বাবা গুমনামী নন তার নাম বিজয়নন্দজি মহারাজ, গুন্ডামী ছবি নিয়ে কোর্টে নেতাজি অনুগামী

বাংলা হান্ট–  সাম্প্রতিক একটি বাংলা সিনেমা কে কেন্দ্র করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন গুমনামি বাবা।

গুমনামী বাবার আরেকটি নাম সকলেরই জানা তা হল ভগবানজী, কিন্তু আরো একটি নাম উঠে এলো ১৯৭২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর গুমনামী বাবা ওরেফে ভগবানজীকে লেখা তৎকালীন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) দ্বিতীয় প্রধান বা সহপ্রধান  মাধব সদাশিব গোলওয়ালকার-এর একটি চিঠির সূত্র ধরে। কে এই রহস্যময় গুমনামী বাবা ? কবে ও কিভাবে প্রকাশ্যে এলো এই সাধুবাবা ? ১৯৮৫ সালের ১৬ ই সেপ্টেম্বর ( ইং16/09/1985) রাত ৯ – ৪০ মিনিট নাগাদ ফৈজাবাদের রাম ভবনে মারা যান গুমনামী বাবা,তারপর হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে ১৮ই সেপ্টম্বর ( ইং18/09/1985) অর্থাৎ প্রায় ৩৬ – ৪৮ ঘন্টা পর ফৈজাবাদের সড়ূজূ নদীর তীরে গুপ্তা ঘাটে দাহ করা হয় গুমনামী বাবা / ভগবানজী কে। অযোধ্যা থেকে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন সাধুবাবার শেষ যাত্রায়, যার মধ্যে ছিলেন শ্রী রাম কিশোর পান্ডে, ডাক্তার রঘুনাথ প্রসাদ মিশ্র, ডাক্তার বীরেন্দ্র রাই, ডাক্তার পি ব্যানার্জি, শ্রী গোপাল কৃষ্ণ শ্রীবাস্তব। ঐ বছরেই অর্থাৎ ১৯৮৫ সালের ২৫শে অক্টোবর ও ৬ই নভেম্বর উত্তর প্রদেশের দুটি স্থানীয় হিন্দি দৈনিক (“নয়া-লোগ” ও “জনমোর্চা”) পত্রিকায় ছাপা একটি খবরের শিরোনাম দেশজুড়ে কম্পন তৈরি করেছিল।

কি ছিল সেই শিরোনাম ?
“ফৈজাবাদে অজ্ঞাতবাসে থাকা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস আর নেই”।
এর পরই হই হই করে নেমে পড়ে জাতীয়স্তরের কিছু সংবাদ মাধ্যম। জন্ম নেয় এক নতুন বিতর্ক।
১৯৫৫ সাল থেকেই এই সাধু বাবাকে দেখা যায় উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৯৭৪ সালে নেমিচ বস্তি অঞ্চল থেকে অযোধ্যায় আসেন তিনি।স্থানীয় রাম কিশোর পান্ডের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ভগবানজী অযোধ্যার “লাখনৌ মাতা’ নামক একটি বাড়ির একটা অংশ ভাড়া নিয়ে থাকতেন ভগবানজী। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ভগবানজী অযোধ্যার এই বাড়ি ছেড়ে চলে যান ব্রহ্মা কুন্ডে সরদার গুরবক্স সিং সোধি নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে। শোনাযায় সরদার সোধীর বাড়িতে বেশি সময় ছিলেন না ভগবানজী। এরপর সেই বাড়ি ছেড়ে ফৈজাবাদ জেলার সরকারি হাসপাতালে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক রঘুনাথ প্রসাদ মিশ্রা সাথে চলে আসেন ফাইজাবাদ জেলায়। সেখানে এই চিকিৎসকের মধ্যস্থতায় ১৯৮২ সালের গোড়ায় ফৈজাবাদ শহরের মূলকেন্দ্রে বসবাসকারী প্রভাবশালী সিংহ পরিবারের মূল বাড়ির বাইরে, ছোট একতলা ৩০০ স্কোয়ার ফুটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন ভগবানজী। কমিশন সূত্রে জানা যায় এই সাধুবাবা, সাধারণ মানুষের সাথে বিশেষ কোন সম্পর্ক রাখতেন না। কেউ ঠিকমতো দেখতে পেতেন না এই সাধুবাবাকে। একান্ত প্রয়োজন হলে কথা বলতেন পর্দার আড়াল থেকে, আবার রাস্তায় বেরোলে মুখ ঢেকে রাখতেন সাদা চাদর দিয়ে। অতি উৎসাহী মানুষজন তার নাম জিজ্ঞাসা করলে, বাবা বলতেন তিনি বহুদিন আগেই মৃত। তার কোনো নাম নেই। কখনো বলতেন আমার নাম মহাকাল বা মহাভূত, আবার কখনো বা বলতেন আমি মৃত-ভূত ,তাই সাধারণ মানুষ তাকে গুমনামি বাবা বলেই ডাকতেন।
১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ তিন বছর গুমনামী বাবা ছিলেন রাম ভবনের এই ছোট্ট ঘরটিতেই। তার মৃত্যুর পর সিংহ পরিবারের অন্যতম সদস্য শক্তি সিংহ প্রকাশ্যে আনেন অজ্ঞাতবাসে থাকা গুমনামী বাবার কাহিনী। তিনি দাবি করেন গুমনামী বাবাই ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। শক্তি সিংহ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন তিনি কখনো সাধু বাবার মুখ ভালো করে দেখেননি। কারণ সাধুবাবা কাউকে মুখ দেখাতে চাইতেন না। কথা বলার বিশেষ প্রয়োজন হলে বাবা জানালার পর্দার আড়াল থেকে কথা বলতেন।

তিনি আরো জানান মাত্র তিন জন মানুষ সাধু বাবার কাছে যাবার অনুমতি পেয়েছিল‌, তারা হলেন কোলকাতার ৫১৭ দমদম পার্কের বাসিন্দা ডাক্তার অভিত্র মোহন রায় , ফৈজাবাদের ডাক্তার রঘুনাথ প্রসাদ মিশ্রা ও ডাক্তার পি ,ব্যানার্জি । শক্তি সিংহ আরো জানান সাধু বাবা নাকি রোলেক্স ঘড়ি পছন্দ করতেন, ৫৫৫ নাম্বারের সিগারেট খেতে, মটন কিমা এবং বাঙালি শুক্তো খেতে খুব পছন্দ করতেন। তার কথা অনুযায়ী ১৯৮৫ সালের ১৬ ই সেপটেম্বর গুমনামি বাবার মৃত্যুর পর ফৈজাবাদের সিংহ পরিবার যোগাযোগ করেছিল বোস পরিবারের সদস্যদের সাথে। নেতাজির ভাইজী অর্থাৎ নেতাজীর দাদা সুরেশ চন্দ্র বসুর কন্যা ললিতা বসু ১৯৮৬ সালের প্রথম দিকে যান ফৈজাবাদের রাম ভবনের সেই ৩০০ স্কোয়ার ফুটের ছোট্ট ঘরটিতে। সেখানে গিয়ে ঘরের ভিতরে থাকা গুমনামি বাবা বা ভগবানজীর ব্যবহৃত সামগ্রী দেখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে ছিলেন। সমস্ত জিনিসপত্র দেখে তিনি বলেছিলেন এসব আমার রাঙ্গা কাকুর অর্থাৎ নেতাজির। এর পর ললিতা বসু ফৈজাবাদের জেলা আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন যার নাম্বার হল ৯২৯ (M/B) ১৯৮৬। যেখানে তিনি বলেন তিনি অভিভূত হয়েছেন ভগবানজির ব্যবহৃত সামগ্রী দেখে এবং অনুপ্রাণিত হয়েছেন উত্তর পূর্ব ভারতের একটি দৈনিকে ধারাবাহিক ভাবে 17 বার প্রকাশিত হওয়া একটি খবরের ভিত্তিতে যার শিরোনাম ছিল “The Man of Mistry” । যা প্রকাশিত হয় ভগবানজীর মৃত্যুর পর সময়টা ছিলো ২০-১২-১৯৮৫ থেকে ২৩-০১-১৯৮৬ সাল। তিনি আদালতে আবেদন জানান গুমনামী বাবার ব্যবহৃত সামগ্রী সরকারি উদ্যোগে সংগ্রহ করা হোক এবং তা সযত্নে রাখা হোক এছারাও বাবার আসল পরিচয় কি তাও তিনি জানতে চান আদালতে। ১০-০২-১৯৮৬ তারিখে ফৈজাবাদ জেলা আদালতের নির্দেশে ফৈজাবাদের রাম ভবনের ৩০০ স্কোয়ার ফুটের ছোট্ট ঘর থেকে সাধু বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রায় ২৪টি ট্রাঙ্ক ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয় ফৈজাবাদের জেলা ট্রেজারিতে।


