শাল সেগুন মহুয়ার গভীর জঙ্গলের মাঝে গড়জঙ্গলের শ্যামরুপা মন্দিরের ইতিকথা

সনাতন গরাই,দুর্গাপুর:গভীর অরণ্যের মাঝে মা শ্যামরুপা দেবীর মন্দির নাম গড়জঙ্গল।দুর্গাপুরের মালানদীঘি থেকে তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলে দেখা যায় লাল মাটির পথ ও দুইধারে সাল সেগুন মহুয়ার ঘন জঙ্গলের মাঝ দিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলে দেখা যায় শ্যামরূপা মন্দির।রাজা লক্ষণ সেন বহুকাল আগে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন এই গভীর জঙ্গলে।লক্ষন সেন এই জঙ্গল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ইচ্ছাই ঘোষকে মন্দিরের দায়িত্ব দেন।তারপর থেকে তিনিই এই মন্দিরের পূজা করতেন।দেবীর স্বপ্নাদেশ দেন ইচ্ছাই ঘোষকে যুদ্ধে যেতে অষ্টমীর দিন,রাজা দেবীর কথা না শুনে সপ্তমীর দিন যুদ্ধে চলে যায়।দেবীর কথা অমান্য করার ফলে রাজা পরাজিত হয় এবং নিহত হয়।তার পর রাজার অনুচড়েরা গড়জঙ্গল থেকে দীর্ঘ দুই কিলোমিটার দূরে দ্বীপসাযের নামে একটি জলাশয়ে দেবীর মূর্তি বিসর্জন করে দেয়।পরে অষ্টধাতুর মূর্তি বসিয়ে পূজা দেওয়া হয়।

মন্দিরের বর্তমান পূজারী ভুতনাথ রায় জানান,বহুকাল আগে একজন কপালিক সিদ্ধিলাভ করার জন্য নর বলি দিতেন।এই মন্দির তখন ঘন জঙ্গলে বিচ্ছিন ছিল।মন্দির চারিদিকে কপালিকদের বাস ছিল।জঙ্গলে তখন হিংস্র জন্তু থাকতো।নর বলীর কথা শুনতে পাই ভক্তপ্রেমিক কবি জয়দেব তিনি বীরভূম জেলার অজয় নদীর ওপারে বাস করতেন।যেই মন্দির এখন জয়দেব পদ্মাবতী নামে পরিচিত। নরবলির কথা শুনে একদিন চলে আসেন এই শ্যামরূপার মন্দিরে।তিনি কপালিক কে বলেন আপনি তো নরবলি দেন মায়ের পূজার জন্য।

আপনি কি নরবলি দিয়ে আমার শ্যামরূপা মাকে দেখতে পারবেন,যদি না পারেন তাহলে আমি আপনাকে নরবলি না দিয়ে দেখাবো আমার শ্যামা মাকে।তবে আমাকে কথা দিতে হবে আর কোনোদিন নরবলি দেবেন না।ভক্তকবি জয়দবের এই কথায় রাজি হলেন কপালিক।ভক্তপ্রেমিক জয়দেব মনে প্রাথনা শুরু করেন প্রথমে ব্যার্থ হয় শ্যামা মাকে দর্শন করাতে।পরে আকুল মনে প্রাথনা করে সফল হয় তার শ্যামা মা শ্যাম রূপে দেখতে পাই ওই কপালিক।মাকে দেখতে পেয়ে ভক্তপ্রেমিক জয়দেবের পদতলে লুটিয়ে পড়ে যায় কপালিক।সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি।তিনি জানান আগের মায়ের মূর্তি চুরি হয়ে গেছে তার পর পাথরের এক মূর্তি প্রতিস্থাপন করেন।


এখন মহাঅষ্টমীর দিন গভীর অরণ্য মাঝ থেকে কোনো এক সুড়ঙ্গ থেকে এক অলৌকিক আওয়াজ বেরিয়ে আসার পর শুরু হয় বলিদান।এই মন্দিরে প্রতিদিন নিত্যসেবা হয়,আসেন বহুদূরদুরান্ত থেকে ভক্তারা।দুর্গাপূজাই চারদিন প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার ভক্তের সমাগম হয়।নবমীর দিন খাওয়ানো হয় খিচুড়ি মহাপ্রসাদ।সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা লক্ষ করা যায় মন্দির প্রাঙ্গনে।জলের ট্যাংক থেকে শুরু করে ডাসবিন এমনকি মন্দিরের চারিপাশ ঘেরাও হয়েছে,এছাড়া এই গভীর অরণ্যে বর্তমান বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।এই নির্জন অরণ্যে শান্ত পরিবেশে পূজা হয় মা শ্যামরূপা দেবীর।এর পাশে অবস্থিত মহর্ষি সেবাশ্রম এখানেও কমবেশি বহু মানুষের সমাগম হয়।

সম্পর্কিত খবর