উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য মেগা প্ল্যান তৈরি করলেন সৌমিত্র খাঁ, এবার আর বঞ্চিত হবে না উত্তরবঙ্গীয়রা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গের ৫৪টি আসনেই পদ্ম ফুল ফোটাতে মরিয়া বিজেপি (BJP) শিবির। সেই কারণে নবনির্বাচিত  বিজেপির যুব মোর্চার  সভাপতির সৌমিত্র খাঁ (Saumitra Khan) উত্তরবঙ্গ সফরে  ব্লক স্তরে থেকে শুরু করে দলীয় সাংসদদের সাথে একের পর এক মিটিং করে তৈরি করলেন উত্তরবঙ্গ জয়ের গেরুয়া নকশা। মূলত নবনির্বাচিত সাংসদদের হাত ধরে সমগ্র উত্তরবঙ্গের সবকটি বিধানসভা আসনে জয়ের আশা করছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। এই বিষয়ে সৌমিত্র খাঁর উপস্থিতিতে সর্বভারতীয় সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডার সাথে একাধিক বৈঠক হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিজেপি সাংসদদের। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য ভাবনা চিন্তাকে প্রচারের অভিমুখ করার সাথে সাথে, বুথ স্তরে সংগঠন বৃদ্ধি, এবং সংগঠনকে শক্তিশালী, এবং শাসক তৃণমূল কে প্রতি স্তরে মুখোমুখি কঠিন চ্যালেঞ্জ এর  মুখে ফেলে তৃণমূলকে মাঠ ছাড়া করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভের কৌশলে যাচ্ছে বিজেপি।

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের  আর মাত্র ৬ মাস বাকি। শাসক এবং বিরোধী উভয় পক্ষ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়। বিশেষত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে একতরফা আসন জিতে অ্যাডভান্টেজ রয়েছে বিজেপি।সেই জায়গা থেকে বিজেপি চাইছে উত্তরবঙ্গের ৫৪টি আসনেই পদ্ম ফুল ফোটাতে। এই উদ্দেশ্যে শেষ ৭দিন উত্তরবঙ্গের ৪জেলার সফর করলেন বিজেপির যুব সংগঠনের নব রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। সৌমিত্র বাবু বললেন উত্তরবঙ্গের এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে ৫৪ টি আসনে জয়লাভের  জায়গায় রয়েছে বিজেপি।

তিনি বলেন, বিগত ৭ দিনে আমি আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। সারাদিনে প্রচুর বৈঠক করেছি নেতৃত্বের সাথে। মনে রাখতে হবে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের সাথে সাথে বামফ্রন্টের ও শক্তিশালী সংগঠন ছিল একসময়। তবে শিলিগুড়ি বিধানসভার মেয়াদ শেষের পর বামফ্রন্টের অশোক ভট্টাচার্য কেই প্রশাসক নির্বাচিত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল এবং সিপিআইএম মূলত একই টাকার দুই পিঠ। যে সমস্ত বামপন্থী কর্মীরা বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে তৃণমূলের হাতে মার খেয়েছেন ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন, মিথ্যে মামলায় জেল খেটেছেন তারা আর এবার উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের বি টিম বামফ্রন্টকে ভোট দেওয়ার ভুল করবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।

এছাড়াও উত্তরবঙ্গে রাজবংশী কামতাপুরী মত ভাষা গোষ্ঠী আছে যারা বিভিন্ন বিধানসভায় একটা বড় অংশের ভোট নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা চাই যে সমস্ত দলের মানুষেরা একজোট হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সারা ভারত জুড়ে যে উন্নয়নের যোগ্য চলছে তাতে সামিল হন এবং সোনার বাংলা গড়ে তুলুন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দল থেকে বহু কর্মী-সমর্থকরা আমাদের যুব- ছাত্র এবং মহিলা সংগঠনের ছাতার নিচে একজোট হচ্ছেন। আমরা বুথ স্তরে যতটা পারবো শক্তি বৃদ্ধি করব। যাতে নির্বাচনের সময় তৃণমূলের গুন্ডা বা হার্মাদ বাহিনি আমাদের ভোটারদের জোর করে আটকে রাখতে বা ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করতে না পারে।

