রিপোর্টঃ ভারত ও চীনের মধ্যে কার সেনা যুদ্ধে বেশি শক্তিশালী ও সক্ষম?

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ভারতীয় সেনা (Indian Army) এবং চাইনিজ সেনা (People’s Liberation Army), কে বেশি শক্তিশালী? জনসংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে থাকা এই দুই দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে কে এগিয়ে? কোন দেশের সেনারই বা রয়েছে বিশ্বের সবথেকে বেশি শক্তি? যদি ভবিষ্যতে এই দুই দেশের মধ্যে কোন যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে এগিয়ে থাকবে কোন দেশ?

   

আজ আমরা জানব, এই দুই দেশের সামরিক বাহিনী নিয়ে। সৈন্য শক্তির দিক থেক ভারতীয় সেনাবাহিনী নাকি পিপলস লিবারেশন আর্মি কে এগিয়ে? যে কোন দেশের সেনাকে তিনভাগে ভাগ করতে হয়। স্থল, জল এবং নৌবাহিনী। এই তিন সেনার মাধ্যমেই দেশ তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করে।

দুই দেশের সেনার পরিমাণ
প্রথমেই আসি চীনের বিষয়ে, চীনের সেনাবাহিনীতে প্রায় ২৩ লক্ষ ৩৫ হাজার সেনা বর্তমানে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। এবং তারা তাঁদের সংরক্ষণে প্রায় ১৪ লক্ষ সেনা রেখেছে। অন্যদিকে, ভারতের ১৪ লক্ষ সেনা সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে এবং সংরক্ষিত সেনার সংখ্যা প্রায় ২১ লক্ষ।

সেনা বাজেট প্রকাশ
সেনার সংখ্যার পর আসি সেনা বাজেট নিয়ে। প্রতি বছরই প্রতিটি দেশ তাঁদের অর্থনীতির উপর নির্ভর করে সেনা বাজেট কম বেশি করে। ভারত এবং চীন এমন দুটি দেশ, যেখানে ধনির সংখ্যা যেমন রয়েছে, তাঁর পাশপাশি দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে তাঁদের উপর যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ ব্যয় করে। চীনের সেনা বাজেট ২২৮ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১৭ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আমেরিকা প্রথমে থাকলে, চীন রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে সেনা বাজেটের দিক থেকে। অপরদিকে ২০১৯ সালে ভারতের সেনা বাজেট ছিল ৬১ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ভারতের স্থান রয়েছে চতুর্থ স্থানে।

চীনের স্থল সেনার অস্ত্রের পরিমাণ
যুদ্ধ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হল মিলিটারি ট্যাঙ্ক, যা চীনের কাছে আছে ৯১৫০ মেইন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক। সূত্র মারফত জানা যায়, চীনের কাছে আরও ৪২৯২ ট্যাঙ্ক, ৪৭৮৮ আর্মার্ড ভেইকেলস, ১৭১০ SPG, ৬২৪৬ টাউড আর্টেলরি, ১৭৭০ মাল্টিপেল রকেট লঞ্চ সিস্টেম আছে। বিভিন্ন সোর্স থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যায়। তবে চীনের কাছে মজুত রাখা যুদ্ধের ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে আমেরিকা এবং রাশিয়ার পর তিন নম্বরেই রয়েছে চায়নার নাম।

পিছিয়ে নেই ভারতও
অন্যদিকে পিছিয়ে নেই ভারতও। তিন নম্বরে চীন থাকলে, চতুর্থ নম্বরে অন্য কাউকে জায়গা না দিয়ে, ভারত নিজেই ঢুকে পড়েছে। ভারতের কাছে যুদ্ধ প্রয়োজনীয় মেইন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক রয়েছে ৫৯৭৮। অন্য সূত্র মারফত জানা যায়, ৪২৯২ বা ৬ হাজারেরও বেশি ট্যাঙ্ক আরও রয়েছে ভারতীয় সেনার কাছে। ৬৭০৪ টি রয়েছে আর্মার্ড ভেইকেলস, ১২৯০ SPG, ১৭৪১৪ টাউড আর্টেলরি এবং ২০৯২ রয়েছে মাল্টিপেল রকেট লঞ্চ সিস্টেম। ভারতের কাছে আছে রাশিয়ার সর্ব শক্তিমান যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, যা বিশ্বে ১ নম্বরে আছে।

