বাংলা হান্ট ডেস্ক: পরিবেশ আদালতের নির্দেশের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল মন্দারমণির হোটেল-রিসর্ট মালিকদের। পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়েই ১৪৪ টি বেআইনি নির্মাণের হোটেল-রিসর্টের ওপর বুলডোজার চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এমন ভয়াবহ নির্দেশ পাওয়ার পর লক্ষ লক্ষ মানুষের রুজি-রুটির কথা বিবেচনা করার আর্জি জানিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই সমস্ত হোটেলের মালিকরা।
হোটেলে বুলডোজার চালানোর নির্দেশ কেন রুখলেন মমতা (Mamata Banerjee)?
তারপরেই জেলা প্রশাসনের এই নির্দেশের সামনে এসে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। খবর পাওয়া মাত্রই একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে জেলা প্রশাসনের বুলডোজার চালানোর সিদ্ধান্ত রুখে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। কিন্তু কেন ?এর পিছনে বিশেষ দুটি কারণও রয়েছে বলে বক্তব্য রাজনৈতিক মহলের।
নবান্ন সূত্রে খবর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকা পাওয়ার আড়াই বছর পর তা কার্যকর করায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ প্রশাসন। বিশেষ করে নবান্নের সাথে কোনো আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কার্যত স্তম্ভিত মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। যদিও প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য আদালতের নির্দেশ জেলা প্ৰশাসকের মানতেই হতো। তা নাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনের নির্দেশ কার্যকর না করার মামলা করা হতো। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) হলেন রাজ্যের অভিভাবক। তাই বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান সম্পর্কে তাকে ভাবতেই হতো। তাই তিনিওএই দিক দিয়ে সংবেদনশীল ভাবে বুলডোজার চালানোর সিদ্ধান্ত রুখে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘এটাকে পূর্ব মেদিনীপুর বনাম নবান্নের সংঘাত হিসাবে দেখলে হবে না। বরং ‘বোঝাপড়া’ হিসাবেই দেখা উচিত।’ অর্থাৎ পুরো ঘটনায় শ্যাম এবং কূল উভয় রক্ষা করার বিষয় টাকেই জোর দেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করেছেন তিনি। অন্যদিকে এই প্রশাসনিক কৌশল ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কারণও।
প্রসঙ্গত সামনেই রয়েছে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন তার আগেই যদি আদালতের নির্দেশে মন্দারমনির ১৪৪ টি হোটেলে ভেঙে ফেলা হত, তাহলে একধাক্কায় কর্মহীন হয়ে পড়তো প্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক ফায়দা তুলত বিজেপি। তৃণমূলের প্রথমসারির এক নেতার কথায়,‘মন্দারমণিতে এই কাণ্ড যদি হত, তা হলে তার সরাসরি রাজনৈতিক ফয়দা তুলত বিজেপি। আরও ভাল করে বললে, ফয়দা তুলতেন শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভা ভোটের দেড় বছর আগে সেই ঝুঁকি কেন নিতে যাব?’
আরও পড়ুন: ‘হোটেলে কাদের সঙ্গে শুয়েছিলেন?’ জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ
তার এক বছর পরেই মন্দারমণি নিয়ে রায় দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। সেই সময়ে ওই সমস্ত হোটেল এবং রিসর্টের সঙ্গে জড়িতদের জন্য ‘বিকল্প’ আয় এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে হোটেল ভাঙচুর করা যেত। তবে মন্দারমণির হোটেল গুলিতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার স্থায়ী সমাধানের জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসন এখন থেকেই ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা শুরু করেছে। একটি প্রাথমিক ভাবনাও শুরু হয়েছে প্রশাসনিক স্তরে।
উল্লেখ্য গত লোকসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি আসনই ছিল বিজেপির দখলে। সম্ভবত এই রাজনৈতিক প্রতিঘাতের কথা চিন্তা করেই বুলডোজার চালানো রুখে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও শাসক দলের মধ্যে রয়েছে বিপরীত ভাবনাও। তাঁদের বক্তব্য আড়াই বছর আগে যখন এই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল তত দিনে তৃতীয়বারের জন্য নীল বাড়ি নিজের দখলেই নিয়েছিলেন মমতা।
মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্য সচিব মনজ পন্থ হোটেল মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে আশ্বস্ত করেছেন কোন নির্মাণ ভাঙা হবে না। তবে প্রশ্ন উঠছে তাহলে এই বেআইনি নির্মাণ কি থেকেই যাবে? আপাতত এর কোন সমাধান সূত্র না বেরোলেও দ্রুত এর সমাধান খুঁজতে চলেছে জেলা প্রশাসন। বিশেষ করে ‘কোস্টাল রেগুলেটেড জ়োন’ সংক্রান্ত যে নিয়ম আছে সে বিষয়েও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলেই খবর প্রশাসনিক সূত্রে।