বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তিনি ট্রান্সজেন্ডার নারী, শুধুমাত্র সেই কারণেই হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে মারাত্মক রকমের লাঞ্চিত হতে হলো ঢোলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমনই এক জঘন্য অভিযোগ উঠল এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কয়েক দিন ধরে জ্বর ছিল শরীরে। আর সেই কারণেই শনিবার বেলা বারোটা নাগাদ এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে যান মানবী এবং তার স্বামী। কিন্তু স্বামীর পরীক্ষা করা হলেও, শুধুমাত্র ট্রান্সজেন্ডার নারী বলে দুর্ব্যবহার করা হয় মানবীর সঙ্গে। এমনকি তার করোনা পরীক্ষা করতেও রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মানবী শুধুমাত্র একটি নামকরা কলেজের অধ্যাপিকাই নন, ট্রান্সজেন্ডার ট্রান্সপার্সন বোর্ডের সহ অধ্যক্ষও বটে। তিনি জানান, এদিন হাসপাতালে আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে সেই কার্ডও দেখাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরেও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা বন্ধ হয়নি। এমনকি তাকে পাগল বলেও অভিযোগ করা হয়। গোটা ঘটনাটি ইতিমধ্যেই মেইল করে স্বরাষ্ট্র সচিব, বিধায়ক নির্মল মাঝি, মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারপার্সন শশী পাঁজাকে জানিয়েছেন তিনি।
মানবীর দাবি, “হাসপাতলে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলাম। জ্বর ছিল। আমার স্বামীর করোনা পরীক্ষা করা হলো। অথচ আমাকে ‘মেন্টাল’ বলে তাড়িয়ে দেওয়া হলো। আমি ট্রান্স নারী। তাই আমার করোনা পরীক্ষা করা হলো না।”
ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি জানান, “এক মহিলা সিকিউরিটি আমার দিকে রীতিমতো তেড়ে আসেন। যে ব্যবহার করলেন তা কুকুর-বেড়ালের সঙ্গেও কেউ করে না। এই ঘটনা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলে সবুজ গাউন পরিহিত দু’জন এলেন। তাঁদের কার্ড দেখাতে চাইলাম যে আমি ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের ভাইস চেয়ারপার্সন, কিন্তু ওঁরা দেখেলন না বরং তাড়িয়ে দিলেন।”
তিনি আরও জানান, হাসপাতাল সুপারেরও খোঁজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথমে তাকে বলা হয় সুপার নেই। পরবর্তী ক্ষেত্রে আবার জানানো হয় সুপার এসেছেন তবে তিনি দশ তলায় রাউন্ডে গিয়েছেন। এই চরম অপমানের সম্মুখীন হওয়ার পর পরীক্ষা না করিয়েই ফিরে আসেন মানবী। ইতিমধ্যেই মানবিক স্বামীর করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। শুধুমাত্র ট্রান্স নারী বলেই কি তার অধিকার নেই করোনা পরীক্ষা করানোর?
হাসপাতালের সুপার শিশির নস্করও অবশ্য মুখ খুলেছেন এই ঘটনা নিয়ে। তার দাবি, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই সহকারি সুপার মানবীর কাছে যান। ওনার কাছে জানতে চাওয়া হয় কার বিরুদ্ধে ওনার অভিযোগ। পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়। কিন্তু উনি আর পরীক্ষা করাতে চান নি। তিনি এও বলেন, যে কেউ যেকোনো মুহূর্তে তার সঙ্গে দেখা করতে পারে। এমনকি রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডও রয়েছে এই হাসপাতালে।
কিন্তু মানবীর দাবি তিনি যে ব্যবহার পেয়েছেন তারপরে আর পরীক্ষা করাতে ইচ্ছে করেনি তার। সরকারি হাসপাতালে তার মতো একজন পরিচিত মুখের সঙ্গেও যদি এ ধরনের অভব্য আচরণ হয়, তাহলে বাকিদের সঙ্গে কি হবে? তার মতে সরকার তো চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে মানুষ যদি কুসংস্কার পুষে রাখেন তাহলে কিকরেই বা কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব?