ফ্লাইং অফিসার হয়ে পিতৃদিবসে চা বিক্রেতা বাবাকে উপহার দিল মেয়ে

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ একেই বলে বাবা, মেয়ের সাফেল্যে চা বিক্রেতা বাবার চোখে হল চলে এসে। ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) নিমচ জেলার। এক চা বিক্রেতার মেয়ে যখন এয়ারফোর্স ট্রেনিংয়ের জন্য এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভদৌরিয়ার সামনে যাচ্ছিলেন, তখন ১৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে বাবা তাকে দেখছিলেন। আর মেয়ের খুশীতে তার দু’চোখ বেড়ে পড়ছিল অশ্রু।

   

জানা গিয়েছে, হায়দরাবাদের এয়ারফোর্স ট্রেনিং নিতে যান মধ্য প্রদেশের এক চা বিক্রেতার মেয়ে আঁচল গাঙ্গওয়াল। বাবা সুরেশের জীবনে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অনেক লড়াই করে মেয়ে পড়াশুনা করে সংসার চালিয়েছে। সুরেশবাবু আবেগগলিত কণ্ঠে বলেন, ছোট থেকে কষ্টই করছি। সুখ কাকে বলে ঠিক তা জানা নেই আমার। কিন্তু মেয়ের এই ফ্লাইং অফিসার হয়াটা আমার কাছে খুব সুখের। আর খুশীতে আমার হাসি না কান্না বেরিয়ে আসছে। শনিবার আঁচল গাঙ্গওয়ালকে বিমান বাহিনীতে কমিশন করা হয়েছিল ১২৩ ক্যাডেট দিয়ে।

করোনার মহামারীর কারণে প্রথমবারের মতো পাসিং আউট প্যারেডে অংশ নিতে ক্যাডেটের পিতামাতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আঁচল বলেছেন যে, ‘প্রত্যেকেরই ইচ্ছা যে তাঁর স্বপ্ন যখন বাস্তবায়িত হয়, তখন তার বাবা-মা’র খুশীতে যোগদান করা। কারণ, বাবা-মাই তাদের বড় করে। তার পিতা মাতা হায়দরাবাদে আসতে পারেননি লকডাউনের কারণে ঠিকই, কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানটি অনলাইনের মাধ্যমে দেখেছেন। আমি যা কিছু করতে সক্ষম হয়েছি, আমার পিতা-মাতার কঠোরতার কারণে এটি করতে সক্ষম হয়েছি। আঞ্চল এয়ারফোর্সে ফ্লাইং অফিসার হওয়ার জন্য পুলিশ উপ-পরিদর্শক এবং শ্রম পরিদর্শকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এয়ারফোর্স কমন এডমিশন টেস্টটি মাত্র একটি লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছিল এবং ষষ্ঠ প্রচেষ্টা সফল হয়েছিলাম।

বাবা সুরেশ বলেন, ‘মেয়েকে পুলিশের চাকরি না ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি অনেক কিছু বুঝিয়েছি, কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। এর পরেই তিনি শ্রম পরিদর্শকের জন্য নির্বাচিত হন। তবে যার আকাশে উড়ানোর তাগিদ আছে সে কি পুলিশের চাকরি করতে পারত? আট মাস পর তিনি শ্রম পরিদর্শকের চাকরি থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন। সুরেশ তার মেয়েকে দু’বার চাকরি না ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তবে প্রতিবারই মেয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

চা বিক্রি করে বাড়ি চালিয়ে সুরেশের বড় ছেলে প্রকৌশলী। দ্বিতীয় মেয়েটি ফ্লাইং অফিসার হয়েছেন এবং কনিষ্ঠ কন্যা বি কমকের ছাত্রী। সুরেশের মেয়ে আঁচল বলেছেন যে, তিনি আতঙ্কিত না হয়ে বাবার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন। ‘অর্থনৈতিক ঝামেলা জীবনে আসে তবে অসুবিধার মুখোমুখি হওয়ার সাহস এবং যে কোনও মূল্যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর সাহস থাকা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েরা কারও চেয়ে কম নয় এবং দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি দিয়ে তাদের স্বপ্ন বাস্তব করতে পারে। আঁচল চায় না তার বাবা এখন চা বিক্রি বন্ধ করুন। তাঁর মতে, কাজটি কোনও বড় বা ছোট নয়। সততার সাথে করা প্রতিটি কাজই বড়।

সম্পর্কিত খবর