1999 সালে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য সমাধানে গঠিত হয় মুখার্জী কমিশন। বিচারপতি মনোজ মুখার্জীর নেতৃত্বে কাজ শুরু করে এই কমিশন। আদালতের নির্দেশে ফাইজাবাদ জেলার ট্রেজারী অফিসাররা মুখার্জী কমিশন সামনে আনে ওই ২৪টি টিনের বাক্স, একে একে খোলা হয় সবকটি বাক্স। সাধুবাবার ব্যবহৃত ২০০০ টি সামগ্রীর মধ্যে ৮৭০ টি সামগ্রী পরীক্ষা করে মুখার্জী কমিশন। যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছিল 1) নেতাজীর পিতা ও মাতার একটি বাঁধানো ছবি, 2) দুটি পারিবারিক ছবি, 3) ধূমপানের তিনটি পাইপ, 4) জার্মানি ও ইতালির সিগার, 5) গোল চশমা, 6) জার্মানির তৈরি দুটি বাইনোকুলার, 7) রোলেক্স আয়েস্টার পার্পেচুয়াল হাতঘড়ি, 8) পোর্টেবল বেলজিয়াম টাইপরাইটার, 9) একটি রেডিও,
10) ৬৭তম জন্মবার্ষিকীতে ভারত সরকার দ্বারা প্রকাশিত দুটি ডাকটিকিট।
11) কিছু আন্তর্জাতিক ও জাতীয় রাজনীতি সংক্রান্ত বই, যার মধ্যে ছিল “হিমালয় ব্লাডার” নামক একটি বইয়ের কপি, বইটির একাধিক পাতায় বিভিন্ন নোট লেখা ছিলো, কোথাও IMP (Important) আবার কোথাও MIMP (Most Important)
12) সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী মূলক কিছু বই,
13) আজাদহিন্দ ফৌজে পরিচিতদের তালিকা, 14) হাতে আঁকা কিছু মানচিত্র, যার মধ্যে সাইবেরিয়ার মানচিত্রটি উল্লেখযোগ্য।
15) ছিল বেশ কিছু বই যা অজানা এক বোনের কাছ থেকে পাওয়া উপহার হিসেবে লেখা ছিল।
16) পাওয়া যায় স্বাধীনতার আগে ও পরে প্রকাশিত বেশকিছু সংবাদ পত্র।
17) ছিলো ১৯৭৮ সালে ১৩ই মার্চ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সমর গুহের একটি লেখা, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে “নেতাজি তখনও বেঁচে আছেন এবং তিনি রাশিয়ায় চলে গেছেন”।
18) পাওয়া যায় শতাধিক আন্তর্দেশীয় চিঠি ও টেলিগ্রাম, যার বেশিরভাগ প্রেরক ও প্রাপকের নাম ছিল INA অর্থাৎ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির গোয়েন্দা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক ডঃ পবিত্রমোহন রায়ের নামে।
19) ১৯৮৫ সালের ৩১শে মার্চ কলকাতা থেকে আসা ডক্টর পি, এম, রায়ের একটি টেলিগ্রাম যেখানে লেখা ছিল বাসন্তী-দূর্গা পূজার দিন আমার প্রণাম গ্রহণ করবেন।

