এই পরিবারে একই ছাদের তলায় থাকেন ৫০ জনেরও বেশি সদস্য! প্রতিদিন তৈরি হয় ২০ কেজি আটার রুটি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমাদের সমাজে একান্নবর্তী পরিবারের প্রচলন বহুলভাবে পরিলক্ষিত হত। কিন্তু, বর্তমান সময়ে সেই রেশ আর চোখে পড়েনা বললেই চলে। এমনকি, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন আবার “নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি”-র ধারণা শুরু হয়েছে। কিন্তু, এই আবহেই এবার রাজস্থানের হনুমানগড়ে এমন একটি পরিবারের খোঁজ মিলেছে যেখানে একই ছাদের তলায় ৫১ জন সদস্য থাকেন। অর্থাৎ, প্রতিদিন দু’বেলা মিলিয়ে ১০০ জনেরও বেশি সদস্য একসঙ্গে বসে খাওয়ার খান এই পরিবারে।

পাশাপাশি, এত বড় পরিবার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য বাড়ির সদস্যদেরও দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মূলত, পরিবারের প্রধান মহেন্দ্র কুমার বুগালিয়া তাঁর সমস্ত ভাই ভূপ সিং, ওমপ্রকাশ, রামকুমার, পুরচাঁদ, হরিরামকে এখনও এক সুতোয় বেঁধে রেখেছেন। মহেন্দ্র তাঁর ৬ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। পাশাপাশি ৬ ভাইয়ের মোট ২০ জন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। এভাবেই ভাই-বোন, ছেলে-বউ, নাতি-নাতনি সহ মোট ৫১ সদস্যের এই পরিবার এখন স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।

জানা গিয়েছে যে, মহেন্দ্রর দুই ভাই কীটনাশক কোম্পানিতে কাজ করেন। আর বাকি তিন ভাই কৃষিকাজ করেন। পাশাপাশি, সকলের ছেলেরাই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বাড়ির মহিলারা ঘর দেখাশোনার পাশাপাশি বাকি কাজগুলি করেন। তবে, কাজের সুবিধার্থে পূর্বনির্ধারিত ভাবে সবাইকে নির্দিষ্ট কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমতাবস্থায়, এই বৃহৎ পরিবারের জন্য প্রতিদিন ২০ কেজি আটার রুটি তৈরি হয়। মূলত, ২ জন মহিলা সকালের খাওয়ার তৈরি করেন। অপরদিকে রাতের খাওয়ার তৈরি করে নেন বাড়ির অন্য ২ জন মহিলা। এছাড়াও, বাড়িতে শাক-সবজি, পেঁয়াজ, আলু সহ অন্যান্য সবজি একসাথে প্রচুর পরিমাণে কেনা হয়, যার ফলে দামেও সস্তায় পাওয়া যায় এগুলি। মূলত, মহেন্দ্র কুমার যখন বুগালিয়া পরিবারের যুবকদের বিবাহের সম্পর্ক স্থির করেন, তখন তাঁর আগে থেকেই শর্ত থাকে যে জীবনযাপন যৌথভাবে করতে হবে।

জানা গিয়েছে, এই যৌথ পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্যের বয়স ৬৮ বছর, আর সবচেয়ে ছোট সদস্যের বয়স মাত্র ৪ মাস। শুধু তাই নয়, বাড়ির প্রতিটি সদস্য তাঁদের আয় বাড়ির কর্তা মহেন্দ্র কুমার বুগালিয়ার কাছে নিয়ে আসেন। তারপর তিনি পরিবারের ব্যয়ের জন্য অর্থ প্রদান করেন। পরিবারে আসা প্রত্যেক নতুন পুত্রবধূরাও এই ঐতিহ্য অনুসরণ করে আসছেন। পাশাপাশি, বাড়ির সন্তানরাও এই আদর্শেই বড় হচ্ছে। যার কারণে ভবিষ্যতেও এই পরিবার একসঙ্গে থাকবে বলেই মনে করছেন সবাই।

সম্প্রতি জাঠ সমাজ সমিতির পক্ষ থেকে ভবভুয়ালী ধানী গ্রামের বুগালিয়া পরিবারের প্রাঙ্গণে এক অভিনন্দন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা কালেক্টর নাথমল দিদেল ও জেলা জাঠ সমাজ সমিতির সভাপতি জোতরাম নজল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাঠ ভবনের সভাপতি ইন্দরপাল রণওয়ান। সেখানেই জেলা জাঠ সমাজ সমিতির সভাপতি জোতরাম নজল বলেন যে, বুগালিয়া পরিবার বর্তমান সময়ে প্রতিটি মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুরো পরিবারের এক ছাদের নিচে বসবাস করা সত্যিই প্রশংসনীয়।

অন্যদিকে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা কালেক্টর নাথমল দিদেল বলেন যে, আমি যখন সংবাদমাধ্যমে বুগালিয়া পরিবারের খবর পড়ি, তখন থেকেই মনে মনে বুগালিয়া পরিবারের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা ছিল। সেই সুযোগ পেয়ে সত্যিই ভালো লাগছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর