বাংলা হান্ট ডেস্ক : ইডি এবার তদন্ত শুরু করেছে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) বিনিয়োগ নিয়ে। তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডি জানিয়েছে, মাসে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা প্রোটেকশন মানি হিসাবে দিতে হত সায়গল হোসেনকে। অনুব্রত নিজেই জানান সেই টাকা নিতেন সায়গালই। বিশেষ একটি হাট থেকেই সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার গরু পাচার হত।
এই হিসাবেই ঠিক হত ‘প্রোটেকশন মানি’। পাচারের পরিমাণ বেশি হলে বেড়ে যেত প্রোটেকশন মানি’র অঙ্কও। শুধু তাই নয়, অনুব্রত মণ্ডলের সাহায্যে গরু পাচারের কিংপিন এনামুল হক পাচারের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বালি পাচার ও পাথর খাদান ব্যবসাতেও। সেই ব্যবসা থেকেও ২ কোটি টাকা দিতে হত সায়গলকে। ‘প্রটেকশন মানি’ ১৫ দিন কিংবা এক মাস অন্তর জমা দিতে হত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিক।
কিন্তু এই প্রোটেকশন মানি কী? কেনই বা দিতে হত সায়গলকে এই টাকা? ইডি আধিকারিকরা জানান, বিনা বাধায় গরু যাতে বীরভূম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশ চলে যায়, সীমান্ত পর্যন্ত কোনও বাধায় যাতে পড়তে না হয়, তার জন্য গোটা বিষয়টিই দেখাশুনো করত সায়গল ও তাঁর বাহিনী। আর তারই পুরস্কারস্বরূপ এই ‘প্রোটেকশন’ দিতে হত। বীরভূম করিডর হয়েই যে সব থেকে বেশি গরু পাচার হত, তা তদন্তে আগেই জানা গিয়েছে। ঝাড়খণ্ড থেকে বীরভূম হয়ে মালদা, মুর্শিদাবাদ হয়ে গরু পাচার হত। আর যে রাস্তা দিয়ে তা হত, সেখানেই আগে থেকে মোতায়েন থাকতেন অনুব্রত বাহিনী। নির্বিঘ্নে বিধা বাধায় পাচার হয়ে যেত গরু। সায়গলকে পাঁচ কোটি ‘প্রোটেকশন মানি’দিতেন অনুব্রত।
অনুব্রতর জন্যেই গত কয়েক বছরে বিরাট অংকের টাকা পয়সার মালিক হয়ে ওঠে এনামুল হক। বালি পাচার, পাথর খাদানের ব্যবসা চলে, তাতেও বেশ দক্ষ হয়ে ওঠে এনামুল। সেখানেও মাসে কম করে ২ কোটি টাকা ‘প্রোটেকশন মানি’দিতে হত। গরু পাচারের টাকা বিনিয়োগ হত অন্য ব্যবসাতেও। এনামুলের ভাগ্নেদের ব্যবসা, বিদেশে জাহাজ-সবই গরু পাচারের টাকাতেই হত বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করার জন্য ইডি-র হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল বেশ কয়েকটা স্টেটমেন্ট। এখনও পর্যন্ত এনামুল হক, সায়গল হোসেন, হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি ও আরও বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্যের ভিত্তিতে অনুব্রতকে প্রশ্ন করবেন ইডির আধিকারিকরা। সবথেকে প্রথমে যে প্রশ্নটা করা হতে পারে, তা হল এনামুল হককে কীভাবে চেনেন অনুব্রত? সিবিআই-ও আগে এই প্রশ্ন করে। তাতে অনুব্রত মণ্ডল জবাব দিয়েছিলেন, তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা, তাঁর কাছে বহু লোক দেখা করতে আসে, সবাই তাঁকে চেনেন, কিন্তু তিনি যে সবাইকে চিনবেন, এরকম কোনও মানে নেই।