বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতবর্ষে গরু কেবল একটি গবাদি পশুই নয়। আপাত ভাবে নিরীহ এই প্রাণীটিকে অনেকে ভগবানের রূপ মনে করেন। একটু গ্রামের দিকে গেলে গরুকে নিজের সন্তানের মতোই মনে করেন গৃহস্থরা। এছাড়াও রাজনীতির ময়দানেও গরুর ব্যবহার দেখা গিয়েছে একাধিক বার। অর্থাৎ বলা যেতে পারে গরু একটি রাজনৈতিক প্রাণীও বটে।
ভারতীয়দের মধ্যে গরু নিয়ে যে উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়, তারই একটি নিদর্শন সামনে এসেছে। পোষা গরুকে নিজের সন্তানের চোখে দেখা দুই পরিবার এ বার তাদের বিয়ে দিয়ে দিল। একটি বাছুর ও গাভীর বিয়ে (Cow Marriage) দেওয়া হয়েছে মধ্যপ্রদেশের খারগোনে। সেই বিয়ে দেখতে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন! রীতিমতো ধুমধাম করে মানুষের বিয়ের মতোই এই বিয়েও দেওয়া হয়েছে।
মানুষের বিয়েতে যেমন কনের বাড়িতে শোভাযাত্রা করে বর যায়, তেমনই বাছুরটির জন্যেও শোভাযাত্রা বের করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, রীতিমতো পুরোহিত দিয়ে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে বিয়ে হয়েছে এই গো-দম্পতির। আগুনের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণও করেছে তারা। একইসঙ্গে একে অপরের সঙ্গে জীবন কাটানোর অঙ্গীকারও করেছে।
এই অভিনব বিয়ে দেখতে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। নিমন্ত্রিতদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। বিয়েতে উপস্থিত নিমন্ত্রিতদের বক্তব্য, এমনিতে দেখে বোঝাই যায়নি যে এটি কোনও মানুষের বিয়ে নয়। মানুষের বিয়েতে যা রীতিনীতি মানা হয়, এখানেও তেমনই রীতি মানা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, বিয়ের দিন সকাল ১১ টা নাগাদ বাছুরের বাড়ি থেকে গাভীর বাড়ির উদ্দেশ্যে শোভাযাত্রা বের হয়।
সেই শোভাযাত্রায় ডোল, ডিজে, তাসা- সমস্ত রকমের আয়োজন ছিল। তাদের বাজনার তালে নাচতে নাচতে সকলে গাভীর পরিবারের বাড়ির দিকে যান। এরপর তারা কনের বাড়ি গেলে সেখানে সমস্ত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। এই বিয়েদে গাভী ও বাছুরটিকে নতুন পোশাক পরিয়ে একদম বর-কনের মতোই সাজানো হয়। এই বিয়েতে উভয় পরিবারের আত্মীয়-স্বজন সহ চারটি গ্রামের মানুষ নিমন্ত্রিত ছিলেন। যথেষ্ট আড়ম্বরের সঙ্গেই প্রাণী দু’টির বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, খারগোন জেলার প্রেম নগরে দুই পরিবার তাঁদের বাছুর ও গাভীটিকে নিজের সন্তানের মতোই লালন-পালন করেছে। গাভীর পরিবার সূত্রে খবর, তার বাবা-মায়ের ১৫ বছরেও কোনও সন্তান হয়নি। তাই গাভীটিকেই নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করেছেন। অন্যদিকে, বাছুরের পরিবারও তাকে নিজেদের ছেলের মতোই লালন-পালন করেছে।
সেই কারণে দুই পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়, তাঁদের ‘ছেলে ও মেয়ে’র বিয়ে দেওয়া হবে একে অপরের সঙ্গে। সেই মতোই সমস্ত আয়োজন করে আড়ম্বরের সঙ্গে এই বিয়ে দেওয়া হয়। গাভীর পরিবার নিজেদের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও গ্রামবাসীদেরও নিমন্ত্রণ করেছিল। দুই পরিবারের ইচ্ছে এখন পূরণ হয়েছে। সুখে-শান্তিতে সংসার করছে সদ্য বিবাদিত এই গো-দম্পতি।