বাংলাহান্ট ডেস্ক : হিন্দিতে একটা কথা আছে “কুছ পানে কে লিয়ে কুচ খোনা পারতা হে!” অর্থাৎ জীবনে বড় হতে গেলে জীবনে অনেক কিছু বিসর্জন করতে হয়। তাহলে আকাশ ছোঁয়া সাফল্য পাওয়া যায়। আর যদি কথা হয় UPSC পরীক্ষার অর্থাৎ আইএএস (IAS) পদে চাকরির তাহলে তো কত কিছু হারাতে হয় তা বলার বাইরে। কারণ এটা কোনো সাধারণ পরীক্ষা নয়। এর জন্য সাধনা করতে হয়। প্রতিবছর হাজার হাজার পরীক্ষার্থীরা ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেও খালি হাতে ফিরে আসেন।
দুর্দান্ত সাফল্য IAS সুরভী গৌতমের
তবে যারা পাশ করেন তাদের মধ্যে থাকতে হয় লড়াই করার জেদ। তারই মধ্যে একজন হলেন সুরভী গৌতম। যার কাছে ইংরেজি ছিল বাঘ, ভাল্লুক। আজ সফল আইএএস (IAS) অফিসার হলেও তার স্বপ্নে গড়ার সামনে ছিটানো ছিল প্রচুর কাঁটা। জানা যায়, সুরভি গৌতম (Survi Goutam) ছিলেন একজন মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার আমদারা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী আর মা স্কুলের শিক্ষিকা।
আরোও পড়ুন : শীতকালেও কথা বলবে আপনার ত্বক! শুধু মেনে চলুন এই কয়েকটি টিপস্, রুক্ষ স্কিনও হবে ঝলমলে
সুরভি ছোট থেকেই একজন হিন্দি মিডিয়ামে ছাত্রী । ফলে ইংরেজির তুলনায় হিন্দি চর্চা বেশি হতো। তার উপর গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় পড়াশোনার যে খুব বেশি সুবিধা ছিল তেমনটা নয়। তবে সুবিধার ভান্ডার শূন্য থাকলেও মেধার ভান্ডার অফুরন্ত। তাই সুরভীর মেধার সামনে প্রতিকূলতা ধোপেও টেকেনি। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ক্লাসে যথাযথ স্থান অর্জন করতেন। তবে ছোট থেকে তার স্বপ্ন ছিল এমন কিছু করবেন যাতে করে সমাজে যেন নাম হয়, সেইসাথে সমাজকে উন্নত করতে পারেন।
তাই তিনি আইএএস (IAS) অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে দুর্দান্ত ফলাফল করেন সকলকে টাক লাগিয়ে দেন। বিশেষ করে তার মাধ্যমিকে বোর্ড পরীক্ষায় রাজ্যে র্যাঙ্ক করে জীবনে প্রথম সাফল্য অর্জন করেন। তিনি ছোটো থেকেই দেখেছিলেন গ্রামের দুর্দশার অবস্থা। গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শিক্ষাব্যবস্থা সবরেই বদল চেয়েছিলেন। তার জন্য তিনি নিজেই পরিশ্রম করেন। তাই উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পাড়ি দেন শহরে।
আরোও পড়ুন : আসল বন্ধু কে? বুঝিয়ে দেবে চাণক্য নীতি
সুরভী গ্রামের একমাত্র মেয়ে যে কিনা উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে আসেন। এরপর ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভোপালের কলেজে ভর্তি হন। আর এই কলেজই তাঁর জীবন বদলে দেয়। জানা যায়, সুরভী যেহেতু হিন্দি মিডিয়ামের ছাত্রী তাই ইংলিশ তার বরাবরই দুর্বল ছিল। তবে যে কলেজে ভর্তি হন সেখানে আবার ইংলিশ ছাড়া চলে না। কলেজের প্রথম দিনই ইংলিশ না পারার জন্য লজ্জায় পড়তে হয় তাকে।
এমনকি এই ইংরেজি না জানার জন্যই কলেজে বিনোদনের খোড়াক হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি অনেক সময় জানা উত্তরও দিতে পারতেন না তিনি। তবে তিনি ঠিক করেন এই ইংলিশকেই নিজের জীবনের হাতিয়ার বানাবে। মশকরা শুনে ভেঙে না পড়ে, তিনি নিজের জন্য তৈরি করেন একটি নতুন স্ট্রাটেজি। প্রতিদিন ১০টি করে নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ রপ্ত করতেন। এই অভ্যাসে তার জীবন বদলে দেয়।
আরোও পড়ুন : আচ্ছা বলুন তো, পৃথিবীর সবচেয়ে বড়লোক শহর কোনটি? খুঁজে দেখুন তো কলকাতার নাম
সকলকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সেই কলেজ থেকেই গোল্ড মেডেলিস্ট হয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। আর ইংরেজিকে নিজের বন্ধু করে পকেটে পুড়ে নেন। জানা যায় বিটেক পাশ করার পর রতন টাটার কোম্পানি অর্থাৎ টাটা কনসালটেন্সিতে (Tata Consultancy Service) কাজ পান সুরভী। তবে এই একঘেয়েমি কর্পোরেট চাকরি জগত পছন্দ নয়। এতে করে পদ বাড়লেও দেশের জন্য তিনি কিছু করতে পারছেন না।
তাই তিনি অন্য রাস্তায় হাঁটলেন। চাকরি ছেড়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন ইউপিএসসির। একের পর এক সরকারি চাকরির পরীক্ষাও দিতে থাকেন। এসএসসি থেকে সিজিএল, গেট, ইসরো, সেইল, এমপিপিএসসি, পিসিএস, দিল্লি পুলিশ এবং এফসিআইয়ের মতন পরীক্ষায় বসেন। এই পরীক্ষাগুলিতে পাস করলেও সুরভীর মন ভরে না। কারণ তিনি চানআইএএস (IAS) অফিসার হতে।
From bagging the #AIR 1 in #IES exam to attaining AIR 50 in #UPSC exam, #IAS officer Surabhi Gautam didn’t let anything stop her from achieving her dreams! – https://t.co/ZhgcWLx9Ej @IASassociation #TheBetterIndia pic.twitter.com/9HOTBMJBGr
— The Better India (@thebetterindia) July 17, 2018
শেষমেষ ২০১৬ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। সেইবার সারা দেশের মধ্যে ৫০ তম র্যাঙ্ক অর্জন করেন সুরভী গৌতম। আর নিজের নামের আগে আইএএস অফিসারের শিলমোহর অফিসিয়ালি ভাবে জুড়ে নেন। আজ সুরভী গৌতম সমাজের জন্য, গ্রামের জন্য কাজ করছেন। সেইসাথে আইএএস (IAS) অফিসার হয়ে দেশের ইতিহাস গড়লেন, নারীদের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ালে সুরভী গৌতম।