করোনার হটস্পট থেকে মডেল হয়ে ওঠা এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাভীর সফলতার কাহিনী

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দেশের (India) বাণিজ্য নগরী মুম্বাইয়ের (Mumbai) বস্তি এলাকা ধারাভীকে (Dharavi) নিয়ে গত একমাস ধরে ব্যাপক চিন্তা জাহির করছিল দেশের বিশেষজ্ঞ মহল। মে মাসে ওই এলাকায় করোনার রোগীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর ধরে নেওয়া হচ্ছিল যে মহারাষ্ট্রের উদ্ধব সরকারের জন্য সবথেকে বড় মাথাব্যাথা হতে চলেছে ধারাভী। একদিকে মহারাষ্ট্রে দেশের সবথে বেশি করোনা রোগী আছে। আর তাঁর মধ্যে দেশ তথা এশিয়ার সবথেকে বড় ঘিঞ্জি সেই মহারাষ্ট্রেই অবস্থিত।

রিপোর্টে মানা হচ্ছিল যে ধারাভীতে করোনা ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে। কিন্তু এবার সেই ধারাভীই আশার আলো দেখাচ্ছে। ঘিঞ্জি বস্তি আর প্রাথমিক সুবিধার সমস্যা নিয়ে ভোগা ধারাভীর সফলতার কাহিনী গোটা দেশের কাছে আদর্শ হতে চলেছে। আর এই সফলতার পিছনে ২ ঘণ্টা ডাক্তারদের দলের পরিশ্রম এবং পুরসভা প্রশাসনের সবথেকে বড় যোগদান আছে।

এই মাসে প্রায় ১ হাজার ৪০০ টি মামলা সামনে এসছে। এপ্রিল মাসের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ৩৮০ শতাংশ বেশি। এরপরে প্রশাসন দাঁতে দাঁত লাগিয়ে ধারাভীকে করোনা থেকে বাঁচানোর কাজে লেগে পড়ে। গত এপ্রিল মাস থেকে প্রায় ৪৭ হাজার বাড়িতে মানুষের শরীরে তাপমাত্রা নিয়মিত ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রায় সাত লক্ষের বেশি মানুষের স্ক্রিনিং করানো হয়েছে। যাঁদের মধ্যে হালকা লক্ষণ দেখা দিয়েছে, তাদের তখনই পাশের স্কুলে বানানো কোয়ারেন্টিন সেন্টারে শিফট করে দেওয়া হয়েছে।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় এখন ধারাভীতে সংক্রমণের মামলা প্রায় তিন গুন কর্ম। এটা ভারতে রোজ বেড়ে চলা করোনার মামলার বিপরীত। উল্লেখ্য, ভারতে করোনার নতুন মামলা দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে। আর এখন প্রতিদিন ১০ হাজার বা তাঁর বেশি করে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। উল্লেখ্য, ধারাবীতে করোনার উপর লাগাম লাগানোর জন্য প্রশাসন এই ভাইরাসকে তাড়া করার রণনীতিতে কাজ করছে।

মুম্বাইয়ের জি-নর্থ ওয়ার্ডের অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার কিরণ দিঘবকর অনুযায়ী, ধারাভীকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজ প্রায় অসম্ভব ছিল। শুধুমাত্র একটাই উপায় ছিল, আর সেটা হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে সনাক্ত করা আর তাঁকে উচিৎ চিকিৎসা দেওয়া। প্রথমে লাগাতার করোনার মামলা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য প্রশাসন আর ডাক্তার বেশ চিন্তিত ছিল। কিরণ আর ওনার টিম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে, বর্ধিত মামলার উপর আগে নজর দিতে হবে। শুধু স্ক্রিনিং আর টেস্টিং উপর নজর লাগাতে হবে। আর সেটার সফলতা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে।

কিরণ জানান, আমরা প্রথমের দিকে আইসোলেট করার ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু মুম্বাইয়ের অন্য এলাকায় করোনা রোগীকে পরের স্টেপ গুলোতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরকম রণনীতির কারণে মৃত্যুর হার কমেছে। কড়া লকডাউন ধারাভীর রণনীতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। উল্লেখ্য, ধারাবীর বাড়িঘর এত পাশাপাশি ছিল যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর এই কারণে বস্তিতে মানুষের বাড়ি ঢুকে ঢুকে স্ক্রিনিং করা হয়। এমনকি পরীক্ষাও বাড়ির ভিতরেই করা হয়। এর সাথে সাথে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিষ প্রশাসনের তরফ থেকে দেওয়া হয়।

আর এই করোনার সঙ্কটের মধ্যে পবিত্র রমজান মাসও শুরু হয়ে যায়, তখন ডাক্তার এবং প্রশাসনের চিন্তা আরও বেড়ে যায়। প্রশাসন সবাইকে আশ্বাস দেয় যে, তাদের বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় জিনিষ পৌঁছে দেওয়া হবে। সবার ঘরের দরজার ফল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পৌঁছে দেওয়া হয়। আর তাদের কাছে আবেদন করা হয় যে, বাইরে না বেরিয়ে ঘরেই নামাজ পড়া আর ইফতার যেন করা হয়।

BMC এর এক আধিকারিক জানান, ‘আমাদের ক্লিনিক, মোবাইল ডিসপেনসারী আর ডোর টু ডোর সার্ভে লাগাতার জারি আছে। এর কারণে আমরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি যাঁদের উপর করোনার আশঙ্কা ঘনাচ্ছে। সবথেকে বড় মুশকিল তাদের বোঝানো। কারণ তাঁরা উচ্চ শিক্ষিত আর জাগরুক না। আমরা ব্যাপক ভাবে অভিযান চালিয়ে মানুষকে সচেতন করি। আমরা ওঁদের যোগাও করাই। খুশি থাকার উপায় বাতলে দিই। আমরা এটাই চাইছিলাম যে, লকডাউনের মধ্যে ওঁরা যেন অবসাদে না চলে যায়। আমাদের প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে। করোনার মামলা এখন আগের তুলনায় অনেক কম।”

 

Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর