বিস্মৃতপ্রায় মল্লভূমির ইতিহাস নিয়ে দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘ডাকাত রাজা’

সৌতিক চক্রবর্তী,banglahunt:- বাঁকুড়া জেলার মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর এখনকার বাঙালিদের কাছে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় সপ্তাহান্তের ছুটি কাটানোর ভ্রমণস্থান। শীতের আমেজে অনেকেই ঘুরে এসেছেন বিষ্ণুপুরের লালমাটির রাস্তায়, রাসমঞ্চে, গড়দরজায়। এখানকার প্রতিটি মন্দিরে অসাধারণ টেরাকোটার কাজ দেখতে সারা বিশ্বের প্রচুর পর্যটক ছুটে আসেন।

ছবিঃ এই সেই বই।

কিন্তু ক’জন বাঙালি জানেন এই মন্দিরগুলির স্রষ্টাদের সম্পর্কে? ক’জন জানেন শৌর্যে বীর্যে অতুলনীয় মল্ল রাজবংশের ইতিহাস? প্রায় এক হাজার বছর ধরে রাজত্ব করা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ এই রাজবংশটি, প্রাচীন মল্লভূমির চালচিত্র, সামাজিক গাথা বাংলা সাহিত্য তথা বাংলার ইতিহাসে বড়ই উপেক্ষিত বিষয়।

কিন্তু এই মল্লভূমি নিয়েই বিশিষ্ট সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায় লিখতে চলেছেন তাঁর সুদীর্ঘ গবেষণাধর্মী উপন্যাস ‘ডাকাত রাজা’। ষোড়শ শতকের বাংলায় রাজত্ব করা এক অসাধারণ মল্লরাজার শাসনকালের প্রেক্ষিতে লেখা এই উপন্যাসে ধরা পড়বে তৎকালীন বাংলার সামাজিক অবস্থান।

 

দেবারতি মুখোপাধ্যায় খুব অল্পসময়েই বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসেবে উত্থিত হয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয়তাও দিনদিন ক্রমবর্ধমান। তাঁর প্রতিটি লেখায় থাকে পরিশ্রমের ছাপ এবং অভিনব বিষয়বৈচিত্র্যের ছোঁয়া।

এই উপন্যাসও তার ব্যতিক্রম হবেনা বলেই আশা করা যায়।

ছবিঃ লেখিকা দেবারতি মুখোপাধ্যায়।

দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মল্লরাজবংশ আমার কাছে বহুদিনের একটি আগ্রহচর্চার বিষয়। মল্লভূম বলতে তখন বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, কিছুটা মুর্শিদাবাদ আর বিহারের ছোটনাগপুরের অঞ্চলের কিছুটা বোঝাত। মল্লভূমের শাসকরা একাধারে যেমন প্রজাবৎসল ছিলেন, তেমনই বীর। ইন্তু সঠিক ডকুমেন্টেশনের অভাবে তাঁদের সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়না। মল্লভূম নিয়ে পড়াশোনার সময় আমি বারেবারে বিষ্ণুপুর গিয়েছি। আমাকে সাহায্য করেছেন বিষ্ণুপুরের অধিবাসী তথা বিখ্যাত শিল্পী শ্রদ্ধেয় গৌতম কর্মকার, বিষ্ণুপুর রাজবংশের বর্তমান উত্তরাধিকারী অধ্যাপক শ্রী জ্যোতিপ্রকাশ সিংহ ঠাকুর এবং আরো অনেকে। বিষ্ণুপুরে অবস্থিত আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবনে সংরক্ষিত পুরনো অনেক পুঁথিও আমার খুব কাজে এসেছে। তবে, ডাকাতরাজা ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস। গল্পের প্রয়োজনে নানাস্থানে কল্পনার আশ্রয়ও আমাকে নিতে হয়েছে। সৃষ্টি করতে হয়েছে কাল্পনিক অনেক চরিত্র। সমান্তরালে রয়েছেন বারো ভুঁইয়া, প্রতাপাদিত্য, কালাপাহাড়, শ্রীচৈতন্যদেবের মত ঐতিহাসিক চরিত্ররা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাহিত্যিক মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাস প্রকাশ করবেন তাঁর নিজস্ব ব্লগে, যাতে কোন বাধা ছাড়াই যে কোন পাঠক এটি পড়তে পারেন। একটি বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাসকে নিঃশর্তভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরার জন্যই তাঁর এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত।

উপন্যাসটির প্রতিটি কিস্তিতে অলঙ্করণ করবেন শিল্পী গৌতম কর্মকার, পরবর্তীকালে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হবে বুক ফার্ম এর তরফে।

‘ডাকাত রাজা’ প্রতিমাসের ১ এবং ১৫ তারিখে পড়া যাবে এখানে : www.authordebarati.com

সম্পর্কিত খবর