মূর্তি স্বামী বিবেকানন্দ-রামমোহন রায়ের, তবে নাম তৃণমূল নেতাদের! আজব কাণ্ড কলকাতায়

বাংলাহান্ট ডেস্ক : এ যেন উলটপুরাণ! যে মণীষীদের মূর্তি, নাম নেই তাঁদেরই। পরিবর্তে খোদাই করা হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নাম। কলকাতা (Kolkata) শহরের আনাচে কানাচে এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। তবে এবার ঘটনাস্থল বেলেঘাটার (Beleghata) আলোছায়া মোড়। সেখানে নতুন তৈরি হওয়া একটি রেস্তরাঁ ও ব্যাঙ্কোয়েটের সামনে পর পর সাতটি মূর্তি সিমেন্টে বাঁধানো পাটাতনের উপর ঠাঁই পেলেও সেগুলিতে উল্লেখ নেই জন্ম বা মৃত্যুর তারিখ। উল্টে প্রতিটির নীচে লেখা, ‘বিধায়ক: পরেশ পাল’, ‘সহযোগিতায় অলকানন্দা দাস’!

   

সূত্রের খবর, এই মূর্তিগুলিকে কেন্দ্র করেই এখন তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে শহর কলকাতায়। ওই রেস্তরাঁ ও ব্যাঙ্কোয়েটের মালিকপক্ষই ফুটপাতের একাংশ বাঁধিয়ে ওই মূর্তিগুলি সেখানে বসাতে উদ্যোগী হন। তবে, সেই মূর্তিগুলিতে জনপ্রতিনিধিদের নাম উল্লেখ করার প্রসঙ্গে উঠে আসে রাজনৈতিক তত্ত্ব। মালিকপক্ষের তরফে সেখানকার বিধায়ক পরেশ পালের দাপটের কথাও উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ করা হয়, বিধায়ককে ‘তুষ্ট’ না করা পর্যন্ত নাকি ওই রেস্তরাঁ-ব্যাঙ্কোয়েটের একটি ইটও গাঁথা যাচ্ছিল না।

ওই রেস্তরাঁর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, “পরিচয় প্রকাশ হয়ে গেলে বিপদ আছে। নেতা-দাদাকে খুশি করার চেষ্টার মধ্যেই আমাদের মালিকপক্ষ এলাকার সৌন্দর্যায়নের জন্য কিছু করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তখনই মনীষীদের মূর্তি বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসে। তাই সাতটি মূর্তি বসিয়ে নীচে বিধায়ক ও স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির নাম লিখে দেওয়া হয়েছে।” তবে স্থানীয়দের দাবি, ওই এলাকায় মূর্তি বসানো ঘিরে আগেও বিতর্ক হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি অলকানন্দা দাস বলেন, “ওই মূর্তিগুলির কোনওটাই পুরসভা বা আমার উদ্যোগে বসানো হয়নি।” অন্যদিকে, মূর্তি এবং তাকে ঘিরে বিতর্কের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরেশ পাল। যদিও অতীতেও যেখানে খুশি মনীষীর মূর্তি নিজের ইচ্ছেমতো বসাতে যাওয়ায় পরেশ পালের সঙ্গে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের বিবাদ হয়েছে।

Statue

যদিও এই ধরনের কাজকে বিশিষ্ট মানুষদের অপমান বলেই বরাহনগরের নৈনানপাড়া লেনের বাসিন্দা বছর তিরাশির মধুসূদন মাজি তথা ‘মূর্তি ম্যান’ মনে করেন। মূর্তি সংক্রান্ত কোন ভুল থাকলেই সংশ্লিষ্ট পক্ষকে চিঠি দেন তিনি। এক্ষেত্রে মধুসূদনবাবু বলেন, “বিধায়ক, পুরপ্রতিনিধিদের বুঝতে হবে, মূর্তির নীচে নিজেদের নাম লিখে দিয়ে প্রচার পাওয়ার চেষ্টা আদতে মনীষীদেরই অপমান করা। আর যাঁরা এ জিনিস দেখেও প্রতিবাদ করেন না, তাঁদের বুঝতে হবে, এ তোমার পাপ। এ আমার পাপ।”

Avatar
Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর