যানের পাশাপাশি ব্যবহৃত হবে অস্ত্র হিসেবেও! ISRO-র নতুন পরীক্ষা বদলে দেবে যুদ্ধের পুরো প্রক্রিয়া

বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার ফের একটি বড়সড় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ISRO (Indian Space Research Organization)। জানা গিয়েছে, আগামী শনিবার অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি রিইউজেবল লঞ্চ ভেহিকেলের (RLV) ল্যান্ডিং এক্সপেরিমেন্ট সম্পন্ন করতে চলেছে তারা। ইতিমধ্যেই ISRO প্রধান ডাঃ এস সোমনাথ এই তথ্য জানিয়েছেন। মূলত, এটি হল একটি দেশীয় মহাকাশ যান। যেটি অরবিটাল রি-এন্ট্রি ভেহিকেল (ORV) নামেও পরিচিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, অবতরণের আগে এটিকে একটি ছোট রকেট বা হেলিকপ্টার দিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার বা তারও উপরে নিয়ে যাওয়া হবে।

   

তারপরে এটি নিজে নিজেই সেখান থেকে নেমে আসবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবতরণ করবে। এদিকে, এই পরীক্ষা সফল হলে ভারত মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার পাশাপাশি আকাশের নিরাপত্তায় একধাপ এগিয়ে যাবে। কারণ আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনও এই ধরণের প্রযুক্তির সুবিধা নিতে চায় বলে জানা গিয়েছে। মূলত, এই যানের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের যেকোনো উপগ্রহকে উড়িয়ে দেওয়া যায়।

শুধু তাই নয়, এই ধরণের বিমান থেকে ডাইরেক্টেড এনার্জি উইপন (DEW) চালানো যায়। অর্থাৎ, শক্তির রশ্মি পাঠিয়ে শত্রুপক্ষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করা যায়। এমতাবস্থায়, ভারতও এই যানের মাধ্যমে তার শত্রুর এলাকায় এই কাজগুলি করতে পারে। জানা গিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটিকে সফল করার লক্ষ্য নিয়েছে ISRO। এদিকে, এর ফলে বারবার রকেট তৈরির খরচও বাঁচবে। কারণ, মহাকাশে স্যাটেলাইট ছাড়ার পর এটি আবার ফিরে আসবে। অর্থাৎ, সামান্য রক্ষণাবেক্ষণের পরে এটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ফের পাঠানো যেতে পারে। যার ফলে মহাকাশ অভিযানের খরচ অন্তত ১০ গুণ কমে যাবে।

মনে করা হচ্ছে, রিইউজেবল লঞ্চ ভেহিকেলের অত্যাধুনিক এবং পরবর্তী সংস্করণ ভারতীয় মহাকাশচারীদেরও মহাকাশে পাঠাতে পারে। বর্তমানে কেবল আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, চিন এবং জাপান এই ধরণের মহাকাশ যান তৈরি করে। রাশিয়া ১৯৮৯ সালে অনুরূপ একটি শাটল তৈরি করেছিল যা শুধুমাত্র একবার আকাশে উড়েছিল। এমতাবস্থায়, এখন যে স্পেস শাটলটি তৈরি করা হচ্ছে সেটি তার আসল বিন্যাসের চেয়ে প্রায় ৬ গুণ ছোট। সব পরীক্ষা সফল হওয়ার পর এর আসল আকার তৈরি করা হবে।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ২০১৬ সালে রিইউজেবল লঞ্চ ভেহিকেলের পরীক্ষামূলক উড়ান সম্পন্ন হয়েছিল। তারপর সেটি একটি রকেটের উপরে রেখে মহাকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়। মূলত, সেটি একটি হাইপারসনিক ফ্লাইট ছিল। যার গতি ছিল শব্দের গতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়ে এটি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ফিরে আসে। ৬.৫ মিটার দীর্ঘ এই মহাকাশযানের ওজন ছিল ১.৭৫ টন। পরে এটির বঙ্গোপসাগরে অবতরণ করানো হয়।

আপাতত, রিইউজেবল লঞ্চ ভেহিকেল ল্যান্ডিং এক্সপেরিমেন্টে নিজেকে নেভিগেট করবে। অর্থাৎ, সেটি নিজেই উড়বে এবং তারপরে কর্ণাটকের চাল্লাকেরে স্থিত ডিফেন্স রানওয়েতে অবতরণ করবে। মূলত, এই পরীক্ষাটি মহাকাশযানটির এয়ার ডায়নামিক্স বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য যে, এর এয়ারফ্রেমও ISRO প্রস্তুত করেছে। অর্থাৎ, এটি সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে তৈরি।

rlv td landing

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, রিইউজেবল লঞ্চ ভেহিকেল হল একটি দুই ধাপের মহাকাশযান। পাশাপাশি এটি কক্ষপথে যাওয়ার জন্য প্রথম রিইউজেবল উইংড ক্রাফট হিসেবেও বিবেচিত হবে। যার অধীনে একটি রকেট থাকবে যা এটিকে কক্ষপথে নিয়ে যাবে। কক্ষপথে গেলে মহাকাশযানটি স্যাটেলাইটকে মহাকাশে রেখে ফের ফিরে আসবে। এমতাবস্থায়, এটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। যার জেরে শত্রুকে কেবল মহাকাশ থেকেই আক্রমণ করা সম্ভব হবে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর