মমতা ব্যানার্জীর পা ধরে ২৫ হাজার ডলার পেলেন বঙ্গ সন্মেলন কমিটি,বাংলার মানুষের কষ্টের সময় কেন পাশে থাকেন না উঠছে প্রশ্ন

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কথায় বলে জীবনে যত বড়োই হওনা কেন, যত সফলই হওনা কেন, নিজের শিকড়কে কোনও দিন ভুলতে নেই।কিন্তু, এটা দুর্ভাগ্যজনক, যে কিছু মানুষ এমনও আছেন, যাঁরা বাংলার জল-আলো-বাতাসের মাঝে বড় হয়েছেন। কিন্তু জীবনে কয়েকটা সাফল্য পেয়েই নির্দ্বিধায় ভুলে গেছেন বাংলাকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলার খারাপ কিছু দেখলেই, তাঁরা জন্মভূমি বাংলাকে অপমান করতে দু’বার ভাবেন না। অপমান করতে ছাড়েন না পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। হ্যাঁ, এরা হলেন সেই সমস্ত প্রবাসী বাঙালি যাঁরা কিছু ডলারের লোভে আমেরিকায় বসে থাকেন। এবং আমেরিকার কোনও এক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে প্রতিনিয়ত বিদ্বেষ পোষণ করে থাকেন বাংলারই বিরুদ্ধে।

Mamata Banerjee,West Bengal

এরা হলেন সেই সব প্রবাসী বাঙালি, যাঁরা বাংলার শিল্পীদের বিদেশ ভ্রমণের লোভ দেখিয়ে কম টাকায় অনুষ্ঠান করান বলে অভিযোগ আর মদের গ্লাস হাতে উদ্দাম নাচতে নাচতে পালন করেন বঙ্গ সন্মেলন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাঁরা ডলারে রোজগার করেন তাদের অবস্থা কি এখন আর্থিক সংকটে জেরবার শ্রীলঙ্কার থেকেও খারাপ? তা না হলে, এবার মাতাল হয়ে নাচার জন্য বঙ্গ সন্মেলন করার টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন ব্যাবসায়ীর কাছে ভিক্ষে কেন চাইছে বঙ্গ সম্মেলনের আয়োজনকারীরা? অবশেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাক্ষিণ্যে এবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আমেরিকার বঙ্গ সন্মেলন।

তবে শোনা যাচ্ছে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজাকে নাকি এবার তুলে ধরা হবে আমেরিকার মাটিতে৷ সূত্রের খবর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৫ হাজার ডলার দান করছে বঙ্গ সন্মেলন আয়োজন করার জন্য। ভারতীয় টাকায় যার মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। যে টাকায় তাঁরা ফুর্তি করতে যাচ্ছেন সেই টাকা বাংলার গরীব মানুষের টাকা। প্রত্যেকটি বাঙালীর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রক্ত জল করে রোজগারের করের টাকা। যারা এতো দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে আমেরিকায় বসে গালাগালি করতো, তাদের ‘মোচ্ছবে’ দান করে সরকার দেখিয়ে দিলো বাংলা কতটা দয়াশীল।

Mamata Banerjee,West Bengal

জানা যাচ্ছে, ‘দেশপ্রেমিক’ প্রবাসী বাঙালিরা এবার বঙ্গ সম্মেলন যাচ্ছে না। সেই লাসভেগাস যার আর এক পরিচিতি লাস্যময়ী শহর হিসাবে। সূত্রের খবর ভারত সরকারের কাছেও নাকি ইতিমধ্যেই মেল করে অনুদান চাওয়া হয়েছে। এর পিছনেও রয়েছে এক ঘৃণ্য মানসিকতা? উঠছে প্রশ্ন। বঙ্গ সন্মেলনে মমতার সরকারের উন্নয়ন স্টলের পাশাপাশি রাখা হতে পারে ভারত সরকারের স্টলও। আমেরিকার মাটিতে কি মমতা-মোদির লড়াই দেখা যাবে? ঠিক যেভাবে প্রাচীন রোমের সম্রাটরা গ্ল্যাডিয়েটর দের সঙ্গে সিংহের লড়াই দেখে আমোদ করতো প্রবাসীরা। আমেরিকার মাটিতে একদিকে চলবে মোদি-মমতার লড়াই, আর অন্য দিকে বাংলার সরকারের অনুদানে টাকায় ঢালাও খানাপিনা ও আনন্দ।

বাংলা থেকে এবার যাঁরা বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন তাঁরা হয়ত একটু বেশি ডলার সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। কারন, এই রকম সুযোগ তো জীবনে বার বার আসে না! টাকা দিলেই নাকি পাওয়া যাচ্ছে বঙ্গ সন্মেলনের স্টল। টাকার কাছে হার মেনে ধূলোয় লুটচ্ছে বঙ্গ সন্মেলন দাবী অনেক প্রবাসী ভারতীয়দের । অভিযোগ উঠছে, আয়োজনকারীরা নিজেদের ট্যাঁক থেকে খরচ না করে বিভিন্ন ‘মুরগী’ ধরে ফুর্তির টাকা হাতানোর ধান্দায় আছে, কিন্তু এটা সত্যি কি না বাংলা হান্টের জানা নেই। এছাড়া, নিজেদের পছন্দের লোককে পিছনের দরজা দিয়ে ভিসা করিয়ে লাসভেগাসে সম্মেলনের নামে ফুর্তি করার সুযোগ করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠছে। এখন প্রশ্ন হলো, বঙ্গ সম্মলনের আয়োজকরা বাংলার দুঃসময়ে কোথায় থাকেন? করোনা মহামারিতে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির পাশে কোনও দিন তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন তাঁরা নিরুদ্দেশ হয়ে যান আয়লা বা আমপানের মতো প্রকৃতির অভিশাপে বিদ্ধস্ত বাংলার পাশ থেকেও। যদি বাংলার দুঃসময়ে তাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তাহলে বাংলায় মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসার ভাগীদার হতেন। পেতেন বাংলা মায়ের আশীর্বাদ। তারা হয়তো কোটি কোটি ডলার রোজগার করতে পারেন, কিন্তু বাংলার যে কোনও বিপদে তাঁরা নির্বাক দর্শকের ভূমিকাই পালন করেন। সেই তাঁরাই, মহামান্য প্রবাসী বাঙালীরা, সমস্ত নাক-লজ্জার মাথা খেয়ে এবার মুখ্যমন্ত্রীর পা ধরে অনুদান ভিক্ষা করছেন বঙ্গ সন্মেলন করার জন্য।

প্রতিবারের মতো এবারও, কলকাতা থেকে বেশ কিছু ‘রঙিন’ মানুষ যাচ্ছেন লাসভেগাসে। তাঁদের কেউ রাজনৈতিক ব্যক্তি, কেউ বা জেল খাটা ‘হাই প্রোফাইল আসামী’। আগামী মাসের ১থেকে ৩ তারিখ বাংলার শিল্পীরা যাবেন প্রবাসীদের বাঙালীদের মনোরঞ্জন করতে, বলা ভালো ফুর্তির খোরাক জোগাতে।

Mamata Banerjee,West Bengal

এবার নাকি বঙ্গসংস্কৃতি আলোকিত হবে লাসভেগাসে, সেই শহর, যার প্রত্যেক কোনায় রয়েছে অবাধ যৌনতার হাতছানি। আর এই যৌনতার অমোঘ আকর্ষনেই এবার সন্মেলনে বাংলা থেকে যোগ দিতে যাচ্ছেন বেশ কিছু পাকা চুলের ‘দাদু’। এদের বয়স হয়েছে, কিন্তু ভীমরতি রয়েছে এখনও ষোল আনা। আর হবে নাই বা কেন, এই ‘পোড়া জীবনে’ অন্তত একবার বিদেশী নারীসঙ্গ পেতে যে তাঁরা লালায়ীত। শরীর ভাঙলেও মনে যে এখনও যৌবনের রস উপচে পড়ছে। তাই লাসভেগাসের বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিয়ে একটু দুষ্টুমি করবেন, তাতে আর দোষের কী? তাই এবার বঙ্গ সন্মেলন করে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে বাঙ্গালি জাতির মান-সম্মান একেবারে যে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেবেন তা বলাই বাহুল্য।

বাংলার শিল্পীরা বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন বঙ্গ সম্মেলনে তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও পান না। এমনকি, শিল্পীদের খাওয়ার খেতে হয় লাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? বিদেশ ভ্রমণের লোভ দেখিয়ে শিল্পীদের রাজী করানো হয় বলে অভিযোগ। তারপর তাঁরা অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন দেশে বলে দাবী।

Mamata Banerjee,West Bengal

বিগত কয়েক বছর ধরে বাঙালি জাতির কিছু প্রবাসী আমেরিকায় গিয়ে বিলিতি মদ পেয়ে এমন গোগ্রাসে গেলেন, যে মাতাল হয়ে পড়ে থাকেন এখানে ওখানে। তাই সেই সমস্ত মাতালদের জন্য এবারে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বেশি মদ খেয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে সাথেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠছে, বাংলার অনেক অভিনেত্রীকেও বিরাট অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে সম্মেলনে হাজির করানো হয় শুধুমাত্র প্রবাসীদের ফুর্তি করার জন্য। এমনকি, মদ খেয়ে মাতাল হয়ে যাতে কেউ বেলেল্লাপনা করে চিৎকার না করেন বা হোটেলে ভাংচুর না করেন সে দিকেও নাকি নজর দেওয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে।

Mamata Banerjee,West Bengal
বঙ্গ সন্মেলনে প্রবাসীরা মদ খেয়ে মাতলামি করবে বাংলার মানুষের করের টাকায়। এর চেয়ে লজ্জার আরকি হতে পারে? অনেক বাঙালি দাবী করেছেন। অনেকেই দাবি করছেন বাংলার দুর্গাপূজা প্রতিটি বাঙালির কাছেই অত্যন্ত আবেগের। সেই দূর্গাপূজাকে আমেরিকার মাটিতে হাইলাইট করার জন্য কেন বাংলার মানুষের করের টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত মানবিক বলেই প্রবাসীরা বাঙালীরা ফুর্তি করার জন্য এই ২৫ হাজার ডলার অনুদান পেয়ে গেলো। এখন দেখার, বাংলার মানুষের জন্য, বাংলার সংষ্কৃতির জন্য, বাংলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তাঁরা কতটা যত্নবান হতে পারেন?

 

Avatar
Udayan Biswas

সম্পর্কিত খবর