গরুর চামড়ার ব্যবসা থেকে কোটি টাকার মালিক! তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের বাড়ির খরচ জানেন?

বাংলাহান্ট ডেস্ক: একের পর এক সামনে আসছে তৃণমূল নেতাদের বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ির ছবি। আনারুল হোসেন, ভাদু শেখের পর বাংলার আরও এক ‘বিতর্কিত বাড়া-বাড়ি’ কে ভুললে চলবে না মোটেই। সেটি হল নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের ‘জাহাজ বাড়ি’। এই বাড়ি এতটাই বিতর্কিত যে এককালে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে এটি। তারপর তা নিয়ে মমতার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় সুফিয়ানকে।

একখানি গোটা বাড়ি পুরোটাই তৈরি জাহাজের আদলে। বাড়ি না বলে অট্টালিকা বলাই উচিত। চারতলা বাড়িটির তিন তলায় লাগানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক ছবি। বাকি বাড়ির পুরোটাই ঘেরা ওয়ানওয়ে গ্লাস গিয়ে। এই কাচের মধ্যে দিয়ে ভিতর থেকে বাইরেটা স্পষ্ট দেখা গেলেও বাইরে থেকে ভিতরের কিছুই দেখা সম্ভব নয়। বাড়ির চার তলার অংশটি বানানো হয়েছে জাহাজের ডেকের আকারে। সেখানে রয়েছে মাস্তুলের আকারের দণ্ডও। গোটা বাড়ির একতলা টুকু বাদ দিয়ে বাকি সবটুকুই মোড়া মার্বেলে। বাড়ির এক্কেবারে উপরে লেখা ‘ মাশাআল্লাহ’। এহেন বাড়ির দিকে একপলক দেখেই একজন শিশুও বলে দিতে পারবে যে বাড়িটি বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় কোটির কাছাকাছি।

বছর ছয়েক আগে নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে প্রশাসনিক সভা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সভায় যাওয়ার পথে নন্দীগ্রাম বাজারের অদূরে তৃণমূল নেতা সুফিয়ানের বাড়িতে ঢোকার কথা ছিল তাঁরা। কিন্তু নন্দীগ্রামের মতো দরীদ্র এলাকায় দলের একজন নেতার এমন বিশাল বাড়ি দেখে ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন মমতা। শেষ পর্যন্ত সুফিয়ানের বাড়িতে না ঢুকে সোজা সভায় চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনাকে ঘিরে জলঘোলাও হয়েছিল বিস্তর। কিন্তু সেসব মোটেই গায়ে মাখতে রাজি নন বাড়ির থেকেও বিতর্কিত বাড়ির মালিক সুফিয়ান।

এককালে বাম রাজনীতি থেকে শুরু করে ২০০৩ সালে দেবীশঙ্কর পাণ্ডার হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন সুফিয়ান। ২০০৭ সালে হয়ে ওঠেন নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ। বর্তমানে ২০১৮ সাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতির পদে আসীন তিনি।

Nandi gram,Trinamool leader,Shekh Sufiyan,Jahaj bari,net worth,তৃণমূল নেতা,জাহাজ বাড়ি,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,নন্দীগ্রাম,শেখ সুফিয়ান

সূত্রের খবর, জাহাজ বাড়ির পাশাপাশি একাধিক ট্রলারেরও মালিক তিনি। সেই ট্রলার থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে বানিয়েছেন বাড়ি। এছাড়াও ঠিকাদারি ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। এককালে গোরু এবং গোরুর চামড়া বিক্রি থেকে শুরু করে আজ নন্দীগ্রামের বাঘে গোরুতে জল খায় তাঁর ভয়ে। তাঁর কোনও ব্যাপারে মন্তব্য করার ‘সাহস’ নেই কোনও গ্রামবাসীরই। আপাতত ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় নাম জড়িয়েছে তাঁর। বিধানসভা ভোটের পর স্থানীয় এক মহিলার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। মাথায় ঝুলছে সিবিআই খাঁড়া।

এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রলয় পালের দাবি, ‘এক সময় সিপিএমএর ব্লক সভাপতি ছিলেন সুফিয়ান। সেই সময় সত্তর লক্ষ টাকা চুরির দায়ে সিপিএম ওঁকে বিতারিত করে। সেই সুযোগে সুফিয়ান চোর হিসাবে তৃণমূলে ঢুকে ডাকাত রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। সেই আত্মপ্রকাশের বহিঃপ্রকাশ ওঁর জাহাজ বাড়ি। কোটি-কোটি টাকা চুরি করে এইসব বাড়ি নির্মাণ করেছেন।’
ঘটনার প্রেক্ষিতে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায়নি তৃণমূল কিংবা বিতর্কিত তৃণমূল নেতার কাছ থেকে। যথারীতি ভয়ে কুলুপ এঁটেছেন গ্রামবাসীরাও।

Avatar
Katha Bhattacharyya

সম্পর্কিত খবর