বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৭ তম বছর, বলেছিলেন এমন কিছু কথা যা বদলে দিয়েছিল আমেরিকার ভবিষ্যত

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ১১ ই সেপ্টেম্বর, এই দিনটি স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) সাথে অতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে। এই দিনটি এলেই আমাদের শিকাগোয় (Chicago) ধর্ম সম্মেলনের কথা মনে পড়ে যায়। আজ থেকে ১২৭ বছর পূর্বে শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে ‘দ্য পার্লামেন্ট অব ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়নস’-এর সভায় এক ভারতীয় তরুণ সন্ন্যাসী হিসাবে তাঁর বক্তৃতা আজও সকলের হৃদয়পটে উদ্ভাসিত।

১৮৯৩ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর, শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে সনাতন হিন্দু ধর্মের কথা তুলে ধরেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের পরমপ্রিয় শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ। সম্মেলনে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও গ্রহিষ্ণুতার নতুন বার্তা তুলে ধরেছিলেন তিনি। বর্তমান দিনের রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে নিজেদের ধর্মের প্রচার করে, স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম প্রচার ছিল তাঁর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

1893parliament

আমেরিকার ওই সভায় যোগদানের জন্য উত্তর-পূর্ব রাজস্থানে খেতড়ির রাজা অজিত সিংহ স্বামী বিবেকানন্দকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। এই রাজার সাহায্যে ‘ওরিয়েন্ট’ জাহাজে ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কেটে সেখানে পৌঁছালেও গ্রাসাচ্ছাদন এবং বর্ণ-বিদ্বেষের কারণে স্বামী বিবেকানন্দকে অনেক অপমানিত হতে হয়েছিল।

তবে সবকিছুকে উপেক্ষা করেই শেষ অবধি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হেনরি রাইটের ব্যক্তিগত পরিচিতিকে পাথেয় করে ওই মহা সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়া সুযোগ পান তিনি। মাত্র তিন মিনিটের সময়ের শুরুতেই ‘সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অব আমেরিকা’ বলে সকলকে সম্বোধন করায়, সভায় উপস্থিত প্রায় ৭ হাজার দর্শক নিজেদের আসন ছেড়ে ২ মিনিট ধরে করতালির মাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

সেই সময় আমেরিকা আর্থিক দিক থেকে সমৃদ্ধশালী হলেও, তাঁদের মধ্যে প্রাদেশিকতা চরমে ছিল। নিজেদের দেশ মধ্যস্থ মানুষের মধ্যেই ধর্মের বিভেদ দেখা দিয়েছিল। সেই সময় দাঁড়িয়ে, শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই সভার আয়জন করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে, বিশ্বের অন্যান্য ধর্মগুরুরা যখন শুধুমাত্র নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার চেষ্টায় ছিলেন, তখন স্বামী বিবেকানন্দ শুধুমাত্র এই সনাতন হিন্দু ধর্মের সহনশীলতার বার্তা দিয়েছিলেন। কিভাবে এই ধর্ম অন্য ধর্মকে সম্মান করে, সেই ধর্মের ভালো দিকগুলোকে সহজেই গ্রহণ করতে পারে, সেটাই ছিল তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য। ধর্মীয় গোঁড়ামি, ধর্মীয় উন্মত্ততা, ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই না করে, শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য।

তাঁর কথায়, ‘সমস্ত নদী যেমন নানান পথ অতিক্রম করে শেষে সেই সমুদ্রেই পতিত হয়, তেমনভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাচরণ করলেও, শেষে কিন্তু সেই একই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাচ্ছে। সমুদ্র কিন্তু কখনই নদীকে একথা বলে না যে, তুমি ওই পথ অতিক্রম করে এসেছ তাই তোমার জল আমি গ্রহণ করব না। তেমনই ঈশ্বরও কিন্তু কখনই বলেন না, যে তুমি অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আমার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাই, আমার কাথায়, ধর্মীয় গোঁড়ামি, ধর্মীয় উন্মত্ততা, ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই সম্পূর্ণই নিরর্থক’।

swamiji 647 011216113659

আজ থেকে ১২৭ বছর আগে তাঁর সেই বিখ্যাত বাণী জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কোন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামের মত স্যোশাল মিডিয়া ছিল না। শুধুমাত্র মুদ্রিত সংবাদপত্র এমনকি মার্কিন মিডিয়া এমনভাবে এর প্রচার করেছিল, যা মার্কিন মুলুক তথা বিশ্বের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়েছিল। যার প্রভাব আমেরিকা মধ্যস্থ দ্বন্ধের উপর পড়েছিল। এমনকি আজকের দিনেও স্বামী বিবেকানন্দের সেই বাণীর প্রভাব সমগ্র বিশ্বে বিরাজ করছে।

Avatar
Smita Hari

সম্পর্কিত খবর