পশ্চিমবঙ্গের স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান মীর আফসার আলী, মঙ্গলবার তার রেডিও অনুষ্ঠানে জানালেন, চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে একবার ৮৭টি ঘুমের ট্যাবলেট গিলে ফেলেন।
তিনি বলেন, “এটা বলতে আমার কোনো কুণ্ঠা নেই, কোনো লজ্জা নেই যে ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমি মীর আফসার আলী চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি”।
একটি সাক্ষাৎকারে পুরো বিষয়টি খোলাসা করেননি এই রিয়্যালিটি শো হোস্ট। মীর বলেন, “অত গভীরে ঢুকতে চাই না। তাহলে ক্ষতগুলো আরও তাজা হয়ে যাবে। হ্যাঁ, সবকিছু রয়েছে আমার। আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দিয়েছেন। আমি যা যা কিছু স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি সে সবকিছু আমার দখলে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু একটার পেছনে ছুটতে থাকা, কিছু একটা তাগিদ, কোনো একটা জেদের বশে, করেছি এই কাজ। একবার নয়, দুইবার নয়, চার-চারবার”।আরও বলেন, “চারবারের মধ্যে তিনবার আমাকে আনোয়ার শাহ রোডের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। চারবারের মধ্যে একবার তো আমি নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। ”
জানান, শেষবার তিনি ৮৭টি ঘুমের বড়ি খেয়ে ফেলেছিলাম। একবারও কারো কথা মনে হয়নি তার। মনে হয়নি ভুল কাজ করছেন। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন।
মীর বলেন, “সেবার আমার মনে হয়েছিল আমি বোধহয় আর ফিরব না। তারপর কাউন্সেলিং হয়েছিল, ওষুধপত্র স্টার্ট হলো। আমাকে বাড়ির লোক আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছিল ছুটিতে। ”
তার কিছুতে অভাব নেই, কিন্তু কেন সুসাইড করার চেষ্টা, এমন প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তরে বলেন, “যিনি লোকাল ট্রেনে করে অফিস আসেন বা যিনি বড় অফিসে বছরে একবার ইনক্রিমেন্টের অপেক্ষায় পাগলের মতো খাটছেন, তিনি মনে করতেই পারেন আমি যা করেছি তা বড়লোকদের বিলাসিতা বা পাগলামি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একটা স্টেজে আমাদের সবার ইনসিকিউরিটি, ভয় কিন্তু এক। ইনসিকিউরিটি, ভয়, পারফরম্যান্সের প্রেশার- এগুলো কিন্তু টাকা বা প্রতিপত্তি দেখে না। ইট ক্যান অ্যাফেক্ট এনিবডি। ”
অথচ বাস্তবে মীর কারো কারো কাছে অনুপ্রেরণা। এমনও হয়েছে রেডিওতে তার কথা শুনে অনেকে তৎক্ষণাৎ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে।
মীর পরামর্শ দেন, “সুইসাইডের চিন্তা সত্যি কখনো মাথায় আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কাছের কোনো মানুষকে সেটা জানান। পাশে কেউ না থাকলে তাকে ফোন করে কথাটা বলুন। সেই মানুষটির সঙ্গেই কথা বলবেন যিনি আপনাকে বিচার করবেন না, যিনি আপনাকে অপমান করবেন না। নিজের মনের ভেতর যদি ঝড় শুরু হয়, সেটাকে দয়া করে আটকাবেন না। আপনি যত ভেতরের ঝড় আটকে রাখবেন নিজের ভেতরে, মনে রাখবেন সেই ঝড় কিন্তু বিস্ফোরণের মতো ফাটবে একদিন। তাই কিছুতেই সেই স্টেজ অবধি নিজেকে নিয়ে যাবেন না। ”
তার সবশেষ পরামর্শ- মনোবিদের সাহায্য নেওয়া। তার কাছে সবকিছু খুলে বলতে হবে।
শেষে মীর জানান, চারবার আত্মহত্যার চেষ্টার জন্য তিনি এখন লজ্জিত।