বাংলা হান্ট ডেস্ক: সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর কৃষকরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এই ক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন মাত্রা স্থাপন করছেন। উত্তরপ্রদেশের গুলাম মহম্মদের কাহিনিও ঠিক সেইরকমই। কৃষিকাজের মাধ্যমেও যে ভালো অঙ্কের লাভ করা যেতে পারে তা প্রমাণ করেছেন গুলাব।
পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলার বাসিন্দা গুলাম মহম্মদ দেখিয়ে দিয়েছেন যে, আবেগের সাথে অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রম করার সাহস থাকলে সাফল্য আসতে সময় লাগে না। যেই কারণে তিনি আজ ৫৪ বছর বয়সে, কেবলমাত্র রাজ্যের অন্যতম বিখ্যাত কৃষকই নন, পাশাপাশি, তাঁর বার্ষিক টার্নওভার ৪ কোটি টাকারও বেশি।
১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিকে, বাড়িতে আর্থিক দুর্বলতার কারণে, তিনি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার পরই স্কুল ছেড়ে দেন এবং তাঁর পিতার সাথে তাঁদের এক একর জমিতে কাজ শুরু করেন। সেখানে গুলাম গম, ধান, আলু এবং টমেটো চাষ করতেন। তবে, এই কাজও তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
১৯৮৫ সাল নাগাদ, ১৮ বছর বয়সে গুলাম নগর পঞ্চায়েতে কেরানি হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং প্রতিদিন ১১.৫০ টাকা উপার্জন করতেন। এই কাজ তিনি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে করেছিলেন। যদিও, তিনি তাঁর মাসিক বেতনে সন্তুষ্ট ছিলেন না। স্বাভাবিকভাবেই, তারপরও কৃষিকাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল এবং তিনি চাকরির পাশাপাশি চাষাবাদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। গুলাম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এমন ফসল ফলাতেন যা থেকে বেশি অর্থ পাওয়া যায়।
একটা সময়ে তিনি চাকরি ছেড়ে আবারও পুরোপুরি কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ধীরে ধীরে চাষের প্রতি তাঁর আগ্রহ আরও বাড়তে থাকে। ২০০০ সালে তিনি কলার চাষে ৫,৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে ৪০,০০০ টাকা লাভ করেন। এরপর তিনি কলা চাষে মনোযোগ দিয়ে ২৪ একরেরও বেশি জমিতে চাষ শুরু করেন। ২০বছর পরে, ২০২০ সালে, যখন সমগ্র বিশ্ব করোনা মহামারীর প্রভাবে বিপর্যস্ত ছিল, তখনও গুলাম ৮৫ লক্ষ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এছাড়াও তাঁর একটি মুরগির ফার্ম রয়েছে। পাশাপাশি, তিনি এক একর জমিতে কাশ্মীরি আপেল চাষ করেছেন। তবে এখানেই শেষ নয়, আলু, তরমুজ সহ আরও একাধিক লাভজনক চাষের সাথে বর্তমানে যুক্ত রয়েছেন গুলাম।
এখন গুলাম শুধুমাত্র রাজ্যের একজন স্বনামধন্য কৃষকই হয়ে ওঠেননি, বরং উত্তরপ্রদেশ সরকারের পাশাপাশি কৃষি প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রগতিশীল চাষের জন্য ASM উদ্যান রত্ন পুরস্কার এবং অন্যান্য সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন।
তিনি দেশের কৃষকদের ধান এবং গম চাষের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের চাষের পরামর্শ দিয়েছেন কারণ এটি বেশি লাভজনক। যদিও, গুলাম বিশ্বাস করেন যে, চাষের প্রতি তাঁর ভালবাসাই তাঁর সাফল্যের কারণ। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান যে, “আপনি পেশাগতভাবে যা করছেন তার জন্য আপনাকে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত হতে হবে এবং এতে সাফল্য অবশ্যই আপনারা কাছে আসবে।”