বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে মেডিকেলে ভর্তি (MBBS Admision Scam) মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির সংঘাতের জের। এমবিবিএসে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা সরল সুপ্রিম কোর্টে। আগামী ৩ সপ্তাহ পর সর্বোচ্চ আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি। মামলার সব পার্টিকে আদালতে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগের শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) মেডিক্যালে দুর্নীতি মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মামলার অনুমতি চেয়েছিল রাজ্য।এদিন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের তরফে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে শুনানির বিরুদ্ধে সওয়াল করা হয়। বিচারপতির নাম উল্লেখ না করেই রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ”সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি পদযাত্রায় যাচ্ছেন।”
শুধু তাই নয়, পাশাপাশি একক বেঞ্চে মামলা থেকে গেলে ফের একই ঘটনা ঘটবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন রাজ্যের আইনজীবী। ওদিকে এর আগের শুনানিতে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি (Abhishek Singhvi), বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে তার মক্কেলের কিছু বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরতে চান। মামলায় যুক্ত হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন অভিষেক। এদিন নেতার আইনজীবী বলেন, অতীতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে একটি মামলা সরিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে এতকিছুর পরও তিনি ‘অবাঞ্ছিত’ মন্তব্য করেই চলেছেন।
সমস্ত বিষয় শোনার পর দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চ নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আমরা সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। কলকাতা হাই কোর্টের মর্যাদা যাতে কোনও ভাবেই ক্ষুন্ন না হয় সেই দিকে নজর রাখতে হবে। কোন বেঞ্চে কোন মামলা যাবে, তা ঠিক করবেন হাই কোর্টের প্রধান বিচাপতি।”
প্রসঙ্গত, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। রাজ্য পুলিশের ওপর ‘ভরসা’ না থাকায় এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে বিচারপতি সৌমেন সেনের (Justice Soumen Sen) ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের ওপর মৌখিক স্থগিতাদেশ জারি করে ডিভিশন বেঞ্চ।
এ কথা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে জানান রাজ্যের আইনজীবী। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি। মামলার লাইভ স্ট্রিমিং অথবা স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে বলেন। লিখিত স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। রায়ের কপি না দেখেই কিভাবে স্থগিতাদেশ জারি করা হল! এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরই সিবিআইকে সমস্ত নথি নিয়ে তত্ক্ষণাত্ এফআইআর করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
পরদিন বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, বড়দিনের ছুটির আগে শেষ যে দিন আদালতের কাজ হয়, সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়ে বিচারপতি সেন বিচারপতি সিনহাকে কিছুটা রাজনৈতিক নেতার মতো নির্দেশ দিয়ে বলেন, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা রাজনৈতিক ভবিষ্যত রয়েছে। তাই তাকে বিরক্ত করা চলবে না না।
এখানেই শেষ নয়, বিচারপতি সিনহার বেঞ্চের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করার পাশাপাশি তার বেঞ্চে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে ২টি মামলা রয়েছে তা খারিজ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান যে বিচারপতি সিনহাই তাকে এই বিষয়ে সবটা জানিয়েছেন। বিচারপতি সেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলেও এদিন মন্তব্য করেন বিচারপতি গাঙ্গুলি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৌমেন সেনকে বিচারপতির পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই সোমবারের শুনানিতে মেডিক্যাল দুর্নীতি মামলা হাই কোর্ট থেকে সরল সুপ্রিম কোর্টে।