সিঁদুরদান থেকে মালাবদল! সাথে জনম জনম পাশে থাকার অঙ্গীকার, রাজ্যের এই জেলায় হল বন্ধুত্বের মেলা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বাঙালিদের উৎসবের শেষ নেই। প্রত্যেকদিন যেন কোন না কোনও উৎসব লেগেই রয়েছে আর এই উৎসবের মধ্যে সবথেকে বেশি আকর্ষণ করে যেটা, সেটা হচ্ছে মেলা। গ্রাম বাংলার মিলনের উৎসব হচ্ছে এই মেলা। তবে শুধু গ্রাম বাংলাই নয়, আজকাল শহরেও দেখা যাচ্ছে মেলার সমাহার। যা মানুষকে বেশ মুখরিত করে তুলেছে। কিন্তু, কখনও কি শুনেছেন বন্ধুত্বের মেলা হয়? হ্যাঁ বন্ধুত্বের দিবস তো আছে-একথা যেমন সত্য কিন্তু বন্ধুত্বের উৎসবের (Friendship Festival) কথা অনেকেরই অজানা। তবে, খোদ বাংলার বুকে পালিত হচ্ছে বন্ধুত্বের উৎসব অর্থাৎ সয়লা উৎসব।

কোথায় পালিত হল এই উৎসব (Friendship Festival):

এই ডিজিটাল যুগে বন্ধু পাতানো অত্যন্ত সহজ। একটি ক্লিক করলেই সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকবে আপনার বন্ধুর সংখ্যা। কিন্তু সবাই সত্যি কি বন্ধু হল? মনে একটা গভীর প্রশ্ন থেকে যায়! বন্ধুত্ব মানে হচ্ছে দুই মনের মিল, দু’জনের  মধ্যে বিশ্বাস, সেইসাথে সারাজীবন একসাথে থাকার অঙ্গীকার। আর এবার এই বন্ধুত্ব নিয়েই বাঁকুড়ায় পালিত হচ্ছে বন্ধুত্ব উৎসব (Friendship Festival)। বাঁকুড়ার সীমান্তবর্তী ইন্দাস ব্লকের আকুই গ্রামে পালিত হয় এই উৎসব। গ্রামের বাসিন্দারা এই উৎসবকে বলে থাকেন “সয়লা উৎসব”। আর এই উৎসব কিন্তু কোনও সাধারণ উৎসব নয়। এই উৎসবে একে অপরের গলায় মালা পরানো হয়। সেই সাথে কপালে সিঁদুর এবং চন্দনের তিলক লাগিয়ে, বরণ করে সকলে নিজেদের সখী এবং সখা পাতিয়ে নেন।

বাঁকুড়ার অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রাম আকুই। যেখানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর সয়লা উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসব পালনের জন্য প্রায় একমাস আগে থেকে শুরু হয় তোড়জোড়। এমনকি এই গ্রামের বাসিন্দারাও পাঁচ বছর ধরে এই উৎসবের (Friendship Festival) জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। জানা গিয়েছে, এই উৎসবের বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। এই উৎসবের আরম্ভের এক মাস আগে থেকেই গ্রামের সমস্ত মন্দিরে গিয়ে পান-সুপারি দিয়ে দেব-দেবীদেরকে আমন্ত্রণ জানান গ্রামবাসীরা।

Know about friendship festival.

এরপর সয়লা উৎসবের দিন শোভাযাত্রা করে গ্রামের সমস্ত দেব-দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় মাঠে। পুজোর মাধ্যমেই শুরু হয় এই উৎসব (Friendship Festival)। পুজোর পর পালন করা হয় বন্ধুত্ব পাতানোর পর্ব। সেখানে সকলে নিজের পছন্দমত ব্যক্তিকে খুঁজে নিয়ে বানিয়ে নেন বন্ধু। পছন্দের বন্ধুকে গলায় মালা পরিয়ে, মাথায় সিঁদুরের তিলক লাগিয়ে বরণ করে সই পাতিয়ে নেন। সেই সাথে মন্ত্রের সাহায্যে সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকা শপথ নেন তাঁরা। এভাবেই চলে “সয়লা উৎসব”।

আরও পড়ুন: হয়ে গেল কনফার্ম! দ্বিতীয় টেস্টে বাড়বে টিম ইন্ডিয়ার শক্তি, সুযোগ পাবেন এই তারকা খেলোয়াড়

জানা গিয়েছে, এই উৎসব বিগত ১৫০ বছর আগে শুরু হয়। সেই সময় এলাকায় বর্ণভেদ প্রথার রীতি বেশ চলতো। যার ফলে এই প্রথাকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় কোনও না কোনও কারণে অশান্তি দেখা দিত। এই সময় তৎকালীন বর্ধমানের রাজার এক নায়েব এলাকায় খাজনা আদায় করতে আসেন। এলাকার এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতি দেখে তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ওই এলাকায় পুজোর মধ্যে দিয়ে সকলের মধ্যে একতা তৈরি করবেন। আর সেই থেকে শুরু হয় এই উৎসব (Friendship Festival)।

আরও পড়ুন: সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান গ্রামের বাসিন্দারা! মনের জোরে IAS অফিসার হয়ে তাক লাগালেন প্রিয়া রানি

এবার ২০২৪-এও সেই উৎসবে শামিল হতে দেখা যায় আকুই গ্রামের বাসিন্দাদের। আট থেকে আশি সকলেই এই দিন বন্ধুত্ব দিবস পালন করতে জড়ো হন। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সকলের বন্ধু (Friendship Festival) সেটাই প্রমাণ করেন এই উৎসবে।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর