বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সামনেই আসছে ২৬ জানুয়ারি। দেশ জুড়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রস্তুতি তুঙ্গে। এই আবহেই কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) একটি মামলায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শংসাপত্র নিয়ে উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জাল শংসাপত্র সংক্রান্ত একটি মামলায় সিবিআই তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট তলব করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলকে এই রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
CBI রিপোর্ট চাইল হাইকোর্ট (Calcutta High Court)
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শংসাপত্র সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য আগে যে রায় দিয়েছিলেন তার ওপরেই এদিন স্থগিতাদেশ জারি করেছেন হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আগে এই মামলার শুনানি চলাকালীন জাস্টিস ভট্টাচার্য স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা রামলাল মাইতির ছেলে শুকদেব মাইতিকে তাঁর বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ জারি করে রাজ্য সরকারকে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার সেই রায়ের উপরেই স্থগিতাদেশ জারি করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।
মামলার শুনানি চলাকালীন হাইকোর্টে (Calcutta High Court) রাজ্য সরকার জানিয়েছে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার আগে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে রাজ্যের কাছে কোন নথি নেই। অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা শুকদেব মাইতির দাবি তাঁর বাবা রামলাল মাইতি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ব্রিটিশ সরকারের নজর এড়িয়ে ১৯৪৩ -৪৪ সালে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। তাই তাঁর বাবাও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রাপ্ত পেনশনের অধিকারী। বর্তমানে রামলাল মাইতি এবং তার স্ত্রী দুজনেই প্রয়াত হয়েছেন। তাই উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার পেনশনের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ছেলে শুকদেব। একই সাথে তিনি দাবি করেছিলেন তার বাবার স্বাধীনতা সংগ্রামী হওয়ার একাধিক প্রমাণ রয়েছে তাঁর কাছে। অপর একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী আর এন গিরি তাঁর বাবাকে ওই শংসাপত্র দিয়েছিলেন।
শুকদেব মাইতির এই দাবি শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য রামলাল মাইতির ছেলে শুকদেব মাইতিকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেনশন দেওয়ার নির্দেশ জারি করে রাজ্য সরকারকে মোটা টাকা জরিমানা করেছিলেন। এরপর এই মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এরপর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ওই জাল শংসাপত্রের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন: এক ক্লিকেই সমস্ত পরিষেবা! বাড়ি বসেই পাওয়া যাবে সার্টিফিকেট, নতুন অ্যাপ লঞ্চ করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার
কেন্দ্রের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী জানান রামলাল মাইতিকে যিনি শংসাপত্র দিয়েছিলেন সেই আর এন গিরি নিজে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে পেনশনও পেতেন তিনি। ১৯৪২ থেকে ৪৩ সালের কথা উল্লেখ করে বহু ব্যক্তিকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হওয়ার শংসাপত্র দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা চলাকালীন দেখা যায় আর এন গিরি সারাদেশ জুড়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ জনকে অবৈধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামী হওয়ার শংসাপত্র দিয়েছেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট এই জাল শংসাপত্র মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
রাজ্যের আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন ১৯৪৩ থেকে ৪৪ সালের হিসাব অনুযায়ী রামলাল মাইতির বয়স ছিল ১৩ বছর। তাছাড়া ১৯৪৭ সালের আগে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কোন তথ্য রাজ্যের কাছে নেই। রামলাল মাইতি যে স্বাধীনতা সংগ্রামী, তার একমাত্র প্রমাণ হচ্ছে আর এন গিরির দেওয়া শংসাপত্র। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট আর এন গিরির দেওয়া শংসাপত্রের উপর সিবিএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং রামলালের শংসাপত্র কতটা বৈধ তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রাজ্য সরকারের। এই মামলা চলাকালীন হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সিবিআই তদন্তে আর এন গিরির দেওয়া শংসাপত্র জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই রামলাল মাইতির ছেলে শুকদেব মাইতির করা পেনশনের আবেদন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।