বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে যখন নির্বাচনী কার্যকলাপ, ভোট-পরবর্তী হিংসা, মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ ইত্যাদি নিয়ে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি, তখনই অন্যদিকে নিঃশব্দে আতঙ্ক বাড়িয়ে চলেছে কোভিড। এতদিন পর্যন্ত কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু সেই তরঙ্গ শীর্ষে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই দরজায় কড়া নাড়ছে তৃতীয় তরঙ্গ, অন্তত এমনটাই মত ভারতীয় বিজ্ঞানীদের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এভাবে কবিরের সংক্রমণ বাড়ছে সারাদেশে তাতে তৃতীয় তরঙ্গ আসা একবারেই নিশ্চিত। যদিও এই ভাইরাসের এই তৃতীয় তরঙ্গ কতদিন স্থায়ী হবে, সে সম্পর্কে এখনই কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। করোনার প্রথম আক্রমণের পর বেশ কিছুটা অসতর্ক হয়ে পড়েছিলেন অনেকেই আর সেই কারণেই দ্বিতীয় তরঙ্গের সামনে অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ। আর তাই তৃতীয় তরঙ্গ আছড়ে পড়ার আগে আগাম প্রস্তুতি একান্ত দরকার।
কেন আসতে পারে তৃতীয় তরঙ্গ?
করোনা ভাইরাসের তৃতীয় তরঙ্গ ভারতে আছড়ে পড়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত ভারতে বর্তমানে করোনানা ভাইরাসের অনেকগুলি ভেরিয়েন্ট নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে সবথেকে বিপজ্জনক হলেও ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাস। বিজ্ঞানীরা যার নাম রেখেছেন বি.১.৬১৭১৭। এই ভেরিয়েন্টটি ভারতে তৈরি এবং তা অত্যন্ত বিপদজনক। এখনো অবধি ইউকে ভেরিয়েন্ট, ব্রাজিল ভেরিয়েন্ট সহ আরো নানান রূপে ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ। এর মধ্যে আরেকটি বিকল্প যার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বারবার তা হল অন্ধপ্রদেশের ভেরিয়েন্ট। যা ভীষণই বিপদজনক হয়ে উঠেছে ভারতীয়দের জন্য। তবে এই ভেরিয়েন্টগুলি এখনো কয়েকটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ।
তৃতীয় তরঙ্গ কতখানি বিপদজনকঃ
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, দেশে এতগুলো ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার কারনেই করোনা ভাইরাসের তৃতীয় তরঙ্গ ভারতে আছড়ে পড়া প্রায় অবশ্যম্ভাবী। এখানে সবথেকে আতঙ্কের বিষয়টি হলো, প্রথম তরঙ্গের ক্ষেত্রে ভাইরাস ১০ দিনের মধ্যে ফুসফুসে নিজের সম্পূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হতো। দ্বিতীয় তরঙ্গে এই সময়টি কমে হয় ৫-৭ দিন। বিজ্ঞানীদের মতে তৃতীয় তরঙ্গটি আরও মারাত্মক হতে চলেছে। এক্ষেত্রে ভাইরাস ফুসফুসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে সময় নেবে মাত্র ২ থেকে ৩ দিন। অর্থাৎ তৃতীয় তরঙ্গটি এতটাই মারাত্মক হতে চলেছে যে অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসা করার সময় পাবেন না চিকিৎসকরা।
তৃতীয় তরঙ্গ শিশুদের ক্ষেত্রে কতটা মারাত্মকঃ
বিশেষত অন্ধ্রপ্রদেশের ভেরিয়েন্টটি অন্যান্য করোনা স্ট্রেনের থেকে অন্তত ১৫ গুণ বেশি সংক্রামক। এই ভাইরাসের আক্রমণে মাত্র দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই আইসোলেশনে চলে যেতে পারেন রোগী। আর এই জন্যই আরো সাবধানে থাকা দরকার। মাস্ক খুলে রাখা, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং পালন না করা এবং বার বার সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার না করা আপনাকে রীতিমতো বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। কিছু গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়েছে যে, ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ যুবকদের ক্ষেত্রে রীতিমতো সংক্রামক হয়ে উঠেছিল তাই তৃতীয় তরঙ্গ শিশুদের ক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক।
তৃতীয় তরঙ্গ থেকে বাঁচতে কী করনীয়ঃ
সুতরাং প্রতিটি পরিবারকে বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এখনো পর্যন্ত শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে ভাইরাসের এই তৃতীয় তরঙ্গ। সম্প্রতি সরকার ১৮ বছরের উপর বয়সী সকলের ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনো শিশুরা ভ্যাকসিন না পাওয়ায় তৃতীয় তরঙ্গ অনেক বেশী বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে তাদের ক্ষেত্রে। তাই এখন স্কুল বা কোন জনবহুল অঞ্চলে না যাওয়ায় তাদের পক্ষে ভালো। অন্যদিকে বাবা-মাকেও সর্বদায় কথা মাথায় রাখতে হবে যে শিশুরা যাতে মাক্স পড়ে থাকে এবং হাত পা সব সময় পরিষ্কার রাখে। কারণ তাদের অন্যমনস্কতাই হতে পারে বড় বিপদের কারণ।
শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন কবে আসবে?
যদিও ভারতে এই মুহূর্তে শিশুদের জন্য কোন ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়নি। তবে সেরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে অক্টোবরের শেষের দিকেই এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে আশার খবর দিতে পারে তারা। অন্যদিকে কোভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারত বায়োটেকও লাগাতার চেষ্টা করে চলেছে শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার এবং আশার কথা হলো এই মুহূর্তে পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে তাদের ভ্যাকসিন। তবে শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন তৈরীর কাজে এই মুহূর্তে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে আমেরিকান কোম্পানি ফাইজার। তাদের তৈরি ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে ১২ বছরের বেশি বয়সী শিশুর শরীরে প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে। এই মুহূর্তে তার ব্যবহার হচ্ছে কানাডায়। আশা করা যায় দ্রুত আমেরিকাতেও এই অনুমোদন মিলবে। যদিও ভারতে তৃতীয় তরঙ্গ যেভাবে এগিয়ে আসছে রাতে সময় মত ভ্যাকসিন পাওয়া যে খুবই কঠিন তা বলাই বাহুল্য। আর এই কারনেই আরো বেশি সাবধানতা অবলম্বন একান্ত প্রয়োজন।