স্থল সেনার পর এবার বায়ুসেনার পালা
চীনের ঝুলিতে রয়েছে মোট ১৩০০ ফাইটার জেট, যার মধ্যে রাশিয়ান সুখোই 35s এবং সুখোই 27s রয়েছে। এছাড়াও নিজের দেশের তৈরি করা বেশ কয়েকটি শক্তিশালী যুদ্ধ বিমান রয়েছে চীনের কাছে। এবং ৯১১ টি হেলিকপ্টারের মধ্যে ২৮১ টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে। এই ক্ষেত্রে চীন রয়েছে বিশ্বের তিন নম্বর স্থানে। তবে ভারতও কিন্তু পিছিয়ে নেই। চীনের পরেই ভারতের স্থান। চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতের কাছে ফাইটার জেট রয়েছে ১৭২০। যার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সুখোই SU30MKI, MID29 এছাড়াও বেশ কয়েকটি শক্তিশালী যুদ্ধ বিমান সামিল রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। এছাড়া ভারতে নির্মান তেজস যুদ্ধ বিমানও রয়েছে ভারতের কাছে। ভারতের সংগ্রহে হেলিকপ্টার রয়েছে ৭২২ টি এবং তাঁর মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ২৩ টি।

স্থল, আকাশ পার করে এবার নৌবাহিনীর পরিমাণ
সব শেষে আসি নৌবাহিনীর বিষয়ে। চীনের কাছে আছে ১ এয়ার ক্রাফট কেরিয়ার, ২৫ ডিস্ট্রয়ার, ৪২ ফ্রিগেটস, ৮ টি নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন এবং ৫০ টি অ্যাটাক সাবমেরিন এবং ২৭০ নিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে। তবে সূত্র মারফত জানা যায়, চীনের কাছে গুপ্তভাবে আরও বিরাট সংখ্যক নিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু তাঁর সঠিক পরিমাণ কেউ জানে না। চীন বিশাল পরিমাণে অর্থ খরচা করে ২ স্টেট অফ দি আর্থ সুপার কেরিয়ার তৈরি করছে। যার মধ্যে একটি ২০২০ সালে এবং অপরটি ২০২৩ সালে প্রস্তুত হবে। তবে বর্তমানে চীনের এই সুপার কেরিয়ার তৈরি হয়ে গেলে, সমগ্র বিশ্বে শুধুমাত্র চীন এবং আমেরিকার কাছেই এই বৃহত আকারের যুদ্ধ জাহাজ থাকবে।

ভারতের কাছেও আছে স্পেশাল ফোর্স মার্কোস
কিছু দিন পরই ভারতের কাছেও একটি সুপার কেরিয়ার তৈরি হয়ে যাবে, নাম INS Vishal। বর্তমানে ভারত এবং চীন দুই দেশের কাছেই ১ টি করে এয়ার ক্রাফট কেরিয়ার রয়েছে। এছাড়াও ভারতের কাছে রয়েছে ১১ ডিস্ট্রয়ার, ১৪ ফ্রিগেটস এবং ১৫ টি সাবমেরিন রয়েছে। ভারতের কাছে ১২০ টি নিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে। এই সবকিছুকে মিলিয়ে ভারত কিন্তু বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হতে পেরেছে। তবে বিশ্বের সবথেকে ভয়ঙ্কর স্পেশাল ফোর্স হল মার্কোস, যা ভারতের নৌবাহিনীতে রয়েছে। যারা ভারত পাক সীমান্ত এলাকায় বহুবার যুদ্ধ করে নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এবং অন্যদিকে চীনের কাছে রয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মি।

এক সে বারকর এক
সব কিছু দেখে এই সিদ্ধান্ত আসা যায় যে, চীন যদি ক্ষমতার দিক থেকে কিছুটা এগিয়েও থাকে, ভারত কিন্তু ঠিক তাঁর পিছনেই রয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারত চীনের থেকে বেশ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। তবে এই সমস্ত অস্ত্র সাধারণ দুই দেশের প্যারেডেই ব্যবহৃত হয়। তবে এমন দিন যেন না আসে, যেদিন এক দেশের বিরুদ্ধে অপর দেশকে এই শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়। তাহলে সেদিন শুধুমাত্র দুটি দেশ নয়, গোটা বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

Avatar
Smita Hari

সম্পর্কিত খবর