জেনে নিন বুনোশিবের গাজন উৎসবের ইতিকথা!

 

ইন্দ্রানী সেন, বাঁকুড়া: শতাব্দী প্রাচীন বুনোশিবের গাজন উৎসবে মেতে উঠল বাঁকুড়ার ইন্দাসের শাশপুর গ্রাম। চৈত্র সংক্রান্তিতে জেলাজুড়ে শিবের গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও বৈশাখ মাসে শাশপুরের বুনোশিবের গাজন বিখ্যাত। গাজন উৎসব নিয়ে বিভিন্ন লোককথা প্রচলিত আছে। শাশপুর এর গাজন বিষয়ে বহুল প্রচলিত কথা অনুযায়ি বহুদিন আগে শাশপুর এলাকা গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। গ্রামের রাখাল ছেলেরা জঙ্গলে গরু চরাতে এসে প্রতিদিন লক্ষ করতো কিছু গরু জঙ্গলের একটি নির্দিষ্ট অংশে প্রতিদিন নিজেদের দুধ দিয়ে ধুয়ে দেয়। রাখালদের সন্দেহ হওয়ায় ঐ স্থানে যায়। পরে দেখে বনের ঐ স্থানে একটি শিব লিঙ্গ বিরাজ করছে। আর গরু গুলোর বাঁট থেকে অলৌকিক ভাবে দুধের ধারা বর্ষিত হচ্ছে ঐ শিব লিঙ্গের মাথায়। ভীত সন্ত্রস্ত ঐ রাখাল বালকরা পরে ঐ ঘটনা গৃহস্বামীকে জানায়। পরে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে ঐ স্থান পরিস্কার করে শিব মন্দির নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই রীতিনীতি মেনে বৈশাখ মাসের ৩০ ও ৩১তারিখ বুনোশিবের গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

 

শাশপুরের গাজন সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুজো কমিটির সদস্য কৌশিক সরকার বলেন,” ছোট বেলা থেকেই এই গাজন দেখে আসছি। বৈশাখ মাসের শেষ দুই দিন রীতি নীতি মেনেই গাজন অনুষ্ঠিত হয়। সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রাপালা, রাত গাজনের দিন আতসবাজির প্রদর্শনী দেখতে আসে পাশের ইন্দাস, বৈকুণ্ঠপুর, আকুই, বনকী, মঙ্গলপুর, বামনিয়া সহ বর্ধমান জেলার হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। এছাড়াও পুজো কমিটির উদ্যোগে দরিদ্র মানুষদের জন্য বস্ত্র উপহার দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই বছর গাজন উৎসবের উদ্বোধন করেন মঙ্গলপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাসংঙ্ঘের অধ্যক্ষ প্রশান্তানন্দজী মহারাজ।”

f7d70 img 20190515 wa0021

বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক সৌমেন রক্ষিত গাজন উৎসব বিষয়ে বলেন,” অতীতে ভগবান শিব কে কৃষির দেবতা হিসাবে মানা হতো। ভগবান এখানে কৃষকের রুপ ধরে একবারে সাধারণ মানুষ। আর মা দুর্গা দেবী অন্নপূর্ণা যিনি মানুষের মুখে অন্ন তুলেদেন। এছাড়া ও গাজন উৎসবের পেছনে কৃষক-সমাজের একটি সনাতন বিশ্বাস কাজ করে। চৈত্র থেকে বর্ষার শুরুতে সূর্য যখন প্রচন্ড উত্তপ্ত থাকে তখন সূর্যের তেজ প্রশমন ও বৃষ্টি লাভের আশায় অতীতে কোনো এক সময় কৃষিজীবী সমাজ এ অনুষ্ঠানের উদ্ভাবন করেছিল। গ্রাম্য শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে এর আয়োজন হয়। এই সমস্ত কিছুই ঘটনা গুলি বিচার করে বলা যেতে পারে। শিবের বিয়ে হোক বা বৃষ্টির জন্য বন্দনা সব কিছুই মানুষের একান্ত আপন আর একত্মের অনুষ্ঠান।

সম্পর্কিত খবর