বাংলাহান্ট ডেস্ক : ১৯৪৭ সালে ভারত (India) স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে জন্ম হয় দুই দেশের। একদিকে ভারত, অন্যদিকে, মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশ পাকিস্তান (Pakistan)। এই দুই দেশের জন্মের পর থেকে দেখা যায় পরস্পর বিরোধী তিক্ততা। আজও পৃথিবীর কাছে এই দুই দেশ একে অপরের শত্রু দেশ হিসেবেই পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে যত সময় এগিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা আরও দীর্ঘায়ীত হয়েছে। পৃথিবীর মানচিত্রে পাকিস্তানের প্রধান শত্রু দেশ হিসেবে উঠে আসে ভারতের নাম। তবে ভারত ছাড়াও আরো এক দেশ রয়েছে যাদের সাথে পাকিস্তানের আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক।
আমরা কথা বলছি আফগানিস্তানকে (Afghanistan) নিয়ে। ভারতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই দেশটি ভারতের সাথে মাত্র ১০৬ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সীমানা রয়েছে আফগানিস্তানের। ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমানা। এর বিস্তৃতি প্রায় ২ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এই সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে পাকিস্তানের বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ। দুই দেশের সীমান্তকে নিয়েই প্রধান দ্বন্দ্ব এই দুই মুসলিম প্রধান দেশের। এই সীমান্তের কারণেই বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্কে তিক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে একমাত্র আফগানিস্তান বিরোধিতা করেছিল। সেই থেকে শুরু এই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব। পাশতুন সম্প্রদায়ের লোকেরা বাস করে আফগান সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। আফগান সরকার কখনই এই দুই জায়গায় পাকিস্তান সরকারের অধিকার মেনে নেয়নি। আফগানদের দাবি, ‘ডুরান্ড লাইন’ এর কারণে অন্যায় ভাবে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই দুই প্রদেশ। ব্রিটিশ সরকারের রাজত্বকালে আফগানিস্তান এবং ব্রিটিশ ভারতের মাঝে এই ‘ডুরান্ড লাইন’ কাটা হয় ১৮৯৩ সালে।
এই সীমারেখা নির্ধারিত হয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ও আফগান সরকারের চুক্তির ভিত্তিতে।
১৮৯৩ সালে আফগান সম্রাট আব্দুর রহমান খানের সাথে ব্রিটিশদের চুক্তির ফলে ব্রিটিশ কূটনৈতিক মর্টিমার ডুরান্ডের নামে এই সীমারেখা নামকরণ হয়। ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলে আফগানরা সেই সময় এই চুক্তি করতে বাধ্য হয়। তাই ব্রিটিশ রাজ শেষ হওয়ার পর থেকে এই লাইন নিয়ে বরাবর পাকিস্তানের সাথে সংঘর্ষে গিয়েছে আফগানিস্তান। পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের প্রবেশ থেকে শুরু করে জল বন্টন সমস্যা, একাধিক কারণ নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে নানবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে ‘ডুরান্ড লাইন’কে কেন্দ্র করে।
এছাড়াও ভারতের সাথে আফগানিস্তানের সুসম্পর্ক কখনই ভালো চোখে দেখেনি পাকিস্তান। অন্যদিকে স্বাধীন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে পাকিস্তানে যে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয় তাকে সমর্থন করেছিল আফগানিস্তান। এই বিষয়টিও পাকিস্তান ভালোভাবে নেয়নি। পাকিস্তান বারবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। পাল্টা আফগান সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলেছে বিশ্বমঞ্চে। এমনকি পূর্বতন আফগান সরকার অভিযোগ করেছিল পাকিস্তানের মদতেই আফগানিস্তানে তালিবানদের রমরমা বেড়ে চলেছে।