ভারতের অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কারখানা ও কাজ দুই’ই কম! দাবি কেন্দ্রীয় সমীক্ষার রিপোর্টে

বাংলাহান্ট ডেস্ক : গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসীন হয় তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হহ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে সরাসরি বার্তা দেন রাজ্যে শিল্পায়নের। সেই লক্ষ্যে লগ্নি টানতে শিল্প সম্মেলনও হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। কিন্তু দেশের শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ যে এখনও কল-কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে, তা ফের উঠে এল কেন্দ্রের শিল্প সমীক্ষায়।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রকের ‘বার্ষিক শিল্প সমীক্ষা’-র প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট কারখানার সংখ্যা মাত্র ৯,৬৫০টি। এই সব কারখানায় মোট ৫ লক্ষ ৮০ হাজারের মতো কর্মী কাজ করেন।

সারা দেশে কারখানার সংখ্যার নিরিখে প্রথম সারিতে থাকা তামিলনাড়ুতে কারখানা ৩৮ হাজারেরও বেশি। ২২ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে ওই কারখানায়। গুজরাত, মহারাষ্ট্রে কারখানার সংখ্যা যথাক্রমে ২৮ হাজার, ২৫ হাজারের বেশি। ১৪ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষের বেশি মানুষ ওই রাজ্যগুলির কারখানায় কাজ করেন।

শিল্পায়নের গতিতেও যে পশ্চিমবঙ্গ ভালো ফল করেছে, তা বলা যায় না। ২০১৮-১৯ সালের সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গে কারখানার সংখ্যা ছিল ৯,৪২০টি। এক বছরে এ রাজ্যে মোটে ২৩০টি কারখানা বেড়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র ২৮ হাজার। খুব বেশি বাড়েনি নতুন লগ্নির পরিমাণও । মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা। সেই তুলনায় তামিলনাড়ু, গুজরাত, কর্নাটকের মতো রাজ্যে কোথাও সাতশোর বেশি, কোথাও প্রায় হাজার দেড়েক কারখানা যোগ হয়েছে। তা-ও এমন সময়ে, যখন সারা দেশে অর্থনীতিতে বৃদ্ধির গতি তেমন জোরালো ছিল না।

রাজ্য সরকারের শিল্প দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বলেন, তৃতীয়বার সরকার গড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপসহীন ভাবে শিল্পায়নের পথে ঝাঁপানোর বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও লগ্নির দেখা নেই পশ্চিমবঙ্গের। নতুন যে সব কারখানা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতিরাই তার সিংহভাগ ক্ষেত্রে লগ্নি করছেন। অন্য রাজ্য থেকে এসে পশ্চিমবঙ্গে কারখানা তৈরির হার এখনও অনেকটা কম। গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্নাটকের ক্ষেত্রে সেই রাজ্যের পাশাপাশি অন্য রাজ্যের শিল্পপতিরাও সেখানে বিনিয়োগ করছেন।

বিরোধী শিবির অভিযোগ করছে, জমি অধিগ্রহণ ও আইন-শৃঙ্খলার সমস্যার কথা ভেবে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে অন্য রাজ্যের শিল্পপতিদের একাংশ এখনও এ রাজ্যে লগ্নির বিষয়ে সন্দেহ মুক্ত হতে পারছেন না। বণিকসভা ভারত চেম্বারের সভাপতি নন্দগোপাল খেতান বলেন, ১৯৬৯ সালে দেশে সব থেকে বেশি নথিবদ্ধ শিল্প সংস্থা ছিল পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তার পরে বাম জমানার ৩৫ বছরে শিল্পের ক্ষেত্রে রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে অনেকটাই। বর্তমান সরকার আবার চেষ্টা শুরু করেছে। ভাবমূর্তি ফেরানোটাই এখন আসল চ্যালেঞ্জ তৃণমূল সরকারের কাছে।

Avatar
Sudipto

সম্পর্কিত খবর