বাংলাহান্ট ডেস্ক : বিশেষ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Banerjee) হয়ে মামলায় এক বার দাঁড়ানোর ফি হিসেবে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে ২৫ লক্ষ টাকা মেটানোর নির্দেশ দেয় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর (Home Ministry of State)।
কেন্দ্রের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে আলাপনকে সম্পূর্ণ আইনি সহায়তা দিচ্ছে রাজ্য। প্রশাসনের সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই মামলায় বেশ কয়েক বার আলাপনের হয়ে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন অভিষেক। প্রতিবারই তাঁর সেই ‘পারিশ্রমিক’ মেটায় রাজ্য সরকারই। সেই খাতে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় কয়েক কোটি টাকা।
রাজ্যের অর্থনীতি ধুঁকছে। বন্ধ একাধিল প্রকল্প। এই পরিস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত আধকারিক আলাপনকে কেন আইনি সহায়তা দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য এই কেনই বা এই বিপুল পরিমাণ টাকা গোনা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তবে রাজ্যের তরফ থেকে সাফাই দেওয়া হয়েছে, যে ঘটনার সূত্রে এই আইনি লড়াই চলছে, সেই ঘটনা যখন ঘটে আলাপন তখন রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে কর্মরত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই কাজ করেছিলেন তিনি। ফলে তাঁকে আইনি সহায়তা দেওয়া রাজ্যের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
প্রাক্তন আমলার বিরুদ্ধে কেন্দ্র শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনে। আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর আলাপন কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের (ক্যাট) কলকাতা বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। পরে অবশ্য তা দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যায় কেন্দ্র। তার পর থেকেই রাজ্যের প্রাক্তন প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপনের পাশে রয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রশাসনিক সূত্রের জানা যাচ্ছে, গত ২০ সেপ্টেম্বরে নির্দেশিকা জারি করে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে ২৫ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক দিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। এ পর্যন্ত মোট কয়েক কোটি টাকা আইনি খরচ মেটানো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানান, রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে আলাপন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানতে বাধ্য। গত বছর কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে পুরো সময় থাকার বদলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই রাজ্য সরকারের কর্মসূচিতে যোগ দিতে হয় তাঁকে। আলাপনের খারাপ সময়ে তাঁর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আর এই আইনি খরচের ভার বহন করছে স্বরাষ্ট্র দফতর। আলাপন বর্তমানে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্ণধার। তাছাড়া তিনি মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য পরামর্শদাতাও। ফলে রাজ্যের থেকে আইনি সুবিধা পেতেই পারেন। এতে অন্যায়ের কিছু নেই বলেই মনে করছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহল।
তবে রাজ্যের আমলাদের অনেকের মতে, রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে আলাপনের চাকরিজীবনের মেয়াদ তিন মাস বাড়ায় কেন্দ্র। সেই সময়কালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ‘অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিটি’ তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু চাকরিবৃদ্ধির সুযোগ না নিয়ে বরং অবসরগ্রহণ করেন আলাপন। তার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে কেন্দ্র। এর প্রতিবাদে রাজ্যের ক্যাটে মামলা করেন আলাপন। পরে আবার তা দিল্লির ক্যাটে সরিয়ে নিয়ে যায় কেন্দ্র। কলকাতা ক্যাটের বেঞ্চ চেয়ে আবার মামলার পথে হাঁটেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব। সেই মামলারই এখন সহায়তা দিচ্ছে রাজ্য। এই সমস্ত ঘটনাই ঘটেছে আলাপনের অবসরকালে। ফলে রাজ্যের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার তাঁর নেই।