NRC: দিলীপ বনাম মমতা, প্রাণ হারাচ্ছে জনতা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিগত বেশ কিছুদিন ধরে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বাংলায়। যার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক ও অদ্বিতীয় কারণ এনআরসি। অসমে নাগরিক পঞ্জিকা লাগু হওয়ার পর থেকেই এই চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি, যার জেরে রাজ্যের বহু রাজনৈতিক নেতা নেত্রী জড়িয়েছে বিবাদে। এদের মধ্যে অন্যতম বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহুদিন ধরে বহু দুতরফা কথা শুনে এসেছি আমরা, একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলছেন যে ‘বাংলায় NRC হবে না’, অন্যদিকে আবার দিলীপ ঘোষ বলছেন ‘বাংলায় NRC হওয়া আটকানো মুখ্যমন্ত্রীরও সাধ্য নেই’। এরকম একটা প্রশ্নবোধক পরিস্থিতির মাঝে ফেঁসেছে সাধারণ মানুষ, এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী পুরুষ নারী নির্বিশেষে বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার রাস্তা, তার কারণ ভয়, এনআরসি লাগু হওয়ার ভয়।

সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী কে রাজ্যে দেউচা পাঁচামি কয়লাখনির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আলোচনা পর্ব চলার পর মমতা বেরিয়ে এসে বলেছিলেন, “NRC অসমের বিষয়।”

দিল্লি সফরে গিয়ে শুধু প্রধানমন্ত্রী নয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে কোনরকম কথা হয়নি বৈঠকে। অসমে ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন। তাঁদের  মধ্যে রয়েছেন বাংলা, হিন্দিভাষী ও গোর্খারা। ভারতীয়দের যেন সুযোগ দেওয়া হয়।”

শুধু তাই নয় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ”এনআরসি-র জন্য বলতে গেলাম। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে পড়ে। তাই বলে এলাম দিল্লি গিয়ে।”  অন্যদিকে বাংলায় ভোটার তালিকায় নাম তোলা ও ডিজিটাল রেশন কার্ড নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে সর্বত্র। এই প্রসঙ্গে সকলকে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা যে যে যে বাংলায় কোনওভাবেই এনআরসি চালু হবে না।

কিন্তু অন্যদিকে অতিসম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফর শেষে করে মালদা থেকে কলকাতা ফেরার পথে সংবাদমাধ্যমের সামনে পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপ বাবুকে NRC নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “TMC-র এখন ভোটে টান পড়েছে । তাই রাস্তায় নেমে ভয় দেখানো শুরু করেছে তারা। এতদিন মুসলমানদের ভয় দেখাচ্ছিল, এখন হিন্দুদের ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু বিজেপি নিজের বক্তব্য থেকে সরবে না আগেও আমরা যা বলেছি এখনও তাই বলব। কোনও হিন্দু উদ্বাস্তুকে ভারত থেকে কেউ তাড়াতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের এখানে থাকতে দেওয়া হবে না।”

এদিন দিলীপ আরও বলেন, “যদি মমতা ব্যানার্জি নিজে রাস্তায় নামেন, তাও তিনি এটা আটকাতে পারবেন না। যেভাবে তিনি নোটবাতিল, GST, তিন তালাক বিল, 370 আটকাতে পারেননি, সেভাবেই NRC হলেও আটকাতে পারবেন না। এখন কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনায় দু’লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই টাকা পাওয়ার জন্য যে’ই মরছে, বলে দিচ্ছে NRC । বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মঘাতী হলেও বলে দেওয়া হচ্ছে NRC। পাগল কুয়োয় লাফ দিলেও হয়ে যাচ্ছে NRC।”

শুধু মমতা ব্যানার্জি কিংবা দিলীপ ঘোষ নয়। আসলে এই সমস্যার মূল সূত্রপাত রাজ্য বিজেপি বনাম রাজ্য তৃণমূল। একাধারে বিজেপি নেতারা বলেই চলেছেন খুব শিগগিরই বাংলায় চালু হবে এনআরসি, আবার অন্যদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি রাজ্যবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন, ‘এনআরসি নিয়ে গুজব রটানো হচ্ছে এতে কান দেবেন না বাংলায় এই NRC লাগু হবে না।’

কিন্তু এই সমস্ত হঠকারিতার মাঝে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে সাধারণ পশ্চিমবাংলাবাসী। যার এক অদ্বিতীয় কারণ বর্তমানে NRC। রাজ্য জুড়ে চলছে NRC আতঙ্ক। এর প্রভাবে অনেকেই মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। রাজ্যে ইতিমধ্যেই সাত জনের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অপপ্রচারে নিজেদের মূল্যবান জীবন নষ্ট করবেন না।’ মঙ্গলবার ফের একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, ‘বাংলায় কোনও NRC হবে না। কোনও মানুষকে বাংলা থেকে কেউ তাড়িয়ে দিতে পারবে না।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মভিটে বীরসিংহ গ্রামের সভা থেকে রাজ্যের মানুষকে আশ্বাস দিলেন। সামনেই বিদ্যাসাগরের দুশো’তম জন্মদিবস, এই উপলক্ষে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নিয়েছে। সেই অনুষ্ঠানের সূচনা করতে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

NRC-র ইস্যুতে কেন্দ্রীয় শাসকদলকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার মাটিকে ভয় দেখানো যায় না। জব্দ করা যায় না।’ ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা NPR নিয়েও আতঙ্কিত হতে মানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, ‘প্রতি ১০ বছরই জনগণনা হয়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ এবার দেখার বিষয় আগামীদিনে সাধারণ মানুষ এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, নাকি সুদিনের আশায় অপেক্ষা করে ধৈর্য রাখেন কবে শান্তি আসবে!।

Avatar
Admin

Krishna Chandra Garain, BIET alum, blends mechanical ingenuity with literary finesse. An adept in technical and business content, his words breathe life into concepts. With a background in mechanical engineering, he navigates complexities effortlessly, crafting narratives that enlighten and inspire. A virtuoso of words, Krishna transforms ideas into captivating realities.

সম্পর্কিত খবর