গুমনামী বাবার ব্যবহৃত এই সমস্ত জিনিস পত্রের মধ্যে থেকে পাওয়া যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ১৯৭২ সালে ১৬ই সেপ্টেম্বর গুমনামী বাবাকে লেখা তৎকালীন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দ্বিতীয় প্রধান মাধব সদাশিব গোলওয়ালকার এর একটি চিঠি ।যা বাবার গুমনামী হওয়ার রহস্য ভেদে সাহায্য করতে পারত। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে এই চিঠি বিশেষ একটা গুরুত্ব পায়নি সংবাদমাধ্যমের কাছে।
কি লেখা ছিল সেই চিঠিতে ? চিঠির শুরুতেই গোলওয়ালকারজি গুমনামী বাবা কে সম্বোধন করে লেখেন” পরম্ পূজ্যপাদ বিজয়ানন্দজী মহারাজ। তিনি আরো লিখেন আপনার ২৫ শে আগস্ট থেকে ২ রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেখা চিঠি আমি ৬ ই সেপ্টেম্বরে পেয়েছি। আমি আপনার বলা তিনটি জায়গা সম্পর্কে খোঁজ নেবো, এর মধ্যে যেকোন একটি জায়গার কথা আপনি যদি বিশেষভাবে উল্লেখ করতেন তাহলে আমার পক্ষে কাজটা করতে সুবিধে হতো। চিঠি শেষের দিকে তিনি আরো লেখেন আমি আগামী ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসে থাকবো, এই সময়ের মাঝে তিন দিনের জন্য আমি নাগপুরে অবস্থান করবো। ”
গুমনামি বাবা অথবা ভগবানজী বা বিজয়ানন্দজী মহারাজের জিনিসপত্র থেকে পাওয়া যায় হাতে আঁকা একটি বাংলা ম্যাপ, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে দশ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত শেখরনগর গ্রাম, রয়েছে ইচ্ছামতী নদীর দক্ষিণে পদ্মা এবং পূর্বে ধলেশ্বরী নদী। ম্যাপে আবার এক জায়গায় চিহ্নিত করা আছে আমাদের বাড়ি বলে। তার দক্ষিণ দিকে রায়বাড়ি, আরও কিছুটা এগিয়ে শেখরনগর হাইস্কুল, কালীবাড়ী, পদ্মার দিকে চলতে থাকলে পাওয়া যাবে আয়রল বিল, ইচ্ছামতী ও ধলেশ্বরীর মধ্যবর্তী অংশে দেখা যাচ্ছে ষোলো ঘর গ্রাম, পদ্মার পূর্বে গেলে চাঁদপুর, পশ্চিমে গোয়ালন্দপুর। যদিও হাতে আঁকা সাইবেরিয়ার ম্যাপ, এশিয়ার ম্যাপ, নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যে উৎসাহ ছিল তার সিকি ভাগও উৎসাহ দেখা যায়নি বাংলা ম্যাপ নিয়ে। এমনকি আগ্রহ নেই গুমনামী বাবাকে নেতাজী বানানোর বাণিজ্যিক প্রচেষ্টায় ব্যস্ত থাকা মাননীয়দের। এছাড়াও পাওয়া যায় শাহনাজ কমিটি ও খোসলা কমিশনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট।
প্রসঙ্গ অনুসারে বলতে হয় গুমনামী বাবার দাঁতের সাথে পরিবারের এক সদস্যের রক্তের নমুনা নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করেছিল মুখার্জি কমিশন, এই ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে জমা করেছিল কমিশন। যদিও ডিএনএ পরীক্ষায় গুমনামী বাবার সাথে বোস পরিবারের DNA এর কোন মিল পাওয়া যায়নি বলে জানায় মুখার্জি কমিশন। অতিসম্প্রতি কলকাতার একজন নেতাজি প্রেমী তথ্য জানার অধিকার আইনের মাধ্যমে ভারতবর্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে জানতে চান গুমনামী বাবা, সুভাষচন্দ্র বোস কিনা ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাকে জানিয়েছিল গুমনামী বাবা অথবা ভগবানজীর কিছু তথ্য মুখার্জি কমিশনের রিপোর্টের ১১৪ – ১২২ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী “গুমনামী বাবা বা ভগবানজী কখনোই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেননা।”

এরপর 2010 সালে “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস রাষ্ট্রীয় বিচার মঞ্চ” বলে একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে শক্তি সিংহ গুমনামী বাবার পরিচয় নিশ্চিত করতে এলাহাবাদ আদালতে জনস্বার্থে একটি আবেদন করেন। (১০৮৭৭ / ২০১০,) যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে উত্তরপ্রদেশ সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিষ্ণু সহায় এর নেতৃত্বে গঠন করেন সহায় কমিশন। তদন্ত শেষ করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নায়েকের কাছে ৩২৪ পাতার প্রতিবেদন জমা দেন বিষ্ণু সহায় কমিশন। গুমনামী বাবা আর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু একই মানুষ কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি গুমনামী বাবার রহস্য ভেদের জন্য তৈরি হওয়া বিচারপতি বিষ্ণু সহায় কমিশন।
এই ব্যাপারে নিশ্চিত নয় বলে তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে সহায় কমিশন।

প্রশ্ন হল :-
তাহলে প্রশ্নটা হল যখন মুখার্জি কমিশন ও সহায় কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষত ডিএনএ পরীক্ষার পর তথাকথিত গুমনামীবাবা আর যেই হোক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নয় বলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়ার পরেও গুমনামি বাবা নামক সিনেমার মধ্যে দিয়ে নেতাজী সাজাবার চেষ্টা করা হচ্ছে কেন ?

রাষ্টীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দ্বিতীয় প্রধান সংঘের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাধব সদাশিব গোলওয়ালকারজী তার লেখা চিঠিতে সাধু বাবাকে যখন শ্রী বিজয়ানন্দজী মহারাজ বলে সম্বোধন করেছিলেন তাহলে সাধু বাবাকে গুমনামী বলা হচ্ছে কেন?

প্রশ্ন হল যে সাধু বাবা ১৯৫৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৭ বছর উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামচে বস্তি, অযোধ্যার লখনউ মাতা ভবন।, অথবা ব্রহ্মা-কুন্ড, অঞ্চলের একজন সাধারণ মানুষ তাকে চিনতে পারলো না ?

# রাম ভবনের মালিক শক্তি সিংহ সহ যারা জানতেন গুমনামী বাবাই হলেন ভারত মায়ের বীর সন্তান নেতাজী, তাহলে গুমনামী বাবার মৃত্যুর পর বাবার দেহ সৎকার করা হয়েছিল প্রায় ৩৬ – ৪৮ ঘন্টা পর। তাঁর দেহ, দাহ করার আগে দেশের সংবাদমাধ্যমকে ডেকে দেশবাসীকে এটা জানানো হলো না কেন ?

গুমনামী বাবা অন্য INA সদস্য সহ একাধিক মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখলেও উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে, বসবাসকারী তার গাড়িচালক আজাদহিন্দ ফৌজের অন্যতম এই সদস্য ক্যাপ্টেন নিজামুদ্দীন 2017 সাল পর্যন্ত জীবিত থাকলেও তার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি কেন ?

গুমনামি বাবা মারা যাওয়ার পর রাম কিশোর পান্ডে, সরদার গুরুবক্স সিং সোধি, ডাক্তার রঘুনাথ প্রসাদ মিশ্রা, ডাক্তার পবিত্র মোহন রায় ও ডাক্তার পি ব্যানার্জিরা এই নামহীন বাবাকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু পাইয়ে দিতে আদালতের দ্বারস্থ হলেন না কেন ?

যে সকল সামগ্রী ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি অর্থাৎ INA এর একজন সাধারণ সৈনিকের পরিবারের কাছেই পাওয়া যেতে পারে। সেই সব সামগ্রী দেখিয়ে গুমনামি বাবা কে নেতাজী বলার চেষ্টা করা হচ্ছে কেন ?

যিনি একটি অস্থায়ী স্বাধীন আজাদ-হিন্দ সরকার গঠন করেছিলেন, যার বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রনেতা সখ্যতা ছিল।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যিনি দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি যদি গুমনামি বাবাই হবেন তাহলে তার কাছ থেকে আজাদ হিন্দ সরকারের কোন সামগ্রী বা দস্তাবেজ পাওয়া গেল না কেন ?
১৯৪১ সালের ১৭ই জানুয়ারি মহানিষ্ক্রমনে যাওয়ার সময় মায়ের দেওয়া একটি রোলেক্স ঘড়ী ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের দেওয়া একটি সোনার পেন ছাড়া আর কিছুই সাথে নিয়ে যাননি নেতাজী, তাহলে এতসব সামগ্রী দেখে রাঙা কাকু জিনিস বলে কিভাবে দাবি করেছিলেন ললিতা বসু ?

গুমনামী বাবা সিনেমায়র পরিচালক সৃজিত মুখার্জি বলেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ঘিরে যেকটি ঘটনা পেয়েছি তাই আমার সিনেমায় তুলে ধরেছি।
তাহলে সৃজিত কি জানেন না শৌলমারী বাবার ঘটনা ?
নকি নেতাজীর বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র ?
১৯৬২ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি অর্থাৎ INA ছর মেজর জেনারেল ভুষণ গুপ্ত উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার শৌলমারী আশ্রমের সাধু সারদানন্দজী মহারাজ কে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলে ঘোষণা করেছিলেন । কিন্তু পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করে জানতে পারেন সারদানন্দজী মহারাজ নেতাজী নন।তার প্রকৃত নাম কে,কে,ভান্ডারী। শৌলমারীর বাবার উল্লেখ আছে গোপন ফাইলে ও মূখার্জী কমিশনের রিপোর্টে তাহলে এই অংশ কেন রাখা হবেনা সৃজিতের সিনেমায় ?

নেতাজী রাশিয়ায় ছিলেন
18th আগষ্ট 1945 এর পর রাশিয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমে ওমাস্ক ওমসকে ১৯৬৮ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বিপ্লবী বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে নিখিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে ছিলো বলে দাবি নিখিলের। এই ঘটনা ১৯৪৫ সালের নেতাজীর কথিত বিমান দুর্ঘটনার ২৩ বছর পর। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জি ডি বক্সী তার লেখা একটি বইতে “বোস ইস দা ইন্ডিয়ান সামুরাই” -তে বলেছেন নেতাজি রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। কিছু গবেষক বলেন রাশিয়ার একটি গুলাগে বন্দী ক্যাম্পে ছিলেন সেখানেই মৃত্যু হয়েছিল নেতাজীর।

****সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা এই সংকলন পৃথ্বীশ দাশগুপ্ত***

Avatar
Udayan Biswas

সম্পর্কিত খবর