বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একাধিক সরকারি প্রকল্পে রাজ্য (West Bengal) জুড়ে স্পষ্ট দুর্নীতির ছবি। কখনও জল চুরি হচ্ছে তো কখনও স্বাস্থ্য খাতে কারচুপি, আবার কখনও বা শিক্ষাক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প যেমন লক্ষীভান্ডার, কন্যাশ্রী-রূপশ্রী সহ পুজো কমিটির বর্ধিত টাকা, সবই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঢুকছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। অথচ বঞ্চিত রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলি।
ধার করে স্কুল চালাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) শিক্ষকরা
সারা বছরের জন্য বরাদ্দ টাকা টুকুও ঢুকছে না রাজ্য (West Bengal) সরকারের সরকারি স্কুলগুলির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। বছর প্রায় শেষের মুখে। অথচ এখনও পর্যন্ত এই চলতি শিক্ষাবর্ষের ৭৫ শতাংশ টাকাই পায়নি রাজ্যের স্কুলগুলি। যার ফলে কার্যত অথৈ জলে পড়েছে রাজ্য সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা চালাতে NGO-র শরণাপন্ন হতে হচ্ছে স্কুলগুলিকে।
শুনতে অবাক লাগলেও কোথাও-কোথাও আবার পুকুরের মাছ বিক্রি করেই কিনতে হচ্ছে চক ডাস্টার। আবার কোনও-কোনও স্কুলের শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে পড়ুয়াদের নাম ডাকার খাতা থেকে শুরু করে কিনছেন চক-ডাস্টার। এখানেই শেষ নয়, সরকারি বরাদ্দের টাকা না পেয়ে চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের টাকাও দিতে পারছে না অনেক স্কুল। যদিও এই পরিস্থিতিতেও হুঁশ ফিরছে না রাজ্যের (West Bengal)।
তাই নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলে সমস্ত দায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওপরে চাপাতেই ব্যস্ত রাজ্য সরকার। শিক্ষা দপ্তরের দাবি এক্ষেত্রে রাজ্য নিজের ভাগের টাকা দিয়ে দিলেও কেন্দ্র সরকার নাকি কোন টাকাই দেয়নি। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক সংগঠনের এক নেতার দাবি লক্ষ্মী ভান্ডার থেকে শুরু করে পুজোর অনুদান সব ক্ষেত্রেই টাকা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু স্কুলের জন্য কোন টাকাই বরাদ্দ করা হচ্ছে না।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক বছর রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে কম্পোজিট গ্রান্ট হিসাবে ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। এই টাকা কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ের তরফ থেকেই যৌথভাবে পাঠানো হয়। তবে এ বছর স্কুলগুলি পেয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল এই ঘাটতি পূরণ হবে কীভাবে?
আরও পড়ুন: বিএড কলেজেও আর্থিক দুর্নীতি! জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে বড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট
তা ভেবেই চিন্তায় রীতিমতো ঘুম উড়েছে রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অনেক জায়গাতেই এই টাকার সমস্যা মেটাতে স্কুলগুলি বাধ্য হয়ে হাত পাচ্ছেন এলাকাবাসীর কাছেও। অনেকেই ডোনার খুঁজছেন আবার কেউ শরণাপন্ন হচ্ছেন NGO-র। এপ্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দাবি, ‘কেন্দ্রের কাছ থেকে বারোশো কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ওই টাকা এলে সুবিধা হবে। এই টাকা অবিলম্বে কেন্দ্রের দেওয়া উচিত। এটা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয় এটা নিন্দনীয়।’
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন। ‘শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। আর এবার কম্পোজিট গ্রান্ট না দিয়ে স্কুলগুলো যাতে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’ এইভাবে দিনের পর দিন রাজ্য সরকারি স্কুলগুলোকে বঞ্চিত করা হলেও ঠিক সময় মত লক্ষী ভান্ডার থেকে শুরু করে পুজো কমিটির বর্ধিত টাকা ঢুকে যাওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। তাদের দাবি শিক্ষা দপ্তর যদি এখনও না ভাবে তাহলে আগামীদিনে আরও দুরাবস্থা হবে।