কারণ দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গ ও অউন্নয়নের বঞ্চনার শিকার। আর বর্তমানে যে দল ক্ষমতায় আছে তারা যে শুধু অপশাসন চালাচ্ছেনা, উত্তরবঙ্গের মানুষকে রীতিমত অত্যাচার করছেন। চা বাগানের শ্রমিকদের থেকে শুরু করে ১০০ দিনের কাজ, আমফান ঝরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের টাকা দেওয়ার কাজ বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় মানুষকে ঘর তৈরি করা দেওয়ার কাজ সবক্ষেত্রেই কাটমানি এবং সিন্ডিকেট রাজ চলছে। সারা পশ্চিমবঙ্গের মতো  করোনা মহামারীর  এই মারাত্মক সময় উত্তরবঙ্গ চলেছে মারাত্মক রেশন দুর্নীতি  সমস্ত গ্রামাঞ্চলে  সাধারণ মানুষরাও  মোদীজি দেওয়া  বিনা পয়সায়  রেশনের  সুবিধা পাচ্ছেন না। জায়গায় জায়গায় আমাকে নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন এই সমস্ত বিষয়ে।

৩৪বছরের বামপন্থী শাসন  এবং  শেষ  তৃণমূলে শাসনে  উত্তরবঙ্গে  কোনরকম অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়নি । বিভিন্ন  প্রকল্পের নামে  একটা করে কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে  আর তাতে বরাদ্দ টাকা  তৃণমূলের নেতাদের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে  যার জন্য এখনও  চা বাগানের শ্রমিকই হোক বা সাধারণ মানুষ রোজগারের জন্য হাহাকার পুরো উত্তরবঙ্গ জুড়ে। মানুষের জীবন যাপনের মান গ্রাম অঞ্চল গুলিতে অত্যন্ত খারাপ। প্রতিবার বর্ষায় পুরো উত্তরবঙ্গ জুড়ে ব্যাপক বন্যা হয় কিন্তু কোন সরকারি এই বিষয়ে মাথা ব্যাথা নেই যার ঘর চলে যায় যার সমস্ত গবাদি পশু বন্যার জলে ভেসে যায় সেই শুধু বোঝে এর যন্ত্রণা।

অথচ উত্তরবঙ্গে  প্রকৃতি ঢেলে দিয়েছে  তার উপহার টমেটো, আনারস সহ  একাধিক ফসল প্রতিবছর  চাষীদের রাস্তায় ফেলে নষ্ট করে দিতে হয় কেনার লোক থাকে না অত্যন্ত কম দরে চাষিদের থেকে ফসল কিনেই বাজারে উচ্চ দামে বিক্রি করে সিন্ডিকেট বাজরা ।বামপন্থী শাসনের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য  তৃণমূলকে এনেছিল  মানুষ  কিন্তু  সেই তৃণমূল যে আরো বড়  দুর্নীতি পরায়ন একটা সরকার  উপহার দেবে  উত্তরবঙ্গের মানুষ সেটা বুঝে উঠতে পারেনি আগে।

উত্তরবঙ্গ জুড়ে যে কোন কাজ যেকোনো প্রকল্পের টাকা সাধারণ মানুষের ঘরে যাওয়ার আগে কমিশন ট্যাক্স চলে যায় তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের অ্যাকাউন্টে। বিশেষত মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ভাইপোর সংগঠনের অত্যাচারে উত্তরবঙ্গের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শুধু কাটমানি বা কমিশনই নয় বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে হুমকি তোলাবাজি এই সমস্ত কিছু বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের তৃণমূল নেতৃত্ব। এবং সেই অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন সাংসদ থেকে শুরু করে ছাপোষা ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত।

