‘তোর মা-বাবাও একদিন এভাবেই মরবে’, রোগীর পরিবারের অভিশাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত চিকিৎসক

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ‘দয়া করে কোন আপনজনকে চিকিৎসক বানাবেন না, ডাক্তারি পড়ে মস্ত বড় ভুল করেছি’, এমনই কথা শোনা গেল খোদ এক চিকিৎসকের (Doctor) গলায়। গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা আবহে রোগীর সেবা করার পর, কোন মানসিকতায় মনের মধ্যে কতোটা দুঃখ, কষ্ট এবং ক্ষোভের জন্ম নিলে, একজন ডাক্তার এমনটা বলতে পারে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে (Burdwan Medical College) কর্মরত রয়েছেন চিকিৎসক কঙ্কন দাস। সারি এবং কোভিড পজিটিভ ওয়ার্ডে কাজ করছিলেন তিনি। কাজ সেখানেই সোমবার সকালে এক রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে দেখতে যান চিকিৎসক কঙ্কন দাস। বিপি, সিবিজি, হৃদস্পন্দন সবকিছু পরীক্ষা করে রোগীর পরিবারকে জানান, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ছাড়া রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়’।

চিকিৎসকের পরামর্শ মত একটা  রিস্ক কনসেন্টও স্বাক্ষর করে দেয় রোগীর পরিবারের লোকজনেরা। এরপর ওয়ার্ডের বয়কে COVID CCU রেফার লিখে দ্রুত রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তির নির্দেশ দেন চিকিৎসক। কিন্তু ওয়ার্ড বয় চিকিৎসকের লেখা সেই কাগজ নিয়ে ফিরতে না ফিরতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রোগী। আর এরপরই শুরু হয় চিকিৎসক এবং হাসপাতালের উপর ক্ষোভ প্রদর্শন।

চিকিৎসকের উপর চড়াও হয়ে ওয়ার্ডের দরজা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে বেশ কয়েকজন। এরপর পুলিশ এবং হাসপাতাল সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রোগীর পরিবারকে বুঝিয়ে শান্ত করলেও, ততক্ষণে চিকিৎসক কঙ্কন দাস কিছুটা ভেঙে পড়েন। কারণ রোগীর পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ দিয়ে বলেন, ‘দেখবি তোর মা-বাবাও একদিন এভাবেই মরবে’।

রোগীর পরিবারের থেকে এমন অভিশাপ শোনার পর মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েন চিকিৎসক কঙ্কন দাস। দুঃখের সহিত তিনি জানান, ‘ডাক্তারি পড়ে মস্ত বড় ভুল করেছি। দয়া করে কোন আপনজনকে চিকিৎসক বানাবেন না। ডাক্তারিটা আমাদের মত দেশে কখনই একটা সুস্থ স্বাভাবিক পেশা হতে পারে না’।

Avatar
Smita Hari

সম্পর্কিত খবর