স্বামীর বলিদানের জন্য আমি গর্বিত, চোখের জল ফেলব না: শহীদ কর্নেল আশুতোষ শর্মার স্ত্রী

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ “মৃত্যুতে নয়, পরিবার মনে রাখবে তাঁর শৌর্য্যে, বীরত্বে, দেশের জন্য স্বার্থত্যাগে”, স্বামীর গর্বে গর্বিত শহিদ কর্নেল আশুতোষ শর্মার (Ashutosh Sharma) স্ত্রী পল্লবী। হান্দওয়ারা এনকাউন্টারে যাওয়ার আগে পল্লবীর সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল কর্নেলের। জঙ্গিদের খতম করে তাড়াতাড়ি ফিরবেন বলেছিলেন। রবিবার বিকেল অবধি স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে অজানা বিপদের আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিল পল্লবী শর্মার (Pallavi Sharma)। ছোট্ট মেয়েটাকে বুকে আঁকড়েই মন শক্ত করেছিলেন। কানে ভাসছিল স্বামীর শেষ বলা কয়েকটা কথা, “আমি ফিরব, পরিবারের খেয়াল রেখো।”

কর্নেল সাহস ও বীরত্বের প্রতীক

লস্কর কম্যান্ডার হায়দারকে নিকেশ করেই ফিরবেন বলেছিলেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ২১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কর্নেল আশুতোষ শর্মা। কিন্তু পরিণতির কথাও কি আগাম ভেবে রেখেছিলেন কর্নেল! জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ে মুখোমুখি লড়াইয়ের ঝুঁকি অনেকটাই। নেতৃত্ব দেন যে কর্নেল তাঁর দক্ষতা ও সাহসের জোরেই বাকিরা অনুপ্রাণিত হন। রক্ত গরম হয়ে ওঠে। মেজর অনুজ সুদ,  নায়েক রাজেশ, ল্যান্স নায়েক দীনেশ ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সাব-ইনস্পেকটর শাকিল কোয়াজিকে লস্কর জঙ্গিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন কর্নেল আশুতোষ। পণবন্দিদের উদ্ধার করতে হত, বাকি সেনাদের দায়িত্বও ছিল তাঁর। পরিণতি যাই হোক, জঙ্গিদের নিকেশ করাই সেই মুহূর্তে একমাত্র লক্ষ্য ছিল কর্নেলের।

রাতে ফোন করেননি তখন বুঝলাম বিপদ আসতে পারে

শহিদ কর্নেলের স্ত্রী পল্লবী বলেছেন, বিপদ আসতে পারে যে কোনও দিক থেকেই সেটা জানতেন তাঁর স্বামী। তাই হয়ত শেষবার বলেছিলেন, “১৫০০ জনের দায়িত্ব আমার কাঁধে। তাঁদের রক্ষা করতে হবে। আমি জানি তুমি পরিবারের খেয়াল রাখতে পারবে।” মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা পূরণ হবে না কোনওদিন, কিন্তু বীরত্ব আর স্বার্থত্যাগের যে রাস্তা দেখিয়ে গিয়েছেন কর্নেল, তাকেই সম্বল করে বেঁচে থাকার রাস্তা খুঁজে নেওয়া যাবে, বলেছেন পল্লবী।

স্বামীর জন্য গর্ব অনুভব করছেন স্ত্রী 

“উনি জানতেন আমি পরিবারকে সামলাতে পারব তাই নিশ্চিন্তে নিজের কর্তব্যে যেতে পেরেছিলেন। পিছুটান থাকলে দুর্বল হয়ে পড়তেন। কর্তব্যের প্রতি তাঁর এই নিষ্ঠাকে আমি সম্মান করি”, চোখে জল নয় স্বামীর জন্য গর্ব অনুভব করছেন পল্লবী। বলেছেন, সেনার ইউনিফর্মকে শ্রদ্ধা করতেন কর্নেল। সন্ত্রাস দমন করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। সবসময় বলতেন যে জঙ্গিরা দেশে নাশকতা তৈরি করছে, বহু মানুষের প্রাণ নিচ্ছে, তাদের খতম করবেনই। কাশ্মীরের যে কোনও বিপদসঙ্কুল স্থানে, জঙ্গিদমন অভিযানে নেতৃত্ব দিতে তাই কর্নেলেরই ডাক পড়ত। এই সাহস আর বীরত্বের জন্যই দু’বার ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সেনা বীরত্বের অন্যতম বড় সম্মান গ্যালান্ট্রি পেয়েছিলেন কর্নেল আশুতোষ।

মা বললেন ২ দিন আগে কথা হয়েছিল 

কর্নেলের সঙ্গে  দুদিন আগে মায়ের কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল যে আমি      হায়দারে যাব। শহীদ কর্নেল আশুতোষের মা আবেগাপ্লুতভাবে বললেন, আমার জীবন অর্ধেক হয়ে গেছে। আমার একটাই ছেলে বাকি আছে। শেষ কথা ছিল দু’দিন আগে। মা তোমাকে এখানে ডাকবে। আমি এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত আছি। তিনি প্রতিদিন ফোন করতেন। যেখানেই পোস্টিং হয়েছিল।

ফিরবেন বলেছিলেন কর্নেল। কথা রেখেছেন। ফিরছেনও নিজের বাড়িতে। জাতীয় পতাকায় মোড়া তাঁর নিথর দেহটা দেশের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবে নিঃশব্দে। “আমি চাই মেয়ে তার বাবার আদর্শ ও নিষ্ঠাকে মনে রাখুক। নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্যও যে বাঁচতে হয় সেই পথ দেখিয়ে গিয়েছেন কর্নেল”, কান্না নয়, মনকে শক্ত করছেন পল্লবী।

সম্পর্কিত খবর