বাংলাহান্ট ডেস্কঃ দেখতে সাধারণ ট্রাঙ্কই। কিন্তু কাজে অসাধারণ। এই ট্রাঙ্কের আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন আধ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাসের অস্তিত্ব মুছে দিতে পারে। বাজার থেকে যে জিনিসপত্রই কিনে আনা হোক না কেন, কাঁচা আনাজ থেকে দুধের প্যাকেট ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, এমনকি টাকাপয়সাও দ্রুত স্যানিটাইজ করে নেওয়া যেতে পারে এই ট্রাঙ্কে। করোনা ঠেকাতে এমনই ইউভি-ট্রাঙ্ক বানিয়েছে পঞ্জাবের রোপার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (Roper Indian Institute of Technology, Punjab)।
করোনাভাইরাসের স্ট্রেন সার্স-কভ-২ যে কোনও মসৃণ পদার্থ বা জড়বস্তুর উপরে জমে থাকতে পারে এমন দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরাই। এও বলা হয়েছে, কোনও পদার্থ যত মসৃণ হবে তার উপর ভাইরাস তত বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারবে। ফেস-মাস্ক, প্লাস্টিক বা ওই জাতীয় পদার্থের উপরে চার থেকে সাত দিন অবধি ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। কাজেই যে কোনও জিনিস বা পদার্থ হাত দিয়ে ছুঁলে, ভাল করে হাত স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, টাকাপয়সা কীভাবে স্যানিটাইজ করা হবে? অথবা বাজার থেকে কিনে আনা কাঁচা আনাজ, বিস্কুট, দুধের প্যাকেট বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নানা হাত ঘুরেই ঘরে আসছে, তারই বা কী হবে? সেইসব জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করার জন্যই এমন ইউভি-ট্রাঙ্ক বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইআইটি-রোপারের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার নরেশ রাখা।
বাড়িতে, হাসপাতালে, দোকানে-বাজারে যে কোনও জায়গায় ব্যবহার করা যাবে এই ট্রাঙ্ক। নরেশ রাখার নেতৃত্বে আইআইটি-রোপারের পড়ুয়া ও গবেষকরা বানিয়েছেন এমন স্যানিটাইজিং ডিভাইস। গবেষক নরেশ জানিয়েছেন, ‘জার্মিসাইডাল ইরেডিয়েশন টেকনোলজি’ (germicidal irradiation technology) ব্যবহার করা হয়েছে এই ট্রাঙ্কে। এই প্রযুক্তি সাধারণত ওয়াটার পিউরিফায়ারে থাকে।
A trunk that kills #CoronaVirus!
Fantastic product made by @iitrpr team that can be used to sanitise all items brought home from the outside like grocery, vegetables, milk, & our personal things which we take outside like wallet, wristwatch, mobile phone, etc. #StayHome pic.twitter.com/QEga6C0LS8— Sanjay Dhotre (@SanjayDhotreMP) April 8, 2020
নরেশ রাখা বলেছেন, এই ট্রাঙ্কের ভিতরে খুব শক্তিশালী আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশনের ব্যবস্থা করা আছে। এই রেডিয়েশন ভাইরাল স্ট্রেনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারবে। কিন্তু খাবার বা অন্যান্য জিনিসের ক্ষতি করবে না। যেসব জিনিস স্যানিটাইজ করতে হবে, সেগুলো ট্রাঙ্কের ভিতরে রেখে ইউভি-লাইট জ্বালিয়ে দিতে হবে। ৩০ মিনিটেই স্যানিটাইজ হয়ে যাবে ভেতরে রাখা সব জিনিস। তবে এরপরে আরও ১০ মিনিট অপেক্ষা করে তবেই জিনিসপত্র বাইরে আনা যাবে।
আইআইটি-রোপারের টিম জানাচ্ছে, সব জিনিসকে উচ্চ তাপমাত্রায় বা ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে রাখা সম্ভব নয়। ইউভি-লাইট সেই কাজ করবে। বাজার থেকে কিনে আনা কাঁচা আনাজ, প্যাকেটজাত খাবার, দুধের প্যাকেট, কাগজপত্র, টাকা, প্লাস্টিক এমনকি ওয়ালেট—সবই স্যানিটাইজ করা যাবে এই ইউভি-ট্রাঙ্কে। এমন ডিভাইস সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বাণিজ্যিকভাবে তৈরির অনুমতি পেলে ৫০০ টাকায় এক একটা ইউভি-ট্রাঙ্ক পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষক নরেশ রাখা।
ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে এমন স্যানিটাইজিং ডিভাইস তৈরি হচ্ছে নানা জায়গায়। আইআইটি-গুয়াহাটি ইউভিসি লেড-যুক্ত স্যানিটাইজেশন ডিভাইস (UVC Led-Based Device) বানিয়েছে। কোনও ছোট জায়গা হোক, বাড়ির মেঝে-দেওয়াল বা বড় এলাকা যেমন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড, হাসপাতাল চত্বর, বাড়িঘর, দোকান-বাজার ইত্যাদি দ্রুত স্যানিটাইজ করা যাবে এই ডিভাইসে।