রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে বড় ধাক্কা ভারতের! খরচ বেড়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা বিশ্ব। পাশাপাশি, এই যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকট বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়িয়ে ক্ষতির মুখে ফেলেছে সবাইকে। তবে, এবার এই যুদ্ধ প্রত্যক্ষভাবে ভারত সরকারের উপর অর্থনৈতিক বোঝা বাড়িয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে বিশ্ববাজারে সারের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারতীয় কৃষকদের ওপর।

কৃষকদের উপর অর্থনৈতিক বোঝা বাড়বে:
রাশিয়ার তরফে সারের বর্ধিত দাম কৃষকদের উপর অর্থনৈতিক বোঝা বাড়াবে। তবে এই বর্ধিত দামের বোঝা থেকে কৃষকদের বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার সারের উপর ভর্তুকি দ্বিগুণ করতে পারে। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার এবার কৃষকদের সারে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ভাবছে ২ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার এতে অতিরিক্ত ১ লক্ষ কোটি টাকার ভর্তুকি খরচ করবে।

ভর্তুকি ঘোষণা করেছিলেন নির্মলা সীতারামন:
এদিকে এর আগে, গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করার সময়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন চলতি অর্থবর্ষে সারের উপর ১ লক্ষ কোটি টাকার ভর্তুকি ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। এখন ভারত যে সার আমদানি করে তার দাম বিশ্ববাজারে অনেক বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, কৃষকদের পক্ষে এই পরিমান অর্থ দেওয়া সহজ নয়, তাই সরকার সারের ভর্তুকি ১ লক্ষ কোটি টাকা বাড়িয়ে দিতে পারে।

এর আগে ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছিল:
যদিও, গত ৩১ মার্চ, সরকার সারের উপর ভর্তুকির পরিমান বাড়িয়ে ১.৪০ লক্ষ কোটি টাকা করেছিল, কিন্তু এই ভর্তুকি কৃষকদের জন্য যথেষ্ট নয়। এমতাবস্থায়, সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে এখন ২ লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা ভাবছে।

সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা গিয়েছে ডিএপি ও ইউরিয়া নিয়ে:
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ভারত সরকার ডি অ্যামোনিয়াম ফসফেট (DAP), ইউরিয়ার মতো প্রচুর পরিমাণে সারের কাঁচামাল আমদানি করে। রাশিয়া ও ইউক্রেনেরও এতে বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় দেশের পণ্য সরবরাহে বাধার কারণে বিশ্ববাজারে এগুলির দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ, কৃষকদের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা বিপুলহারে বেড়ে গিয়েছে।

জ্বালানির দাম বৃদ্ধিও একটি বড় বাধা:
এছাড়াও, ইউরিয়া তৈরিতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় গ্যাসে। আর এই সময়ে বিশ্বব্যাপী গ্যাসের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ইউরিয়া তৈরিতে মোট খরচের প্রায় ৭০ শতাংশ জুড়ে থাকে গ্যাসের খরচ। অর্থাৎ সারের দাম বাড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল গ্যাসের দাম বৃদ্ধি। যে কারণে, আগামী সময়ে কৃষকদের চাপমুক্ত করতে সরকারকে ভর্তুকির খরচ বাড়াতে হবে।

modi putin india russia

সরকার প্রস্তুতি নিয়েছে:
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যেই সরকার রবি ও খরিফ ফসলের জন্য বিপুল পরিমাণ সার মজুত করেছে। এর আওতায় এখনও পর্যন্ত ৩০ লক্ষ টন DAP ও ৭০ লক্ষ টন ইউরিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারও এই ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী সময়ে দেশে এই সম্পর্কিত অনেক ইউনিট চালু হবে যা উৎপাদন শুরু করবে। যার ফলে সারের আমদানির ওপর ভারতের নির্ভরতাও কমবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর