অবসর গ্রহণের পর পড়ুয়াদের ৫ লাখ টাকার স্কুল বাড়ি “উপহার” প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের

বাংলাহান্ট ডেস্ক : এত কোটি মানুষের ভিড়ে আলাদাভাবে মানুষ মনে রাখে তাকে যে নিঃস্বার্থভাবে আত্মত্যাগ করে দেশের জন্য তথা দেশের মানুষের জন্য একটু হলেও কিছু ভালো কাজ করে যান।

স্বাধীনতা দিবসের পরেই এক শিক্ষক ৫ লাখ টাকার একটি বিদ্যালয় ভবন সম্পূর্ণ নিজের উপার্জনের টাকায় বানিয়ে “উপহার” স্বরূপ দিলেন প্রাক্তন স্কুলকে। এমনই একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে পুরুলিয়ার একটি গ্রামে।

সাম্প্রতিককালে যখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে ঠিক তখনই পুরুলিয়ার একটি গ্রামে দেখা গেল মনমুগ্ধকর একটি অন্য ছবি। পুরুলিয়ার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। আর পাঁচজন গড়পড়তা শিক্ষকের থেকে তিনিই বোধ হয় সবথেকে আলাদা।

পুরুলিয়ার বরাবাজার ব্লক এলাকার দুই নম্বর চক্রের বদলডি উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তিনি। তার নাম ফটিক চন্দ্র মাহাতো। তিনি অবসরের পর তার উপার্জনের ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করে পড়ুয়াদের উপহার দিয়েছেন। এই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন গত বছর জুলাই মাসে। কিন্তু বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ সমাপ্ত না হওয়ার কারণে চলতি মাসের ৮ তারিখ তাঁর হাত দিয়েই সেই ভবনের উদ্বোধন করা হয়।

তিনি বলেন, “আমি একটি ১৬০০ স্কোয়্যার ফুটের শেড নির্মাণ করেছি মাত্র । বিদ্যালয় (School) ভালোবেসে সেটিকে ভবনের মর্যাদা দিয়েছে। আর পুরুলিয়ার ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই এই ঘরটির নাম দেওয়া হয়েছে টুসু ।” এই ভবনটি তৈরি করতে তার প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে পুরুলিয়ার মান বাজার ব্লক এলাকার জনড়া গ্রামের বাসিন্দা , বদল্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফটিক বাবু খুব খুশি বাচ্চাদের জন্য এই টুকু করতে পেরে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আসনে আছেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক করুণাময় পাত্র । তিনি অত্যন্ত আশাবাদী হয়েই বলেন, “বর্তমানে শিক্ষকতার মান বা পেশা সম্পর্কে জনমানসে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফটিক বাবুর এই কাজ দেখে মানুষের ধারণার কিছুটা হলেও বদল ঘটবে বলেই আমার মনে হয়।” তিনি আরো বলেন , “বিদ্যালয়ের আগামী সমস্ত অনুষ্ঠান ফটিক বাবুর তৈরি এই টুসু ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।”

২০০৩ সালে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ফটিক বাবু। তার আগে তিনি পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের চিপিদা জুনিয়ার হাই স্কুলে কর্মরত ছিলেন।

শিক্ষকতা করা তার কাছে শুধুমাত্র এই টাকা রোজগার করার জন্য ছিল না। শিক্ষকতা তার কাছে শুধু পেশা নয় এটি ছিল তার নেশা ও ভালোবাসা। বিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার পর থেকেই তার প্রায় সমগ্র জীবনটাই কেটেছে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে। কচিকাঁচাদের নিয়েই কেটে যেত তার সময়। তাই ছোটদের তিনি বড্ড ভালোবাসেন। তাদের জন্য অন্তর থেকে কিছু করে যেতে চান। আর এই ভালোবাসা ও ইচ্ছে থেকেই তিনি এই বিদ্যালয়ের জন্য এই ভবনটি তৈরি করে দিলেন যাতে পড়ুয়াদের কোন অসুবিধা না হয়। তার ব্যয় করা পাঁচ লাখ টাকা, তার পড়ুয়াদের আনন্দের কাছে কিছুই নয়। তার তৈরি এই টুসু ভবন পেয়ে যার পর নাই খুশি পড়ুয়া থেকে বিদ্যালয় এর সব শিক্ষকরা।

Avatar
Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর