মধ্যে খানাকুলের গৌড়ান গ্রামের অতনু বাগীশ বলেন, ‘চিঠি পেলাম শিবিরে যোগ দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে। বিষয়টি জানতে চিঠিতে থাকা নম্বরে ফোন করতে বলা হয়, জানতে পারি চিঠি ভুয়ো।’ চাকরিপ্রার্থীরা জানান, তাঁরা গত ১৬ অগস্ট স্কুল থেকে চাকরির খবর পেয়ে একটি লিঙ্কে অনলাইনে আবেদন করেন। ২৫ অগস্ট যাদবপুরের একটি টেকনিক্যাল কলেজে ‘জব ফেয়ার’-এ ইন্টারভিউও দেন। এমনই এক ছাত্র ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা দফতর আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’ এরই মধ্যে চাকরিপ্রার্থীরা জানান বৃহস্পতিবার বিকেলে হুগলি এইচআইটি থেকে তাঁদের ফোন করা হয়। সেখানে বলা হয়, গুজরাতের ওই সংস্থায় এইমূহুর্তে যোগ দেওয়ার কোনও দরকার নেই। কারিগরি শিক্ষা দফতর এ নিয়ে কথা বলছে।

Avatar
Sudipto

সম্পর্কিত খবর