বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নারদ কান্ড নিয়ে এই মুহূর্তে চরমে রাজ্য রাজনীতি। ইতিমধ্যেই আজ সকালে গ্রেফতার হয়েছেন পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র, এবং প্রাক্তন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। ২০১৬ সালে নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের করা এক স্টিং ফুটেজে প্রকাশ্যে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের একাধিক জনপ্রতিনিধিদের।
অভিযোগ ছিল কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। সিবিআইয়ের মতে ওই ভিডিওকারীর হাত থেকে চার লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তারপর থেকেই ঢিমে তালে এগোচ্ছিল তদন্ত। এরই মধ্যে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তারপর মতান্তরের কারণে নির্বাচনের আগেই বিজেপির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করেন তিনি। আর তারপরেই আজ সকালে তার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই।
শোভনের গ্রেপ্তারের কথা শুনেই সিবিআই দপ্তর ছুটে আসেন প্রাক্তন স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “শোভনের জন্যই তো সিবিআই দফতরে এসেছি। অন্য কোনও কারণে আসেনি। আইনজীবী দিয়েছি, দেখা যাক কী হয়।” একইসঙ্গে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভোটে জিততে পারেনি তাই এসব করছে।”
এবার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি নিয়ে মুখ খুললেন তার বর্তমান বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অনেকে মনে করেন তার কারণেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আজ তিনি বলেন,”করোনার থেকেও ভয়ংকর ভারতবর্ষের সরকার। করোনা থেকে মানুষ তো বেঁচে ফেরে…আজ গণতন্ত্রের জন্য কালো দিন। সমাজের অন্যতম সম্মানের স্তম্ভ যাঁরা, তাঁদের এভাবে নিয়ে এসেছে। আজ লজ্জার দিন।” একইসঙ্গে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করতে দেখা যায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তার মতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যাপ্টেনের মতো লড়াই করছেন। উনি যে সকলের মুখ্যমন্ত্রী সেটা তিনি দেখিয়ে দিলেন।
এদিন একইসঙ্গে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও দাবি করেন বৈশাখী। তিনি বলেন, আমার ঘরে একজন ভদ্রলোক ঢুকলেন, পিছনে সাঁই সাঁই করে একগাদা কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢুকল। আমার সঙ্গে আমার বাচ্চা মেয়ে ছিল। একজনও মহিলা আধিকারিক ছিলেন না। আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। তারপর বুঝলাম সিবিআই। আইনি ব্যবস্থা নেব। সিবিআই যখন তখন গ্রেফতার করতে পারে, এই দম্ভ ভাঙার দিন এসেছে। ঈশ্বর চাইলে সব ঠিক হবে।”
বৈশাখীর গলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অকুণ্ঠ প্রশংসা শুনে ফের একবার জল ঘোলা হল রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপির পর এবার কি তবে তৃণমূলের পথে তিনি। যদিও এ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে এদিন ফিরহাদ হাকিম প্রসঙ্গে মুখ খুললেন বৈশাখী। তিনি বলেন আজ সকাল থেকে ফিরহাদ হাকিমকে এখানে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পরিষেবা না পাওয়ার কারণে আজ যত প্রাণ যাবে তার জন্য দায়ী থাকবেন কেন্দ্র সরকার। সব মিলিয়ে এখন রীতিমতো সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল শোভনের তৃণমূলে থাকার ক্ষেত্রে।
শেষ পর্যন্ত দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মন মতো জায়গায় প্রার্থী না হওয়ায় ফের একবার দল ছেড়ে দেন প্রাক্তন কলকাতার মেয়র। বর্তমানে অবশ্য বেহালা পূর্বের বিধায়ক হয়েছেন শোভনের প্রাক্তন পত্নী রচনা চট্টোপাধ্যায়ই। আগামী দিনে শোভনের পাশে থাকবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে পাশে থাকার আশ্বাস এল বৈশাখীর তরফেও। এখন রাজ্য রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই