বাংলা হান্ট ডেস্ক: ছোট থেকেই আমরা জেনে আসছি যে, পৃথিবীর তিনভাগ জল এবং একভাগ স্থল। এমতাবস্থায়, সমুদ্রের জলের কোনো অভাব নেই বিশ্বে। এমনকি, সমুদ্রের (Sea) নিচেও কার্যত রয়েছে আলাদা এক জগৎ। যার মধ্যে এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত অবস্থাতেই থেকে গেছে। বিভিন্ন প্রাণীর উপস্থিতির পাশাপাশি সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে বিপুল খনিজ সম্পদও। এমনকি, সমুদ্রের ঢেউতেও রয়েছে তার উপস্থিতি। যা দূর করে দিতে পারে ভবিষ্যতের চিন্তা।
শুধু তাই নয়, মিটে যেতে পারে জ্বালানি সমস্যাও। কারণ সমুদ্রের নোনা জলে রয়েছে তেজস্ক্রিয় ধাতু ইউরেনিয়াম। তবে, সামগ্রিকভাবে বিষয়টা সহজ মনে হলেও আদৌ কিন্তু তা নয়। বরং, সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে ওই ধাতুকে বের করাটাই এক চ্যালেঞ্জের বিষয়। যদিও, এবার সেই অসম্ভবকে কার্যত সম্ভব করে দেখালেন বাংলার এক বিজ্ঞানী। জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার বাসিন্দা সুজিত কুমার ঘোষের এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির একটি পত্রিকায়।
পাশাপাশি, এই আবিষ্কারের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে সবমহলে। মূলত, পুণের ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সুজিতবাবুর তত্ত্বাবধানে পিএইচডি করা সমরাজ মল্লিক ওই গবেষণাপত্রটি লিখেছেন। তবে, গোটা গবেষণাটির নেপথ্যে রয়েছেন সুজিতবাবুই। এমতাবস্থায়, তিনি জানিয়েছেন, ভূগর্ভে সঞ্চিত ইউরেনিয়াম থেকে খুব বেশি হলে ১০০ বছর যাবৎ জ্বালানির সঙ্কট মেটানো যেতে পারে। এদিকে, কয়লার অপ্রতুলতাও ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বৃদ্ধি পাবে পারমাণবিক বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা। তখন আবার টান পড়বে ইউরেনিয়ামের ভাঁড়ারে।
তবে, সমুদ্রের জলেই কার্যত লুকিয়ে রয়েছে মুশকিল আসান! তিনি জানিয়েছেন, সমুদ্রের জলে যে পরিমান ইউরেনিয়াম সঞ্চিত রয়েছে, তাতে আগামী ১,০০০ বছর পর্যন্ত জ্বালানির কোনো চিন্তা থাকবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ধাতব জৈব যৌগ তৈরিতে সুজিতবাবুর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক তথা কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমুমু কিতাগাওয়া সারা বিশ্বজুড়েই সমধিক পরিচিত। তাঁর কাছ থেকেই এই গবেষণার মূল ধারণা পান তিনি। পরবর্তীকালে নিজস্ব পদ্ধতিতে সুজিত বাবু নতুন ধরনের যৌগ প্রস্তুত করেছেন। ওই যৌগকে নির্দিষ্ট কিছু উপায় অবলম্বন করে অ্যাসিডে ফেললে তৈরি হয় ইউরেনিয়াম দ্রবণ। যেটির ধর্ম খনিতে পাওয়া ধাতুটির মতোই থাকে।
এদিকে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সমুদ্রে থাকা ইউরেনিয়ামের পরিমান প্রায় ৪৫০ কোটি মেট্রিক টন। যদিও, জলে মিশে থাকা অবস্থায় সেটির ঘনত্ব খুবই কম রয়েছে। এই প্রসঙ্গে সুজিতবাবু জানিয়েছেন, ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো মৌল থেকেই ইউরেনিয়ামকে পৃথক করা সবথেকে কঠিন ব্যাপার। এমনকি, বিদেশেও বহুবার এই সংক্রান্ত চেষ্টা করা হলেও মেলেনি লাভ। যদিও, সুজিতবাবুদের তৈরি যৌগটি লাভজনকভাবে ইউরেনিয়াম আহরণের পথ দেখিয়েছে।
মূলত, ওই ধাতুর সঙ্গে জৈব যৌগ মিশিয়ে মেটাল অর্গ্যানিক ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত করা হয়। সেখানে থাকা মাইক্রোপোরস দিয়েই প্রবেশ করে তেজস্ক্রিয় ধাতু। তারপরেই দেখা যায়, দু’ঘণ্টার মধ্যে জলের ৯৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম শোষণ করে ফেলেছে সেই যৌগ। শুধু তাই নয়, ওই পদ্ধতির মাধ্যমে মাত্র দু’দিনের মধ্যেই ব্যবহারের উপযোগী ইউরেনিয়াম সঞ্চয় করা সম্ভব বলে জানা গিয়েছে।