তাই আমরা সাংসদরা  বৈঠক করে ঠিক করেছি  এই অত্যাচার আর আমরা  চলতে দেব না।  যে সমস্ত জাযগায়  বিজেপি নেতৃত্ব  এই ধরনের  অনৈতিক কার্যকলাপ এর শিকার হবেন  সেই সেই জায়গায়  তৃণমূলের  মন্ত্রী  এবং বিধায়কদের গাড়ি  ঘেরাও করবে যুব মোর্চা ।উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের স্বার্থে  এবার সময় এসেছে  অগণতান্ত্রিক  দুর্নীতি পরায়ন  কমিশন্ কাটমানি বাজ নেতৃত্বকে বোঝানোর  যে সমগ্র ভারতবর্ষের সাথে  পায়ে পা মিলিয়ে   এখন এক নতুন উত্তরবঙ্গ তৈরি হয়েছে। যে উত্তরবঙ্গ বিশ্বাস করে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র যে উত্তরবঙ্গ বিশ্বাস করে কাটমানির সরকার আর না যে উত্তরবঙ্গ বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে ভারত একদিন বিশ্ব সেরার আসনে বসবে আর পশ্চিমবঙ্গ সোনার বাংলা তৈরি হবে।

এই কারণে সকল দলের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যারা মনে করেন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বাংলা আবার তার হৃত গৌরব ফিরে পেতে পারে তাদের সবাইকে বিজেপিতে স্বাগত। এখন থেকে উত্তরবঙ্গে যে সমস্ত জায়গায় তৃণমূল সভা করবে তার ৭২ঘণ্টার মধ্যে সেই জায়গাতেই বিজেপির যুব কর্মীরা সভা করে শক্তি প্রদর্শন করবে বলেও এইদিন হুঙ্কার দেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ এবং যুব সভাপতি সৌমিত্র খাঁ।

উত্তরবঙ্গে আরেক প্রভাবশালী সংসদ নিশীথ প্রামাণিকের কথায় এবার উত্তরবঙ্গ জুড়ে একটা আসন পাবে না তৃণমূল সহ অন্য বিরোধীরা ৫৪ টা আসলেই যাতে আমরা জিততে পারি তার জন্য এখন থেকেই আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি কারণ উত্তরবঙ্গ বাসির বঞ্চনার ইতিহাস সুদীর্ঘ কেন্দ্র কংগ্রেস শাসন যখন ছিল তখন বারেবারে আমরা উত্তরবঙ্গে একটা এই হাসপাতালে দাবি জানিয়েছিলাম নরেন্দ্র মোদি এসে উত্তরবঙ্গে এম হাসপাতালে পরিকাঠামো নির্মাণের অনুমতি দিলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই হাসপাতাল নিয়ে চলে যান দক্ষিণবঙ্গে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নামে শুধু কয়েকটা নীল-সাদা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল আছে যেখানে কোন কঠিন রোগের চিকিৎসা হয় না। শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রশাসন আইন কানুন সমস্ত ব্যবস্থাই উত্তরবঙ্গে এই তৃণমূলের শাসনকালে ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন সাংসদ নিশির প্রামাণিক। তিনি আরো বলেন মোদিজীর এক রেশন এক নেশন এর উপকার সবথেকে পাবে উত্তরবঙ্গের চাষীরা। কারণ প্রচুর ফসল হলেও দাম না পাওয়ার কারণে প্রতিবছরই উত্তরবঙ্গে চাষীদের করুন অবস্থা তৈরি হয় এছাড়াও করোনার সময় সরকারের পক্ষ থেকে উত্তরবঙ্গ বাসীকে  বাঁচানোর কোন রকম ব্যবস্থা করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সাংসদ বলেন তৃণমূল সরকার শুধু জানে উন্নয়ন পর্ষদ নামে তৈরি করে বিভিন্ন ভাষা গোষ্ঠীর ভাই ভাইয়ের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে দিয়ে নির্বাচনী ফায়দা তুলতে। উত্তরবঙ্গের মানুষ লোকসভার মতই বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দিয়ে উপযুক্ত জবাব দেবেন বলে জানান কোচবিহারে সাংসদ নিশীথ প্রামানিক।

Avatar
Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর