বাংলাহান্ট ডেস্কঃ সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেটে ধর্মের জায়গায় লেখা হল ‘মানবধর্ম’। হিন্দু, মুসলমান বা খ্রিস্টান নয়, মানবতাকেই সবচেয়ে বড় বলে মনে করেন রানাঘাট-২ নম্বর ব্লকের আইশমালির পুরাতন পাড়ার বাসিন্দা স্বরূপ মুখোপাধ্যায় এবং মৌমিতা মুখোপাধ্যায়। সেই কারণে সন্তান সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বার্থ সার্টিফিকেটে ধর্ম উল্লেখ করলেন ‘হিউম্যানিজম’ বা ‘মানবধর্ম’।
জীবনের প্রথম পর্ব থেকে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্বরূপ মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে সিপিএমের যুব সংগঠন DYFI রাজ্য কমিটির সদস্য তিনি। প্রথম থেকেই কিছুটা ভিন্ন চিন্তাধারা তার। জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকল মানুষকে সমান ভাবেই দেখেন তিনি। চাষাবাদের মাধ্যমে সংসার চললেও, মানুষের সেবা করা, সর্বোপরি মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই সবচেয়ে বড় ধর্ম বলে মনে করেন তিনি।
স্বরূপবাবু জানান, ‘২০২০ সালে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে চাকদহের ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা মৌমিতার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। ওঁর চিন্তাধারাও আমার মতই। বিয়ের রেজিস্ট্রেশনেও আমরা মানবধর্মকেই উল্লেখ করি। এমনকি NRC বিরোধী পোস্টারে সাজানো হয়েছিল আমাদের বিয়েবাড়ি চত্বর। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের সন্তানও, জাতপাতের গন্ডি টপকে সকলের পাশে থাকুক’।
এই মর্মে রানাঘাটের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে গত ৫ ই এপ্রিল তাদের সন্তানের জন্মগ্রহণের পর, সন্তানের জন্ম শংসাপত্র পাওয়ার জন্য রানাঘাট পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। সেই সঙ্গে ধর্মের স্থানে ‘মানবধর্ম’ লেখার আবেদন করেন। এমন আবেদন পেয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায় রানাঘাট পুরকর্তৃপক্ষ। পুরসভা এই বিষয়ে প্রথমে কিছুটা আপত্তি করলেও, পরবর্তীতে সম্মতি দিল রানাঘাট মহকুমা প্রশাসন। সদ্যজাত সন্তানের ধর্মের জায়গায় লেখা হল ‘মানবধর্ম’।
এবিষয়ে স্বরূপবাবু জানান, ‘সন্তানের ধর্মকে মানবধর্ম করার রাস্তা সহজ ছিল না। এর জন্য আমাকে প্রশাসনের দ্বারস্থও হতে হয়েছিল। কাতরভাবে আবেদন করার পর, অবশেষে আমাকে মান্যতা দেয়। এই মর্যাদা পেয়ে আমরা খুবই খুশি’।