ঠিক যেন স্বপ্নের সফর! বাঁকুড়ার ফেরিওয়ালা এবার বি টেক করবেন খড়্গপুর IIT-তে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনে চলার পথে কেউ কেউ এমন কিছু চমকের সম্মুখীন হন যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য মনে হয় তাঁদের কাছে। যে ঘটনার ওপর ভর করে বদলে যায় তাঁদের জীবনও। সম্প্রতি ঠিক সেইরকমই এক মন ভালো করা ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে একজন মেধাবী ছাত্র সমস্ত বাধাকে উপেক্ষা করে পাড়ি দিয়েছেন স্বপ্নের সফরে।

জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার শালতোড়ার পাবড়া নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তায় সাইকেলে চেপে ফেরিওয়ালার কাজ করতেন মেধাবী ছাত্র ছোটন কর্মকার। এবার তিনি ভর্তি হয়েছেন খড়্গপুর আইআইটিতে। শুধু তাই নয়, তিনি সেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি টেকে ভর্তি হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে সর্বত্র।

উল্লেখ্য যে, ছোটনের বাবা কানাই কর্মকার সংসার চালাতে সাইকেলে চেপে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুড়ি-ফিতে এবং খেলনা বিক্রি করতেন। একটা সময়ে ছোটনকেও করতে হয়েছে ওই কাজ। যদিও, তাঁর লক্ষ্য ছিল অন্য। আর সেই লক্ষ্যপূরণের জন্যই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি আজ পৌঁছে গিয়েছেন আইআইটি পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার তিনি ভর্তি হন আইআইটিতে।

যদিও, তিনি বুধবার সন্ধ্যেনাগাদ পৌঁছে যান আইআইটি ক্যাম্পাসের সামনে। এক্কেবারে সাধারণ পোশাকের ওই মেধাবী ছাত্রকে ক্যাম্পাসের গেটের সামনে ইতস্তত ঘুরতে দেখে আইআইটির নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁর পথ আটকান। আর তারপরেই পুরো ঘটনা জানতে পেরে চমকে যান তাঁরাও। সঠিকভাবে কাগজপত্র দেখে ছোটনকে সসম্মানে প্রবেশের অনুমতি দেন তাঁরা।

উল্লেখ্য যে, ছোটনের বাবা কানাই কর্মকার আইআইটি সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না। যদিও, তিনি শুনেছেন যে, সেখানে পড়তে গেলে প্রচুর টাকার দরকার। যার সামর্থ্য তাঁর ছিল না। এদিকে, ছোটনের বাড়িতে রয়েছে বাবা, মা ও দাদা। এমতাবস্থায়, মেধাবী ছোটনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অভিজিৎ মণ্ডল নামের স্থানীয় এক শিক্ষক। পাশাপাশি, ছোটনকে ট্রেনে তুলে দিতে এসে তাঁকে একটি গীতা এবং ভর্তির টাকা দিয়ে যান তিনি। এই প্রসঙ্গে অভিজিৎ বাবু জানিয়েছেন, অত্যন্ত মেধাবী ওই ছাত্রের পরিবারকে খুব কষ্ট করে অন্নসংস্থান করতে হয়। তাই, ছোটনের আইআইটিতে ভর্তির টাকা ওঁদের কাছে ছিল না। তবে, কয়েকজন সমাজকর্মীর দৌলতে এটা সম্ভব হয়েছে। পরবর্তীকালে ছোটন আরও সহৃদয় ব্যক্তিদের পাশে পাবেন বলেও জানান তিনি।

saltora,Bankura,Village,Student,B.Tech,IIT,IIT kharagpur,meritorious student,hawker,State,West Bengal,Success Story,Exam

এদিকে, সমস্ত আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে দুরে সরিয়ে রেখে বাংলা মিডিয়ামের সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেই আইআইটিতে যোগ্যতার সাথে প্রবেশ করছেন ছোটন। স্বাভাবিকভাবেই, এই বিশেষ মুহূর্তে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ওই ছাত্র। তিনি জানান, “এটা যে আদৌ সম্ভব হয়েছে, এটাই বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। আমি শালতোড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। জেইই মেইন-এর পর অ্যাডভান্সড-এ বসে ভালো র‌্যাঙ্ক পেয়েছিলাম। কিন্তু এখানে ভর্তির মত টাকা ছিল না। সেটাও জুটে গেল। এখনও ভাবতেও পারছি না যে, আমি আইআইটিতে দাঁড়িয়ে আছি।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর