বাংলাহান্ট ডেস্কঃ মঙ্গলবার দূপরে রাজ্যের অন্যতম কোভিড হাসপাতাল সঞ্জীবনের ফ্লোরে তখন মৃদু স্বরে হোম থিয়েটারে বাজছে “দোলাও দোলাও দোলাও আমার হৃদয় –‘। “অথচ কিছুদিন আগেই হৃদয়ে পাথর চাপা পড়ে গিয়েছিল তরুনী গৃহবধূ পিয়ালীর। মন কূ ডেকেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সেই হৃদয় আরেক হৃদয়ের সঙ্গে মিশে গেল। বধূ বেশে তখন হাজির পিয়ালী ব্যানার্জী। ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেড়িয়ার (Uluberia) দাশনগরের (Dashanagar)।
জানা গিয়েছে, বিয়ের পরেই দিন ধরা পড়েছে করোনা। পরের দিন ভর্তি হন হাসপাতালে যুবক। তারপর হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১৪ দিন তাকে কোয়ান্টাইন সেন্টারে থাকতে হবে।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক দুপুর একটা। বেরিয়ে এলেন বর সুপ্রিয় ব্যানার্জী। গোটা গ্রাউন্ড ফ্লোর ভরে উঠল হাততালিতে। সঙ্গে সঙ্গে ধ্বনিত হলো শঙ্খধ্বনি ।উপস্থিত নার্সরা উলুধ্বনি দিল । যুগলকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে বরণ ডালা দিয়ে বরণ করলেন ডালিয়া মিত্র ও মন্ত্রী নির্মল মাজি। হল আঙটি বদল ও। শুভেচ্ছা জানিয়ে উপহার দেওয়া হল যুগলকে।এক ঝলক দেখে মনে হবে কোনো বিয়ে বাড়ি। কিন্তু না বিয়ে বাড়ি নয়, এই অনুষ্ঠান হল করোনা জয়ী স্বামীকে নিয়ে করোনা হাসপাতাল থেকে নববধূর ঘরে ফেরা। এ এক অন্য দ্বিরাগমন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার স্বামীকে করোনা হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে গেলেন পিয়ালী।
উল্লেখ্য গত গত ২ জুন বিয়ে হয় দাসনগর থানার সিভিক ভলান্টিয়ার সুপ্রিয় ব্যানার্জী ও পিয়ালীর।আগেই লালারস দেওয়া ছিল রেড জোনে কাজ করার সুবাদে। ৩ তারিখে জানা যায় তিনি করোনা পজেটিভ।তখনই অধরা থাকে গিয়েছিল নারী জীবনের স্বপ্ন ফুলশয্যা। থমকে গিয়েছিল এক নতুন জীবনের সূচনা। এদিন করোনা জয়ী স্বামীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পেরে খুশি বধূ পিয়ালী।
এদিন হাসপাতালে অনুষ্ঠানের পর সুপ্রিয় জানান, প্রথম দিন যথেষ্ট ভয় পেয়েছিলাম। তবে থানার বড়বাবু অরূপ রায় চৌধুরী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছিলেন কোনো ভয় নেই। তুমি সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরবে। এখন আর ভয় নেই। সকলকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই। তবে তিনি আবার শ্রীঘ্রই কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। বধূ পিয়ালী ব্যানার্জীরও চোখে মুখে তখন যুদ্ধ জয়ের হাসি। তিনিও জানালেন “সত্যিই ও যেদিন করোনা আক্রান্ত হয় সেদিন খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আজ সত্যিই চাপমুক্ত।
এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারলেন না তিনি। তবে তিনি যে কতটা আনন্দিত মুচকি হেসেই বুঝিয়ে দিলেন। এদিন তার সঙ্গে এসেছিলেন সুপ্রিয়র বাবা সুপ্রকাশ ব্যানার্জী ও দাদা সুমিত ব্যানার্জী। সুপ্রিয়কে নিয়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলান্সে করে বাড়ি ফেরেন। বাকিরা গাড়িতে বাড়ি ফেরেন। হাসপাতালের কর্তা শুভাশীষ মিত্র ও ডালিয়া মিত্র বলেন এটা জীবনের জয়গান।করোনা জয়ের অন্য আনন্দে মেতে উঠেছিল সকলে।